ইভিএমে আঠারোর সমর্থন পেতে শাসক জানাচ্ছে শুভেচ্ছা। বিরোধী জানাচ্ছে আলোচনার আমন্ত্রণ।
চিত্র ১: উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্র। পরীক্ষার্থীরা উদ্বেগ ভরা মুখে ঢুকছে। গেটের সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে শাসক দলের জনপ্রতিনিধি। তিনি পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিলেন গোলাপ, পেন, জলের বোতল।
চিত্র ২: দরজায় হাসিমুখে হাজির জনা চারেক তরুণ-তরুণী! বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ওই তরুণ, তরুণীরা খোঁজ নিচ্ছেন, বাড়িতে মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কেউ আছে কি না। থাকলে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, রাজ্যের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সঙ্কট। আগ্রহীদের সংগঠনের কার্যালয়ে গিয়ে আলোচনা শোনার আমন্ত্রণও জানানো হচ্ছে।
আজ যারা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তারাই আগামী দিনের ভোটার। শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের স্কুল স্তরে কোনও ইউনিট নেই। তবে জনপ্রতিনিধিরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকলেও কলেজ স্তরে শাসক দলের ছাত্রসংগঠনেরই রমরমা। এই পরিস্থিতিতে স্কুলস্তর থেকে ভোটার খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছে বামেরা। ঝাড়গ্রাম জেলায় বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। চলতি বছর সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাত হাজার। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক অংশ স্কুল পড়ুয়া। ইতিমধ্যে জেলার ৪৫টি স্কুলে এসএফআইয়ের ইউনিট গড়া হয়েছে।
মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় এসএফআইয়ের ১২টি লোকাল কমিটি ও তিনটি অর্গানাইজিং কমিটির উদ্যোগে লোকাল কমিটি ভিত্তিক ও অর্গানাইজিং কমিটি ভিত্তিক স্কুল ছাত্র কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে। সদ্য যে সব স্কুল পড়ুয়াদের সদস্য করা হয়েছে তাদের নিয়েই হবে ওই সব কনভেনশন। এরপর ১৩ এপ্রিল গোপীবল্লভপুরে এসএফআইয়ের জেলা কমিটির উদ্যোগে জেলা ভিত্তিক স্কুল ছাত্র কনভেনশন হবে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মধুশ্রী মজুমদার বলছেন, ‘‘কলেজে পড়ুয়াদের পাশাপাশি, আমাদের লক্ষ্য স্কুল পড়ুয়া। তাই বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মাত্র দু’টাকার বিনিময়ে আমরা সদস্য সংগ্রহ করছি। স্কুল গেটের বাইরেই সদস্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’ এসএফআই সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৬,৪৭১ জন সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যার ৪০ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া।
স্কুল স্তরকে গুরুত্ব বামেরা এই প্রথম দিচ্ছে তা নয়। ক্ষমতায় থাকাকালীন দুঃস্থদের বিলি করা হত টেস্ট পেপার। পিছিয়ে থাকা পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করতেন বাম মনস্ক শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্কুলস্তর থেকে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। বাম ছাত্র সংগঠনটির এই কর্মকাণ্ডকে গুরুত্ব দিতে নারাজ টিএমসিপি। সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি শেখ নজরুল বলছেন, ‘‘স্কুলস্তরে রাজ্য সরকারের সবুজসাথীর সাইকেল, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলিতে পড়ুয়ারা উপকৃত হচ্ছে। তারা বুঝছে, ভোটার হলে কাকে সমর্থন করতে হবে। স্কুলস্তরে আমাদের পৌঁছনো কিংবা না-পৌঁছনোর বিষয়টি তাই অপ্রাসঙ্গিক।’’
আঠারো এখন উপভোক্তাও। তারা কি এখনও ‘সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে’! আঠারোর আত্মায় ভরসা হারাতে নারাজ বামেরা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)