ভরা সভায় বক্তা দিলীপ ঘোষ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
সালটা ২০০১। কেশপুরে এসে সে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘কেশপুরকে সিপিএমের শেষপুর করব।’’
মাঝে পারাং নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। ১৮ বছর পরে সেই কেশপুরে একই কথা শোনা গেল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখে। বললেন, দিলীপ বলেন, ‘‘ভোটের আগে কেশপুরে আমাদের ঝান্ডা বাঁধতে দেয়নি। সভা করতে দেয়নি। আজ তৃণমূলের ঝান্ডা দেখা যাচ্ছে না। এই কেশপুরকে তৃণমূলের শেষপুর করে ছাড়ব।’’
সে দিন মমতা ছিলেন বিরোধী নেত্রী, আর দিলীপ এখন বিরোধী নেতা।
শনিবার কেশপুরের আনন্দপুরে সভা ছিল বিজেপি-র। সেই সভা ঘিরে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, সভায় আসার পথে একাধিক বাসে হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের লোকেরা। বাজুয়াড়ায় এই হামলার পরে বিজেপি কর্মীরা কেশপুর থানার সামনে ‘বিচার’ চাইতে গিয়েছিলেন। সেখানে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ। বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের বাস আটকানো হয়েছে। দলের কর্মীদের উপর হামলা হয়েছে।’’ বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের কর্মীদের বাস থেকে নামানো হয়েছে, লরি থেকে নামানো হয়েছে, মারধর করা হয়েছে।’’
কেশপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজেপি কর্মী ধলহারার যতন বাগরাদেরও অভিযোগ, ‘‘পুলিশ লাঠি মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।’’ বিজেপির দাবি, সব মিলিয়ে তাদের ৪২ জন কর্মী জখম হয়েছেন। এদের অনেকেই জখম হয়েছেন পুলিশের লাঠির ঘায়ে। লাঠিচার্জের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। তাদের পাল্টা দাবি, থানা লক্ষ করে ইট ছোঁড়া হয়েছিল। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শচীন মক্কর বলেন, ‘‘দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।’’ আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, ‘‘বিজেপির লোকেরাই সভায় আসার পথে ইট ছুড়ছিল, দোকান ভাঙচুর করছিল। মানুষ প্রতিহত করেছেন। সভা থেকে ফেরার সময়ও ওরা আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে, বাড়ি ভাঙচুর করেছে।’’
বিজেপি-তৃণমূলের এলাকা দখলের সংঘাতে ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই তেতে রয়েছে কেশপুর। আইশৃঙ্খলার কারণ দর্শিয়েই এ দিন আনন্দপুরে বিজেপির সভার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। শেষমেশ সভা অবশ্য হয়েছে। সেখানে সুর চড়িয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘পুলিশ বলছে, আমাদের সভা করতে দেবে না। কেন? সভা করলেই না কি হাজার হাজার লোক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির ঝান্ডা ধরে নিচ্ছে।’’
কেন কেশপুর, গড়বেতা, গোয়ালতোড়ে দলের কর্মীদের উপর হামলা হচ্ছে, তৃণমূলের উদ্দেশে সেই প্রশ্ন তুলেছেন মুকুল রায়। তাঁর ঘোষণা, ‘‘আমি কেশপুর কলেজের মাঠে আরেকটা সভা করতে বলেছি। ওই সভা থেকে তৃণমূলের বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে দেবো।’’ সভায় বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুরও মন্তব্য, ‘‘এক বছর পরে যে বিধানসভা নির্বাচন হবে সেখানে কেশপুরে তৃণমূলকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’
নাম না করে তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান এবং কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী শুভ্রা দে সেনগুপ্তকেও বিঁধেছেন মুকুল। এই দু’জনকে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও অসন্তোষ রয়েছে। সেই অসন্তোষ উস্কে মুকুল বলেন, ‘‘এখানে আবার এক রাজা আছে, এক রানি আছে। শুনলাম, এখানকার বিধায়ককে (শিউলি সাহা) মহিলা তৃণমূলের জেলা সভাপতি করা হয়েছে। ওকে জিজ্ঞেস করুন, আপনাকে কি কেশপুর দেখার অধিকার দিয়েছে? তা দেয়নি। কেশপুর দেখার অধিকার রাজা-রানির কাছেই আছে। এখানে যে সোনার খনি (কাটমানি) আছে, সেটা রাজা-রানিই দেখবে।’’
এ দিনের সভায় দিলীপ ও মুকুলকে একসঙ্গে মঞ্চে পাওয়া যায়নি। দিলীপ মঞ্চ ছাড়ার পরপরই এসে পৌঁছন মুকুল। বলেন, ‘‘আমি আজ সকালে দিল্লি থেকে কলকাতায় নেমে সোজা কেশপুরে এসেছি। বিমান ছাড়তে খানিক দেরি হয়েছে। তাই আসতে দেরি হল।’’
এ দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন আনন্দপুরের প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দেবাশিস রায়। দেবাশিস আনন্দপুরের সিপিএম নেতা ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে অবশ্য অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। শনিবার আনন্দপুরের সভায় দিলীপ ঘোষের হাত থেকে বিজেপির পতাকা নেন তিনি। তেঘরির অনেক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যও এ দিন বিজেপিতে যোগ দেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘কয়েকজন বিজেপিতে গিয়েছে বলে শুনেছি। এতে দলের ক্ষতি হবে না।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘দেখতে থাকুন, যারা গিয়েছে, তাদের অনেকে ফিরেও চলে আসবে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy