শনিবার লালগড় ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে নেতাই কাণ্ডে নিহতদের পরিজনদের হাতে সাহায্য তুলে দিচ্ছেন দোলা সেন। নিজস্ব চিত্র
গোড়া থেকেই নেতাই আন্দোলনের মুখ তিনি। ফি বছর নেতাই-দিবসে এলাকায় হাজির থাকতেও ভোলেন না শুভেন্দু অধিকারী। অথচ তৃণমূলের উদ্যোগে নেতাই-কাণ্ডে নিহতদের পরিজনদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেই শুভেন্দুই গরহাজির!
২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস। তার আগে শনিবার বিকেলে লালগড়ে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এসেছিলেন দোলা সেন। তিনিই নেতাই-কাণ্ডে নিহতদের পরিজনেদের হাতে আর্থিক সাহায্য, উপহার ও মিষ্টি তুলে দেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এ দিন দোলা লালগড়ে আসেন। শুভেন্দুর আসার কথা ছিল না। করোনা আবহে কর্মসূচিতে ভিড় যাতে না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছিল। লালগড় ব্লক তৃণমূলের কার্যালয়ে নেতাই-কাণ্ডে নিহতদের পরিজনদের ডেকে পাঠিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দোলা ছিলেন মাত্র আধঘন্টা। অনুষ্ঠানে লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল মাহাতো ও যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তন্ময় রায় ছিলেন। তবে ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় আসতে পারেননি নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দ্বারকানাথ পন্ডা।
তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রতি বছর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে হাজির থাকেন নেতাই-কাণ্ডে নিহতদের পরিজনেরা। এ বার কলকাতায় সেই সভা হচ্ছে না। ভার্চুয়াল সভায় বক্তৃতা করবেন মমতা। ফলে, সভামঞ্চে নেতাই, নন্দীগ্রামের মতো বিভিন্ন ঘটনায় নিহতদের পরিজনদের সম্মানিত করার সুযোগ থাকছে না। তাই এলাকায় গিয়ে তাঁদের সংবর্ধনা জানানো হচ্ছে। নেতাইয়ে সেই অনুষ্ঠানে শুভেন্দুর গরহাজিরা ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। নিচুতলার কর্মীদের একাংশ বলছেন, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএমের শিবির থেকে গুলি চালানোর ঘটনায় চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসীর মৃত্যুতে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। সেই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন শুভেন্দু। প্রতি বছর ৭ জানুয়ারি নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির আয়োজনে নেতাই গ্রামে শহিদ স্মরণেও হাজির থাকেন তিনি। তাই এ দিনও তিনি আসবেন বলেই আশায় ছিলেন অনুগামীদের একাংশ।
লালগড় ব্লক তৃণমূল সভাপতি শ্যামল অবশ্য বলেন, ‘‘এ দিন সকালেই রাজ্য নেতৃত্বের তরফে নির্দেশ পাই দোলাদি আসবেন।’’ ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি তন্ময়ের আবার ব্যাখ্যা, ‘‘প্রতি বছর ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে শহিদ পরিবারগুলিকে সংবর্ধনা দেওয়ার বিষয়টি দোলাদি দেখভাল করেন। নেত্রীর নির্দেশে উনি এসে সংবর্ধনা দিয়ে গিয়েছেন।’’ জেলা তৃণমূলের এক নেতার আবার দাবি, ‘‘শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলেই দোলা লালগড়ে গিয়েছিলেন। এতে বিতর্কের কিছু নেই।’’ জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন অবশ্য বলেন, ‘‘শনিবার দলের আইটি সেল-এর বৈঠকে ব্যস্ত ছিলাম। দোলাদির আসার খবর জানা ছিল না।’’
গত বছর নভেম্বরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেলার সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে শুভেন্দুর সঙ্গে জুড়ে দেন মমতা। তার পর থেকেই জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দুকে ঝাড়গ্রামে আর কোনও দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। ব্যক্তিগত ভাবে কোনও অনুষ্ঠানে এলেও এড়িয়ে গিয়েছেন দলের মঞ্চ। এ দিকে, করোনা আবহের মধ্যেও বিজেপি-র রাজ্য নেতারা ঘন ঘন দলীয় কর্মসূচিতে ঝাড়গ্রামে আসছেন। তাই বিধানসভা ভোটের আগে কর্মীদের মনোবল বাড়াতে জেলায় দলের রাশ শুভেন্দুর হাতে দেওয়া প্রয়োজন বলে দলের অন্দরে সওয়াল করছেন জেলা তৃণমূলের একাংশ। শুভেন্দুকে ঝাড়গ্রাম জেলার পূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে তৃণমূলের নানা মহল থেকেও দাবি করা হচ্ছে। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্য, ‘‘২১ জুলাই নেত্রী কী বার্তা ও নির্দেশ দেন, তার ভিত্তিতেই দাদা পদক্ষেপ করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy