দুয়ারে প্রশাসন। বিনপুরের আঁধারিয়ায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন জেলাশাসক, ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার। গ্রামের পথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। কেশপুরে।
‘সমাধান’ অ্যাপে অভিযোগের পাহাড়। যদিও তার মধ্যে অনেক অভিযোগই ভুয়ো বলে দাবি একাংশ প্রশাসনিক কর্তার। সত্যতা যাচাই করে তবেই অ্যাপে অভিযোগ জানানোর আবেদনও জানানো হচ্ছে। যদিও বিরোধী দলের নেতাদের প্রশ্ন, অভিযোগকারীই যদি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবেন, তবে সমাধান অ্যাপের প্রয়োজন কোথায়। ‘সমাধান’ অ্যাপে মিথ্যা অভিযোগ জানালে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা চালুর কথাও বলছেন অনেকে। ভোটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সমাধান’ অ্যাপ চালু করেছে কমিশন। এই অ্যাপে নির্বাচনী প্রচার সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ জানানো যাচ্ছে। অভিযোগ, অনেকেই এই অ্যাপে ভুয়ো বিষয়ে নালিশ জানাচ্ছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে হয়রান হতে হচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাদের। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “অ্যাপে ভিত্তিহীন বেশ কিছু অভিযোগও জানানো হয়েছে। সঠিক অভিযোগ হলে আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হয়। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের এ বিষয়ে আর্জি জানিয়েছি।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কারো বাড়িতে অনুমতি না নিয়ে পতাকা টাঙানো বা পতাকা ছিঁড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার মতো অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যাচ্ছেন কমিশনের ফ্লাইং স্কোয়াড ও এমসিসি টিমের সদস্যরা। সূত্রের খবর, ‘সমাধান’ অ্যাপে অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রামে গিয়ে কমিশনের সদস্যরা দেখছেন যে এলাকায় কোনও দলের পতাকা খুলে নেওয়ার অভিযোগ হয়েছে, সেখানে ওই দলের পতাকা দিব্যি উড়ছে। অনুমতি না নিয়ে কারও বাড়িতে পতাকা টাঙানোর অভিযোগের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক অভিযোগ অস্বীকার করছেন অথবা তিনি অনুমতিপত্র দেখাচ্ছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, সমাধানে অ্যাপে কোনও অভিযোগের নিষ্পত্তি করার পরই তা অনলাইনে সংশ্লিষ্ট এলাকার রিটার্নিং অফিসারকে জানাতে হয়। দিল্লি থেকে কমিশনের কর্তারাও এই অ্যাপে নজরদারি চালাচ্ছেন। তবে বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা না থাকায় একদিকে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে, তেমনই অপচয় হচ্ছে টাকাও।
গ্রামের পথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। কেশপুরে।
পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ১৯টি বিধানসভা কেন্দ্র। গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত এই অ্যাপে জেলা থেকে মোট ৭৪৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ঘাটাল বিধানসভা এলাকা থেকে অভিযোগ জমা পড়েছে ১৫০টি। চন্দ্রকোনা থেকে ৬৪টি ও দাসপুর থেকে ৩১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সমাধান অ্যাপে অভিযোগ জমা পড়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শালবনি। এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৬৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
সমাধান অ্যাপে ভুয়ো অভিযোগ যে জমা পড়ছে তা কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “দলের কর্মীদের কাছে তথ্য পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযোগ জানাচ্ছি। এ বার অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আগে প্রাথমিক ভাবে তদন্ত করব। তারপর সমাধান অ্যাপে অভিযোগ জানাব।” তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সাধারণ সম্পাদক বিকাশ করও বলছেন, ‘‘কর্মীদের কাছে কোনও ঘটনার কথা শোনা মাত্রই আমরা অভিযোগ জানাচ্ছিলাম। পরে তদন্ত করে দেখেছি, বেশ কিছু অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এ বার আরও সতর্ক হয়ে অভিযোগ জানাব। সরকারি কর্মীদের হয়রান করার কোনও মানসিকতা
আমাদের নেই।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সমাধান অ্যাপে কেউ অভিযোগ জানাতেই পারেন। তবে সত্যতা যাচাই করে অভিযোগ জানালে ভাল হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলি এই অ্যাপ যথাযথ ভাবে ব্যবহার করছেন না। অভিযোগ পাওয়ার পর গাড়ির তেল পুড়িয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে আমরা দেখছি, অভিযোগ ভিত্তিহীন। ফলে আমাদের ফিরে আসতে হচ্ছে।’’
তথ্য: বরুণ দে, ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, দেবরাজ ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy