ঘরে ফিরে পরিবারের সঙ্গে প্রশান্ত মেইকাপ।
পরিবারের লোকেরা ভেবেই নিয়েছিল, ছেলে মারা গিয়েছে। তাই শাস্ত্র মেনে ছেলে প্রশান্ত মেইকাপের পারোলৌকিক কাজও সেরে ফেলা হয়। কিন্তু মায়ের মন তবু মানতে চায়নি। তাঁর বিশ্বাস ছিল, হয়তো একদিন ফিরে আসবে ছেলে। ১২ বছর পরে মায়ের আশা পূর্ণ হল। মায়ের কাছে ফিরে এল ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ থেকে ২২ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল প্রশান্ত। মাধ্যমিক পাশ করে সে তখন কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করত। তিন ভাই এবং এক বোন রয়েছে তার। সেই সময় মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসে। ১৯৯৮ সালে মুড়িসাই গ্রামে একদিন ‘কাজে যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় প্রশান্ত। আর ফেরেনি। বহু খোঁজাখুঁজির পরে ছেলেকে না পেয়ে শোকে মারা গিয়েছিলেন বাবা কার্তিক মেইকাপ। তবে বাড়ির লোকজন থেমে থাকেননি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ চালানো হয়েছে। শেষপর্যন্ত ফেসবুকের সৌজন্যে খোঁজ মেলে তার। গত বৃহস্পতিবার খড়্গপুর থেকে মুম্বইয়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন পরিবারের লোকেরা।
কী ভাবে সন্ধান মিলল প্রশান্তর?
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি ছেড়ে সোজা মুম্বইতে চলে গিয়েছিল প্রশান্ত। সেখানে রাস্তায় দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সেখানকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাকে উদ্ধার করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রশান্ত নিজের বাড়ির ঠিকানা জানাতে গিয়ে শুধুমাত্র ‘মুড়িসাই’ শব্দটি উচ্চারণ করতে পেরেছিল। এরপর ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা ফেসবুকের মাধ্যমে খোঁজ চালিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি-৩ ব্লকে গ্রামের সন্ধান পান। এরপর তাঁরা প্রশান্তকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ট্রেনে খড়গপুর স্টেশনে পৌঁছন। সেখানে প্রশান্তের গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁকে চিনতে পারেন।
মুড়িসাইয়ের বাসিন্দা দুলাল মাইতি বলেন, ‘‘ফেসবুক মারফত আমার মোবাইল নম্বর পেয়েছিল মুম্বইয়ের ওই সংস্থা। তারা আমাকে প্রশান্তর সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। সব তথ্য মিলে যাওয়ায়, তারা প্রশান্তর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়। আমি পরিবারের সঙ্গে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকেদের যোগাযোগ করিয়ে দিই।’’ বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফিরে আসে প্রশান্ত।
দীর্ঘ দুই দশক পরে ছেলেকে ফিরে পেয়ে আনন্দে চোখের জলে ভাসলেন মা নিয়তিদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে নানা কথা বলেছিল। কিন্তু যাই আমার বিশ্বাস ছিল, ছেলে ফিরে আসবেই। এ বার ওকে আগলে রাখব আমি।’’ দাদাকে ফিরে পেয়ে খুশি বোন কাকলি। তার দাবি, দাদা মারা গিয়েছে ভেবে বাড়ির দেওয়ালে ভাইফোঁটা দিতাম। এ বার দাদাকেই ফোঁটা দিতে পারব ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy