দীর্ঘ ৩ কিলোমিটার এই রাস্তা ছোট-বড় গর্তে বেহাল। এক মাস কাটতে না কাটতেই বন্ধ করে দেওয়া হল মেরিন ড্রাইভ। নিজস্ব চিত্র।
এক মাসও পেরোয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে উদ্বোধন হয়েছিল দিঘা-শঙ্করপুর মেরিন ড্রাইভের। মেরিন ড্রাইভ ধরে সমুদ্র দেখতে দেখতে দিঘায় পৌঁছে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন পর্যটকেরা। পর্যটকদের সেই স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছে। রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে পুজোর মরসুমে বন্ধ করে দেওয়া হল মেরিন ড্রাইভের একাংশ। সেচ দফতরের তরফে রাস্তার দু’দিকে বোর্ড লাগিয়ে পর্যটক এবং স্থানীয়দের গাড়ি নিয়ে যাতায়াত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
১৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ৩০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ এক সুতোয় জুড়ে দিয়েছিল দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর এবং মন্দারমণিকে। পুজোর মুখে ১৪ সেপ্টেম্বর সেই মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া পর্যটকদের অনেকেই মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। অনেককেই আটকে থাকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি বলেও উঠেছে বিস্তর অভিযোগ। স্থানীয়দের সাহায্যেই শেষমেশ বিপদ কাটিয়ে ফিরেছেন তাঁরা। এই বিষয়ে কয়েকদিন ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজীর কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ আসছিল। শেষমেশ অস্বস্তি কাটাতে দিঘা যাওয়ার পথে তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হল।
পর্যটকদের অভিযোগ, প্রায় ২৭ কিলোমিটার মসৃণ রাস্তা পেরিয়ে আচমকা তাঁদের ‘ধাক্কা’ খেতে হচ্ছে শঙ্করপুরের কাছে এসে। তাজপুর থেকে শঙ্করপুর যাওয়ার প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা দুর্বিষহ। ওই রাস্তায় নেই কোনও সতর্কতামূলক বোর্ড। ফলে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে সটান গর্তে ফেঁসে যেতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও সেই গর্ত প্রায় তিন ফুটের কাছাকাছি গভীর। গাড়ি এক বার ফেঁসে গেলে বিপদ থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র সহায় স্থানীয়রা। কারণ প্রশাসনের তরফে কেউ নেই।
সোদপুর থেকে সপরিবার দিঘায় গিয়েছিলেন পিন্টু হাজরা। নবমীর সন্ধ্যায় তিনি দিঘা থেকে শঙ্করপুর হয়ে তাজপুর যাচ্ছিলেন। পিণ্টু বলেন, ‘‘শঙ্করপুর থেকে দেড় কিলোমিটার এগোতেই রাস্তায় ছোটখাটো গর্ত দেখতে পাই। জলভর্তি সেই সব গর্ত কতটা গভীর আন্দাজ পাচ্ছিলাম না। সরু জলকাদা ভর্তি রাস্তায় পিছনে ফেরারও উপায় ছিল না। আচমকাই একটা গর্তে সামনের চাকা পড়ে গিয়ে গাড়িটা মুখ থুবড়ে পড়ে রাস্তায়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা ভবেশ চাউলিয়া বলেন, ‘‘রোজ ৮- ১০টা ছোট গাড়ি আমাদের এই রাস্তায় আটকে যায়। গ্রামের ছেলেরাই দড়ি দিয়ে অন্য গাড়ির সঙ্গে বেঁধে তুলে দেয়। বাইরে থেকে ঘুরতে আসা মানুষদের তো এই রাস্তা সম্পর্কে কোনও ধারণা থাকার কথা নয়। প্রশাসনও কোনও গুরুত্ব দেয় না। তাই আমরাই লোকজনদের সচেতন করার চেষ্টা করি। স্থানীয় ছেলেরা খেটেখুটে গাড়ি তুলে দিলে পর্যটকেরাই খুশি হয়ে ওদের মিষ্টি খাওয়ার টাকা দেন। তবে যে গাড়ির সাহায্যে দড়ি দিয়ে তোলা হয়, তার চালককে কিছু পয়সা তো দিতেই হয়।’’
২০২০ সালে আমপান ও তারপরে ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত রাস্তার দফারফা হয়ে যায়। পরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ওই অংশে কংক্রিটের সমুদ্র বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে রাস্তার কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় সেচ দফতরকে। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, গত কয়েক মাসে নিয়মিত জলোচ্ছ্বাসের ফলে তাজপুর এবং শঙ্করপুরের মাঝে রাস্তা তৈরির কাজ সেচ দফতর করতে পারেনি। ফলে রাস্তা চলাচলের একেবারেই অনুপযুক্ত।
তা হলে এত তাড়াতাড়ি সেই রাস্তা খুলে দেওয়া হল কেন সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি জানার পরে ওই রাস্তায় সাময়িক ভাবে যান চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে কাজ চলছে। তার মাঝে কিছু কিছু পর্যটক ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গর্তে পড়ে গিয়ে সমস্যায় পড়ছিলেন বলে অভিযোগ আসছিল। তাই রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই অংশের রাস্তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
রবিবার দেখা গেল, তাজপুর এবং শঙ্করপুর দু’দিক থেকে দু’টি সতর্কীকরণ বোর্ড লাগানো হয়েছে সেচ দফতরের পক্ষ থেকে। সেচ দফতরের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (কাঁথি মহকুমা) শুভাশিস বেরা বলেন, ‘‘ওই অংশে মেরিন ড্রাইভের রাস্তা নির্মাণের কাজের দায়িত্ব পেলেও প্রাকৃতিক কারণে তা করতে পারছি না। নভেম্বর নাগাদ শীতের সময় জোয়ারের তীব্রতা কমলে পাকাপাকিভাবে কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করা হবে। ততদিন ওই অংশ দিয়ে যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy