Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বাস না চললেও দোকান খোলা
Coronavirus Lockdown

সবুজ প্রচারে বাড়ছে বিভ্রান্তি

একের পর এক আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। তবু চায়ের দোকানে ভিড় কমছে না ঝাড়গ্রাম শহরে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

একের পর এক আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। তবু চায়ের দোকানে ভিড় কমছে না ঝাড়গ্রাম শহরে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২০ ০২:৫৬
Share: Save:

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে রবিবারই জানানো হয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় করোনা আক্রান্ত তিনজন। তিনজনই এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা রোগী। অথচ সেই জেলাতেই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার টোটোয় মাইক্রোফোন নিয়ে প্রচার করা হল— গ্রিন জ়োনে কী কী ছাড় রয়েছে। খাতায়কলমে এতদিন সবুজ জেলা হওয়ায় সোমবার থেকে ঝাড়গ্রামে বাস চালানোরও পরিকল্পনা হয়েছিল। তা অবশ্য চলেনি।

এর আগেও ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা তিন জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের দু’জন এখনও পাঁশকুড়ার বড়মা করোনা হাসপাতালে ভর্তি। অন্য জন অবশ্য রোগমুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ওই তিনজনের কথা জেলা বা রাজ্য, কোনও প্রশাসনই স্বীকার করেনি। তবে পরের তিন জন আক্রান্তের কথা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর স্বীকার করে নেওয়ায় নিয়মমতো ঝাড়গ্রাম আর সবুজ তালিকায় থাকবে না। তবে কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারের তরফেই সোমবার পর্যন্ত এই রংবদল নিয়ে কোনও ঘোষণা হয়নি। এ দিকে এ দিন সকাল থেকে দুপুর প্রশাসনেরই উদ্যোগে মাইক বেঁধে টোটো ঘুরল অরণ্যশহরে ও জেলার বিভিন্ন এলাকায়। জানানো হল, গ্রিন জ়োনে কী কী পরিষেবা চালু থাকবে। জরুরি পরিষেবার অতিরিক্ত যে সব দোকান খোলার ছাড়পত্র রয়েছে, ঝাড়গ্রামে এ দিন সে সব খুলেওছিল। পথে লোকজন নেমেছিলেন। কোথাও দোকানপাটে, কোথাও বা ব্যাঙ্কে ছিল ভিড়। এই অবস্থায় করোনা তালিকায় জেলার অবস্থান ঠিক কোথায়, তা নিয়ে বিভ্রান্ত ঝাড়গ্রামবাসী।

গোটা বিষয়টিতে জেলা প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটে থাকায় বিভ্রান্তি আরও বাড়ছে। আক্রান্তদের যেখানে চিকিৎসা চলছে, সেই বড়মা করোনা হাসপাতালের নোডাল অফিসার শচীন্দ্রনাথ রজক মানছেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলার ৫ জন বড়মায় ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসাধীনদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে।’’ অথচ জেলায় করোনা আক্রান্তদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছেন ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি। তিনি এ দিন শুধু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশে অতিরিক্ত দোকানপাট খোলা রয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য জেলায় নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র বাড়ানো হচ্ছে। আর বাস চালানোর জন্য রাজ্য পরিবহণ দফতর থেকে এখনও নির্দেশ আসেনি।’’

এই পরিস্থিতিতে সমাজ মাধ্যমে নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছেন, করোনা নিয়ে কেন এত রাখঢাক! প্রশাসনের একটি মহল অবশ্য ব্যাখ্যা দিচ্ছে, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে অলিখিত নির্দেশ দেওয়া আছে, জেলাকে ‘সবুজ’ রাখতে হবে। আদিবাসী-মূলবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম জেলায় করোনা আতঙ্ক ছড়ালে সেটা ভবিষ্যতের পক্ষে খারাপ হতে পারে। তাই করোনা নিয়ে জেলা স্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকেরা এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাইছেন না।

লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট করোনা পজ়িটিভ হওয়ায় শনিবারই জামবনির এক শিশুকে পূর্ব মেদিনীপুরের বড়মা হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঝাড়গ্রামের আরও দু’জন করোনা পজ়িটিভ হওয়ার খবরও আসে শনিবার। তাঁদের রবিবার সন্ধ্যায় বড়মায় পাঠানো হয়েছে। এই দুই আক্রান্তের একজন ঝাড়গ্রাম জুবিলি বাজারের একটি মুদি দোকানের কর্মী হওয়ায় রবিবার দুপুরেই বাজারটি সিল করে দেয় পুলিশ। প্রশাসনের উদ্যোগে বাজার জীবাণুমুক্তও করা হয়।

সোমবার জুবিলি বাজারের মূল চত্বর বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল মাছের খুচরো বাজার। তবে অন্য দিনের মতো জুবিলি মাছ বাজারে পাইকারি বেচাকেনা হয়নি। ভোরে জুবিলি বাজারের অদূরে লোকাল বোর্ড এলাকায় মাছের পাইকারি বাজার বসে। পরে জুবিলি বাজারের মাছ পট্টিতে খুচরো মাছ বাজারে বেচাকেনাও হয়। মাছপট্টি সিল করা হয়নি। হাতে গোনা কয়েকজন মাছ বিক্রেতা এ দিন বসেছিলেন। ক্রেতাও ছিলেন নগণ্য। তবে জুবিলি বাজার লাগোয়া রেল বাজারের আনাজ পট্টির কিছু আনাজ দোকান খুলেছিল। আর এদিন জুবিলি বাজারের ‘সিল’ করা অংশে পুলিশের নজর এড়িয়ে বাঁশের ব্যারিকেড পেরিয়ে লোকজনকে যাতায়াত করতে দেখা যায়। আর শহরে পোশাকের দোকান, হার্ডঅয়্যায়ের দোকান-সহ গ্রিন জ়োনে ছাড় থাকা অতিরিক্ত দোকানপাট খুলেছিল।

তবে কথা থাকলেও বেলপাহাড়ি ও গোপীবল্লভপুর রুটে দু’টি সরকারি বাস এ দিন চলেনি। জেলা পরিবহণ আধিকারিক অমিয় কুণ্ডু বলেন, ‘‘এ দিন বাস চলেনি।’’ কেন? তার ব্যাখ্যা দেননি তিনি। ঝাড়গ্রাম জেলা বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ পাল অবশ্য বলেন, ‘‘জেলা পরিবহণ দফতর থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, কয়েকজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে বাস চালানো যাবে না।’’

ঝাড়গ্রাম প্রোগ্রেসিভ বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শশধর পৈড়ারও বক্তব্য, ‘‘বাস চালানোর প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রশাসন দেয়নি। তাই বাস চলেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Jhargram Green Zone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE