মুক্তোয় সিদ্ধিদাতা। ডানদিকে, রকমারি পেনডেন্ট। নিজস্ব চিত্র
কোনও মুক্তোতে গণেশের আদল, কোনওটিতে স্বস্তিক চিহ্ন, আবার কোনওটিতে শিবলিঙ্গ! এমন ডিজাইনার মুক্তো দিয়ে তৈরি হচ্ছে অলঙ্কার। তা বিক্রি হচ্ছে দেশে-বিদেশে।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এক প্রাক্তনী হাত ধরে জেলায় আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ হচ্ছে নকশাওয়ালা মুক্তো। পুকুরে ঝিনুক চাষ করে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে তার মধ্যে বিভিন্ন নকশাওয়ালা মুক্তো তৈরি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, হলদিয়া-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পুকুরে নকশাওয়লা মুক্তো চাষ করা হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সহ-কৃষি অধিকর্তা (শষ্য সুরক্ষা) মৃণালকান্তি বেরা বলেন, ‘‘আত্মা প্রকল্পে এবার বেশ কিছু জায়গায় এই মুক্তো চাষ করা হবে। তাই তার প্রশিক্ষণ দেওয়া চলছে। ডিজাইনার মুক্তোর চাহিদা রয়েছে। সেই নিরিখে আমরা পরীক্ষামুলক ভাবে একাধিক ব্লকেই পুকুরে ওই মুক্তো চাষ করতে আগ্রহী হয়েছি।’’
ওই মুক্তো চাষের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব রয়েছেন রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী তরুণ সামন্ত। মেচেদার বাসিন্দা তরুণ জানিয়েছেন, সমুদ্রের বদলে পুকুরেই চাষ করা যাবে এই বিশেষ ঝিনুক। সময় লাগবে এক থেকে দেড় বছর। একমাত্র ভারত এবং বাংলাদেশে এই জাতীয় মুক্তো চাষ করা সম্ভব। ভারতীয় ঝিনুকের মধ্যে মুক্তো জমার জন্য ধীরে ধীরে লালা ক্ষরণ হয়। যা নকশাওয়ালা মুক্তো তৈরিতে সাহায্য করে বলে তিনি জানাচ্ছেন।
কিন্তু মুক্তোকে বিভিন্ন মনীষী বা কোনও চিহ্নের আদলে কী ভাবে বানানো যাবে! তরুণ জানান, পুকুরের ঝিনুক চাষের সময় সেগুলি খাঁচার মধ্যে দিয়ে জলে ঝুলিয়ে রাখা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে ওই ঝিনুকের মেন্টর টিস্যু ৬ থেকে ১০ মিলিমিটার কেটে তার ভিতরের নোংরা বার করা হয়। তরুণের বক্তব্য, আঘাত পেলে ঝিনুকের মধ্য থেকে এক ধরনের লালা বা রস ক্ষরণ হয়। তা জমাট বেঁধেই মুক্তো হয়। ঝিনুকটির মুখ ফাঁক করে তা পরিষ্কার করার পরে তার মধ্যে নকশার ছাঁচ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেই নকশার উপরে রস জমাট বেঁধে নির্দিষ্ট আকার নেয়।
তরুণ জানান, ঝিনুক চাষ নিয়ে ভুবনেশ্বরের কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র সিফায় প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। তবে তিনি প্রথমে ইউটিউবে ভিডিয়ো দেখে উৎসাহ পান। পরে চিন-সহ একাধিক জায়গায় এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নেন। তরুণের দাবি, ঝাড়খণ্ডের ২৪টি জেলায় ৬০০ জনকে তিনি এই মুক্তো চাষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, হরিয়ানার আম্বালা, ওড়িশার ভুবনেশ্বরে নকশাওয়ালা মুক্তো নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রকল্প হচ্ছে। তরুণের কথায়, ‘‘রাজস্থানে বছরে দেড় লক্ষ মুক্তো পাঠাতে হয়। সম্প্রতি পদ্ম ফুলের ছাঁচে কয়েক হাজার মুক্তো পাঠাতে হয়েছিল উত্তর ভারতের এক নেতাকে। চাইলে নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের আদলেও মুক্তো বানানো সম্ভব।’’
নকশাওয়ালা মুক্তো চাষে লাভের সম্ভবনা কেমন?
তরুণ বলেন, ‘‘এক হাজার ঝিনুক খাঁচা-সহ জলে নামালে দেড় হাজার মুক্তো পাওয়া যাবে। ২৫ শতাংশ নষ্ট হবে ধরে নেওয়া যায়। দেড় হাজার মুক্তোর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৫০০ মুক্তো থাকে। বাকি সব ‘বি’ ক্যাটাগরির। ভাল মুক্তো পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ৩০০-৩৫০ টাকায়। বি ক্যাটাগরির মুক্তো ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে লাখ দেড়েক টাকা লাভ থাকে। বর্তমানে অনলাইনেও বিক্রি করা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy