মেদিনীপুরের ধর্মার খালপাড় এলাকায়। ছবি: কিংশুক আইচ।
রাস্তা জলের তলায় চলে গিয়েছে। মোটরবাইক পার করতে হচ্ছে কাঁধে করে! স্থানীয় কয়েকজন যুবককে এ জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে দিতে হচ্ছে কুড়ি টাকা। বুধবার কেশপুরের ধলহারার পূর্ব চাকলায় এ ছবি দেখা গিয়েছে। কেশপুরের বিডিও দীপক ঘোষ মানছেন, ‘‘ধলহারার কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।’’ বিডিও বলেন, ‘‘জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে সরানো হয়েছে।’’ বুধবার দাসপুরের শ্যামসুন্দরপুরে বজ্রপাতে শঙ্কর দোলুই (৪৯) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে সাম্প্রতিক দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৬।
টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। নতুন করে অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ত্রাণের হাহাকারও দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। দুর্গতদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না। এমনকি, অনেকের একটি ত্রিপলও জুটছে না। বুধবার জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘নতুন করে বৃষ্টির জন্য পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছে। কিছু ব্লকে অসুবিধা হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে কেশপুর, সবং, পিংলা, ডেবরা, নারায়ণগড়, খড়্গপুর ১ প্রভৃতি ব্লকে। ঘাটাল, দাসপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাও জলমগ্ন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘বেশ কিছু লোককে উদ্ধার করে স্কুলে চলা ত্রাণ শিবিরে রাখতে হয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছনো হচ্ছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। ত্রিপলও দেওয়া হচ্ছে। এ সব তো চলছেই।’’ চাহিদা বাড়ছে মূলত ত্রিপলের। ব্লকগুলি ত্রিপল চেয়ে জেলার কাছে আর্জি জানাচ্ছে। জেলাও রাজ্যের কাছে একই আর্জি জানাচ্ছে। এদিন নতুন করে বেশ কিছু ত্রিপল জেলায় এসেছে। জেলাশাসক মানছেন, ‘‘ত্রিপল চাওয়া হয়েছে। কিছু এসেওছে। যেখানে যেমন প্রয়োজন, পাঠানো হচ্ছে।’’
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, কোথাও বাঁধ ভাঙেনি, বা নতুন করে বাঁধে ধস নামেনি। অতিবৃষ্টির জেরেই বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে কেশপুরে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, এখানে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৩১,৪৫১। ৪৭টি ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছিল। ৬টি ত্রাণ শিবির চলছে এখনও। শিবিরে রয়েছেন ২৪৩ জন। ৭,২৫১ জনকে আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় এখনও পর্যন্ত দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ। প্রায় ৮২ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। প্রায় ৩০০টি ত্রাণ শিবির চলছে। শিবিরে রয়েছেন প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভেঙেছে। সবই মাটির বাড়ি। মঙ্গলবারই খড়্গপুর এবং মেদিনীপুর গ্রামীণের জলমগ্ন এলাকার পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জেলাশাসক। বন্যা পরিস্থিতির যতই অবনতি হচ্ছে, ততই পর্যাপ্ত ত্রাণ না পেয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছে দুর্গতদের একাংশের মধ্যে। প্রশাসনের ব্যাখ্যা, টানা বৃষ্টিতে নদীর জল ফুলেফেঁপে উঠেছে। জল নিকাশ সম্ভব হচ্ছে না। তার জেরেই বিস্তীর্ণ এলাকার এই জলমগ্ন অবস্থা। পরিস্থিতির পর্যালোচনায় এ দিন জেলাগুলির সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠক করেছে রাজ্য।
টানা বর্ষণে খাল পাড়ের ভাঙনে চিন্তা চাষিদের। গড়বেতা ১ ব্লকের বেনাচাপড়া অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে পুরন্দর খাল। অতিবৃষ্টিতে সেই খালের জল কানায় কানায় পূর্ণ। খাল পাড়েই রয়েছে বেনাচাপড়া, নেড়াশোল-সহ কয়েকটি মৌজার কৃষিজমি। ধান, বিভিন্ন আনাজ ফলেছে সেইসব জমিতে। অন্য সময় খালের জলেই সেচ দিয়ে ফসল ফলান তাঁরা। এ বার সেই খালই চিন্তা বাড়িয়েছে চাষিদের। খাল পাড়ের ভাঙনে গ্রাস করছে কৃষি জমি। আবার কৃষি জমির জমা জল পড়ছে খালে। ফলে জল বাড়লে খালে ও জমির জলে আরও ভাঙবে পাড়। সেক্ষেত্রে পুরন্দরের গর্ভে চলে যেতে পারে একের পর এক ফসলের খেত। এদিকে এই খালের জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মায়তার কাঠের সাঁকো। ধসে পড়েছে সাঁকোর একাংশ। ঝুঁকি এড়াতে বেনাচাপড়া পঞ্চায়েত থেকে পাশেই অস্থায়ীভাবে বাঁশের সাঁকো করে দেওয়া হয়েছে। কোনওরকমে যাতায়াত করছে বাইক, সাইকেল, ছোট গাড়ি। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শিবু বাগ বলেন, ‘‘পুরন্দর খালে জল বেড়েছে, জমির জমা জলও পড়ছে খালে। এতে পাড় ভাঙছে, কিছু জমির ক্ষতি হচ্ছে। পঞ্চায়েত থেকে উদ্যোগ নিয়ে মায়তায় বাঁশের সাঁকো করে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy