কলেজে ছাত্র সংসদ নেই। তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠী রয়েছে। সেই দুই গোষ্ঠীর কাছেই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খাওয়াদাওয়া-সহ যাবতীয় খরচের জন্য দরপত্র চাইলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। যে পক্ষ কম দর দেবে, তারা দায়িত্ব পাবে বলে ঘোষণাও করা হয়েছে। ওই দরপত্র প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আজ, বুধবার থেকে ঘাটাল কলেজের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। চলবে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়া ছাড়াও থাকছে ক্রিকেট। প্রতি বছরই কলেজে এই আয়োজন হয়। ছাত্র সংসদের তহবিল থেকেই প্রতিযোগিতার যাবতীয় খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ। ফলে, বর্তমানে ছাত্র সংসদের অস্তিত্বও নেই। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সংসদ তহবিলের টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষেরই খরচ করার কথা। ছাত্র সংসদ না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি টাকা খরচ করতে পারেন না। অথচ ঘাটাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের প্রতিযোগিতার খরচের দায়িত্ব দিতে দরপত্র চাওয়ায় বিতর্ক বেধেছে।
যদিও ঘাটাল কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুকুমার দাসের বক্তব্য, “বিষয়টি ঠিক নয়। দরপত্র কলেজ থেকে ডাকা হয়েছিল। জমাও পড়েছে। তবে ছেলেদের ডেকেই দরপত্র খোলা হয়েছিল।” বিশেষ একটি ছাত্র সংগঠনকে কি এই পদ্ধতিতে দায়িত্ব দেওয়া যায়? এ বার অধ্যক্ষের জবাব, “এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”
ঘাটাল কলেজে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকলেও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের শাখা রয়েছে। টিএমসিপি ছাড়াও আছে এবিভিপি, এসএফআইয়ের ইউনিট। আর টিএমসিপির দুটি গোষ্ঠী রয়েছে। শাসক দলের এই ছাত্র সংগঠনও এ ক্ষেত্রে কলেজের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। টিএমসিপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৈয়দ মিলু বলেন, “কোন নিয়মে কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের থেকে দরপত্র আহ্বান করলেন আমাদের জানা নেই। এই পদ্ধতিতে টাকা খরচ করা যায় কিনা, তার ব্যাখ্যা কলেজ কর্তৃপক্ষকেই দিতে হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ছাত্র সংগঠনে কোনও গোষ্ঠী নেই। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। না হলে দু’পক্ষের থেকে দরপত্র চাইবেন কেন?”
টিএমসিপির ঘাটাল কলেজ ইউনিট সভাপতি মির্জা তোফাইল হাসানও বলেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে দরপত্রের ফর্ম হাতে দিয়েছেন।ছাত্ররা তা পূরণ করে জমা দিয়েছেন। তবে এই ভাবে ছেলেদের থেকে দরপত্র চাওয়া যায় কিনা, কলেজই বলতে পারবে।” কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৌমজিৎ ভট্টাচার্য মানছেন, “আমাদের থেকে প্রতিযোগিতার খরচের জন্য দরপত্র চেয়েছিল। আমরা জমা দিয়েছি।”
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শেখ নাসিম আখতার মুর্শেদ (মিলন)-এর কটাক্ষ, “এটা অনৈতিক। কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেই খরচ করতে পারেন। তবে এ ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের সংগঠনের কাছ থেকে দরপত্র চাইতে পারেন না।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)