Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Kanyashree

কন্যাশ্রী-রূপশ্রী, সত্ত্বেও বাড়ছে বাল্যবিবাহ, বলছে রিপোর্ট

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের ২৩টি জেলায় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক স্তরের নেতাদের নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা শুরু করল রাজ্য শিশু কল্যাণ কমিটি।

বাল্যবিবাহ ও নারী পাচার রোধে আলোচনা। বুধবার কাঁথিতে। নিজস্ব চিত্র

বাল্যবিবাহ ও নারী পাচার রোধে আলোচনা। বুধবার কাঁথিতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০০:৫১
Share: Save:

পড়াশোনার জন্য যেমন একদিকে ‘কন্যাশ্রী’। তেমনই মেয়ের বিয়ের অর্থ সংস্থানেও রয়েছে রাজ্য সরকারের ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প। গত দু’তিন বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরিসংখ্যানও জানান দিচ্ছে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার বেড়েছে। পাশাপাশি নাবালিকা বিয়ে নিয়েও সচেতনতা এ রাজ্যে আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু এর পরেও ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভিস’ নামে জাতীয় সমীক্ষার যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে উদ্বিগ্ন রাজ্যের শিশু কল্যাণ কমিটি। কারণ সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে গোটা দেশের নিরিখে বাল্যবিবাহ র মত সামাজিক ব্যাধি এখন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে এরাজ্যে।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের ২৩টি জেলায় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক স্তরের নেতাদের নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা শুরু করল রাজ্য শিশু কল্যাণ কমিটি। দেখা গিয়েছে ১৮ বছরের নীচে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তুলনায় বেশি। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটের পক্ষ থেকে কাঁথিতে বীরেন্দ্র স্মৃতিসৌধে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাজ্য ও জেলা শিশু সুরক্ষায় ইউনিটের তরফে যে তথ্য তুলে ধরা হয় তাতে ধরা পড়ে পূর্ব মেদিনীপুরে বাল্যবিবাহ এবং শিশু পাচার বাড়ছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমাজ কল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছর শুধু ৫০ জনের বেশি মেয়ে ১৮ বছরের নীচে বিয়ে করে নিয়েছে। মেয়েদের জন্য নানা সরকারি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও কেন জেলায় এমন অবস্থা, তা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

বাল্যবিবাহ রুখতে ‘কন্যাশ্রী’ , ‘রূপশ্রী’, ‘শিক্ষাশ্রী’ র মতো একাধিক প্রকল্প চালু রেখেছে রাজ্য সরকার। যদিও ওই সব প্রকল্পের সুবিধা প্রান্তিক এলাকার মেয়েরা পাচ্ছে না বলে প্রশাসনের একাংশের ধারণা। এক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলেও মনে করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় বলেন, ‘‘মেয়েদের কখনওই ‘বোঝা’ বলে ভাবা যাবে না বাবা মায়েদের। তা ছাড়া কমবয়সি মেয়েদের কখনও জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে তাকে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। তবেই সমাজ থেকে এই ধরনের সমস্যা দূর হবে।’’

‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভিস’-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, জাতীয় স্তরে ২৬.৮ শতাংশ হারে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। সেখানে এ রাজ্যে ৪১.৬ শতাংশ এবং জেলা পর্যায়ে ৪৪ শতাংশ হারে এ ধরনের অপরাধ ঘটে চলেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে এর হার ২৪ শতাংশ।

কাঁথির মহকুমাশাসক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ এবং শিশু পাচার নিয়ে এই জেলার অবস্থান আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন এবং বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক নেতৃত্ব দেন এরকম সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাল্যবিবাহ এবং শিশু পাচার রোদে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনের তরফেও এই সংক্রান্ত প্রচারাভিযান আরও জোরদার করতে হবে।’’

জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক পূর্ণেন্দু পৌরাণিকের অবশ্য দাবি, ‘‘গোটা দেশ এবং রাজ্যের নিরিখে এখানে বাল্যবিবাহ ও শিশু পাচার তুলনায় কম। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলায় এই সমস্যা একেবারে নির্মূল করা দরকার। তার জন্য ধারাবাহিকভাবে জেলা জুড়ে প্রচার করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE