বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে দেখানো হচ্ছে তথ্যচিত্র। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র।
ফেলে আসা ইতিহাসকে ধরে রাখার প্রয়াস। টুকরো টুকরো কত স্মৃতি। মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটির ৫০ বছরের সেই সব স্মৃতিকে ধরে রেখেই তৈরি হল এক তথ্যচিত্র।
সোসাইটির উদ্যোগে এই তথ্যচিত্রটি তৈরি হয়েছে। বুধবার এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয়। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানেই তথ্যচিত্রটি প্রকাশিত হয়। পরিচালনা সিদ্ধার্থ সাঁতরার। সিদ্ধার্থবাবু মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটির প্রকাশনা বিভাগের সম্পাদক।
কেন এই উদ্যোগ? সিদ্ধার্থবাবু বলছিলেন, “সোসাইটির পাঁচ দশকের ইতিহাসকে তুলে ধরতে চেয়েছি। তাই এই তথ্যচিত্র। তথ্যচিত্রটি সকলের ভাল লাগলে সেটাই প্রাপ্তি।”
শুরুতেই রয়েছে সিনেমার গুরুত্বের দিকটি। সোসাইটির বক্তব্য, সিনেমা বিশ্বের সবথেকে বড় ‘অডিও ভিস্যুয়াল মিডিয়া’। যার সঙ্গে খুব সহজেই জড়িয়ে পড়া যায়। আধুনিক শিল্প মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম সিনেমা। এরপর রয়েছে সিনেমার দিন বদলের কথা। আগে কী ছিল। পরে কী হয়েছে। তারপর রয়েছে ফিল্ম সোসাইটির আন্দোলনের ইতিহাস। সোসাইটির দাবি, পাঁচের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজ্যে ফিল্ম সোসাইটির আন্দোলন শুরু হয়। চলচ্চিত্র কী, কেন ভাল চলচ্চিত্র দেখা প্রয়োজন, সেই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছনো শুরু হয়। এরপর রয়েছে মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটির কথা।
মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটি গড়ে ওঠে ১৯৬৩ সালে। সেই সময় কয়েকজন সংস্কৃতিমনস্ক মানুষই উদ্যোগ নিয়ে মেদিনীপুরে এই সোসাইটি গড়ে তোলেন। দেখতে দেখতে ৫০ বছর পেরিয়েছে। বছর দুয়েক আগে সোসাইটির সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উদ্যাপন হয়। ১৯৬৩ সালের ঠিক কোন দিনে সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তা এখনও জানা যায়নি। তবে ওই বছরের অগস্টে একদিন সোসাইটির উদ্যোগে প্রথম সিনেমা দেখানো হয় তৎকালীন জেলাশাসক শিবপ্রসাদ সমাদ্দারের বাংলোয়। প্রদর্শিত হয় আইজেনস্টাইনের ‘ব্যাটেলশিপ পোটেমকিন’। পরে একে একে সোসাইটির নিজস্ব সম্পদ তৈরি হতে শুরু করে। আশির দশকের মাঝামাঝি অফিস তৈরির জন্য জমির লিজ পায় সোসাইটি। পরে সেখানে অফিস ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। তৈরি হয় অডিটোরিয়ামও।
তথ্যচিত্রে পুরনো সেই সব দিনের কথা তুলে ধরেছেন অধ্যাপক শিবাংশু বসু, আইনজীবী শ্যামলেন্দুকৃষ্ণ মাইতিরা। শিবাংশুবাবুর মতে, অন্য কোনও মিডিয়া মানুষের মনকে সে ভাবে ছুঁতে পারে না। প্রভাবিত করতে পারে না। যেটা সিনেমা পারে।
তাঁর বক্তব্য, মেদিনীপুরে ভাল সিনেমা দেখানোর জন্যই সেই সময় একটা সোসাইটি হওয়া দরকার ছিল। সেই সময় শহরের হলগুলোয় যে সব ছবি দেখানো হত, সেগুলোর বেশির ভাগই হিন্দি অথবা বাংলা। বিদেশি ছবি তেমন দেখানো হত না। অথচ, ভাল বিদেশি ছবি দেখার ইচ্ছে ছিল অনেকেরই। ফিল্ম সোসাইটির মুখপত্র ‘প্রতিবিম্ব’ কী ভাবে প্রকাশ হল, পত্রিকা ‘চলচ্চিত্রবার্তা’ কী ভাবে প্রকাশ হল, সেই সবও তুলে ধরা হয়েছে এই তথ্যচিত্রে।
পাশাপাশি, তুলে ধরা হয়েছে সোসাইটির কাজকর্মের দিকগুলোও। যেমন চলচ্চিত্র উৎসব করা, আলোচনাসভা করা প্রভৃতি। ষাটের দশকের গোড়ায় কলকাতার বাইরে মেদিনীপুরের মতো মফস্সল এলাকায় এমন কোনও সোসাইটি ছিল না। এই সোসাইটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যই ছিল, ভাল সিনেমার প্রচার ও প্রসার করা। নেতৃত্বে ছিলেন মেদিনীপুর কলেজের অধ্যাপক অনিমেষ পাল। সিদ্ধার্থবাবু বলছিলেন, “সোসাইটি এখন শৈশব পেরিয়ে যুবক। ভাল ছবি দেখানো, ভাল পরিচালকের ছবি দেখানো, ছবি নিয়ে আলোচনা করাই সোসাইটির উদ্দেশ্য। ৫০ বছর খুব কম সময় নয়। এই সময়ের মধ্যে সোসাইটি অনেকটা এগিয়েছে। আরও এগোতে হবে। ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করে যেতেই হবে।”
পাঁচ দশকের এই তথ্যচিত্র যেন একটা মাইলস্টোন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy