Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Account of Losses

আবহাওয়ার উন্নতি, শুরু ক্ষতির হিসাব

শুক্রবার বিকেল থেকে জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছিন। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর সূত্রের খবর, শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।

রামচন্দ্রপুরে ভেঙেছে কাঁসাই নদীর উপরে থাকা বাঁশের সেতু। বিপজ্জনকভাবে নৌকাতে চলছে পারাপার।

রামচন্দ্রপুরে ভেঙেছে কাঁসাই নদীর উপরে থাকা বাঁশের সেতু। বিপজ্জনকভাবে নৌকাতে চলছে পারাপার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫০
Share: Save:

শরতে নিম্নচাপ। তার জেরে দক্ষিণবঙ্গে গত শুক্রবার থেকে ঝড় আর লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় আবহাওয়ার উন্নতি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সামনে আসতে শুরু হয়েছে গত তিন দিনের টানা দুর্যোগের পরিণামের ছবি। কোথাও বিপদসীমার উপরে বইছে নদীর জল। কোথাও বাঁধ উপচে এলাকায় জল ঢুকে ডুবেছে বসতি এবং চাষের জমি। সেই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভেঙেছে বহু বাঁশের সাঁকো।

গত শুক্রবার বিকেল থেকে জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছিন। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর সূত্রের খবর, শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। রবিবার সকাল পর্যন্ত গড়ে আরও ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সোমবার সকাল পর্যন্ত ফের ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত তিনদিনে জেলায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৪২ মিলিমিটার। এই বিপুল বৃষ্টিতেই তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, ময়না, নন্দকুমার, নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, খেজুরি, কাঁথি, এগরা, ভগবানপুর, পটাশপুরের নীচু এলাকা জলমগ্ন। অনেক ধান, আনাজ, ফুল চাষের জমি, পান বরজ ডুবেছে। ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁচা ঘরবাড়িও ভেঙেছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় জনজীবন ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে। তবে এখনও কাঁসাই, কেলেঘাই, বাগুই, চণ্ডীয়া, হলদি ও রূপনারায়ণ নদের জলস্তর অনেকটাই বেশি। প্রবল স্রোতে এ দিন ময়না ব্লকের প্রজাবাড়, রামচন্দ্রপুর, শ্রীকণ্ঠা এবং পুরষাঘাট খেয়াঘাট সংলগ্ন চারটি বাঁশের সাঁকো ভেঙেছে। এর ফলে ময়নার সঙ্গে পাঁশকুড়া, তমলুক ও নন্দকুমার ব্লকের বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তবে রামচন্দ্রপুর খেয়াঘাট এলাকায় নৌকা দিয়েই যাত্রী হচ্ছে। বাকি এলাকায় ঘুরপথে পাকা কাঁসাই সেতু পেরিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ময়না পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাজাহান আলি বলেন, ‘‘কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কাঁসাই নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এ দিন সকালে জলস্রোতে ব্লকের চারটি জায়গায় বাঁশের সাঁকো ভেঙেছে। বেশিরভাগ লোকজন ঘুরপথে শ্রীরামপুরে পাকা সেতু দিয়ে যাতায়াত করছেন।’’

কোলাঘাট ব্লকের বৃন্দাবনচক, সিদ্ধা ১ এবং ২, পুলশিটা, সাগরবাড়, ভোগপুর ইত্যাদি এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। জলের তলায় গিয়েছে গ্রামীণ রাস্তা, আমন চাষ থেকে শুরু করে পুকুর ডোবা। পাঁশকুড়া স্টেশন বাজারে একাধিক দোকানে জল ঢুকে যায়। শহরের ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক জায়গায় বাড়ির উঠোনও জলমগ্ন হয়েছে। পাঁশকুড়ার রাধাবল্লভচক এলাকায় আনাজ চাষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৃষ্টিতে। কেশাপাট এলাকার একাংশে এবং কোলাঘাটের নীচু এলাগুলিতে আমন চাষ নষ্ট হতে বসেছে। জলবন্দি এই পরিস্থিতির জন্য সেচ দফতরকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী। অভিযোগ, ২০২১ সালের পর জেলায় বড় কোনও খাল সংস্কার হয়নি। জেলা পরিষদ কয়েকটি ছোট খাল সংস্কারের কাজে হাত দিলেও সেই কাজও শেষ হয়নি। এতেই জল নিকাশি না হতে পেরে ডুবছে এলাকা।

আগামী কাল, বুধবার থেকে পূর্ণিমার ভরা কোটালের জোয়ার রয়েছে। তার আগে সেচ দফতর জেলার বিভিন্ন স্থানে নদী বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলি যুদ্ধকালীন গতিতে মেরামতির কাজ করছে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘কয়েকটি ব্লকের নীচু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। ১৬টি কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে। ধান, আনাজ, পান ও ফুল চাষের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কৃষি ও উদ্যানপালন দফতর হিসাব করছে। তবে সামগ্রিকভাবে বড়সড় ক্ষতি হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE