নিভৃতবাসে থাকা শবর শিশুর হাতে স্যানিটাইজ়ার দিচ্ছেন মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। ঝাড়গ্রামের পূর্বশোল গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
সরকারি খাতায় পরিচয় ‘পিছিয়ে পড়া’। করোনা-কালে শবর, আদিবাসী-মূলবাসী অধ্যুষিত সেই গ্রামই পথ দেখাচ্ছে। ভিন্ রাজ্য ফেরতদের দূরে ঠেলে দেওয়া নয়, গ্রামে স্বাগত জানিয়েই তাঁদের পৃথক থাকা-খাওয়ার আয়োজন করে দিয়েছেন গ্রামবাসী।
দেশের নানা প্রান্তে আটকে থাকা পরিযায়ীরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তাঁদের সূত্রে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ভয়ে অনেকেই ভিন্ রাজ্য ফেরতদের গ্রামে থাকতে দিতে চাইছেন না। হেনস্থা, মারধরের অভিযোগও উঠছে। বহু যন্ত্রণা সয়ে ঘরে ফেরা মানুষগুলো রাতারাতি নিজভূমে পরবাসী হয়ে যাচ্ছেন।
এই সঙকটে আলো দেখাচ্ছে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া অঞ্চলের পূর্বশোল। জঙ্গল ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামটিতে ১০৮টি পরিবারের বাস। এর মধ্যে ৪৫টি শবর পরিবার। আদিবাসী ও কুড়মি-সহ অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও আছেন। গত নভেম্বরে ঝাড়খণ্ডের বহড়াগোড়ায় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন গ্রামের দুই মহিলা ও এক শিশু-সহ ৮ জন। এক শবর দম্পতি তাঁদের সাত বছরের ছেলেকেও নিয়ে গিয়েছিলেন। লকডাউনে আটকে যান। শেষে ভাটার মালিকের ব্যবস্থাপনায় গত ২২ মে সকালে গাড়িতে তাঁদের ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমানার জামশোলায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তারপর ৫২ কিমি হেঁটে সন্ধ্যায় পৌঁছন তাঁরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা করিয়ে গ্রামে ঢোকেন।
গ্রামের কেউই দূর-ছাই করেননি। বরং স্থানীয় শালবাগান ক্লাব, স্ব-সহায়ক দলের সদস্য ও গ্রামবাসী মিলে বৈঠক করে স্ব-সহায়ক দলের কর্মশালা ভবনে ৮ জনের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। প্রত্যেকের বাড়ি থেকে দু’বেলা রান্না করা খাবার আসছে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে শুকনো জলখাবারের ব্যবস্থাও হয়েছে। স্থানীয় দু’টি স্ব-সহায়ক দলের দুই দলনেত্রী তমসী মাহাতো ও টুসু মাহাতো জানালেন, ১৪ দিনের কোয়রান্টিন শেষে মাংস-ভাত-মিষ্টি খাইয়ে সকলকে বাড়ি পাঠানো হবে।
সোমবার গ্রামে গিয়ে মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহাশিস মাহাতো ওই পরিযায়ীদের মুড়ি, চানাচুর, বিস্কুট, স্যানিটাইজ়ার, সাবান, পেস্ট দিচ্ছেন। শবর শিশু বিকু ভুক্তাকে শেখাচ্ছেন, স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত পরিষ্কারের নিয়ম। মহাশিস বলেন, ‘‘মানিকপাড়ারই অনেক এলাকায় পরিযায়ীরা গ্রামে ফিরতে পারেননি। সরকারি উদ্যোগে নিভৃতবাসে রয়েছেন। সেখানে পূর্বশোলের বাসিন্দারা পথ দেখাচ্ছেন।’’
অথচ গ্রামে ঢোকার আগে ভয়েই ছিলেন পরিযায়ীরা। শবর দম্পতি মনোরঞ্জন ভুক্তা ও রিঙ্কু ভুক্তা বলেন, ‘‘গ্রামে ঢুকতে পারব কি না আশঙ্কায় ছিলাম। এমন আতিথেয়তা পাব ভাবিনি।’’ গ্রামবাসী দিলীপ ভুক্তা, গোপাল মাহাতোরা অবশ্য বলছেন ‘‘আমাদের গ্রামের ঐতিহ্যই হল সবাই মিলেমিশে থাকা। ওঁদের তো ফেলে দিতে পারি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy