Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Ghatal

একশো দিনে মন নেই, ফুরোচ্ছে পুঁজি

জমানো টাকাই ভরসা। কাজে ফিরতে চান স্বর্ণশিল্পীরা। শুনল আনন্দবাজারপ্রশাসনের তথ্য বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে ঘাটাল মহকুমায় প্রায় ৬০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছিলেন। এর আশি ভাগই স্বর্ণশিল্পী।

একশো দিনের কাজ করছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। টানা বৃষ্টির আগেই এই ছবি কমছিল ঘাটালের বিভিন্ন এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

একশো দিনের কাজ করছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। টানা বৃষ্টির আগেই এই ছবি কমছিল ঘাটালের বিভিন্ন এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২০ ০২:০৪
Share: Save:

পরিসংখ্যান বলছে, যতজন ফিরেছেন, মেরেকেটে তার অর্ধেক নাম লিখিয়েছেন একশো দিনের কাজে। তাঁদের সকলেই কাজ পেয়েছেন, তা-ও নয়। অথচ করোনা-কালে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের রুটিরুজির জন্য একশো দিনের প্রকল্পে কাজের কথাই বলেছিল সরকার। এখন আবার ভরা বর্ষা। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হওয়ার পরে ঘাটাল-দাসপুরে একশো দিনের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, মিলিয়ে বিপন্ন দশা আরও স্বর্ণশিল্পীদের।

প্রশাসনের তথ্য বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে ঘাটাল মহকুমায় প্রায় ৬০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছিলেন। এর আশি ভাগই স্বর্ণশিল্পী। এর মধ্যে দাসপুরেই প্রায় ৪১ হাজার, ঘাটালে ১৫ হাজার স্বর্ণশিল্পী ফিরেছেন। আর নতুন এবং পুরনো জব কার্ড মিলিয়ে একশো দিনের প্রকল্পে কমবেশি হাজার পঁচিশেক শ্রমিক নাম লিখিয়েছিলেন। অদিকাংশই আগ্রহ দেখাননি মূলত দু’টি কারণে। প্রথমত, রোজগার কম। দ্বিতীয়ত, সোনার গয়নায় সূক্ষ্ম নকশা তোলা হাতে কোদাল-বেলদা তুলতে অস্বস্তি ছিল অনেকেরই। তবে যাঁরা নাম লিখিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই একশো দিনের কাজ চেয়েও পাননি বলে অভিযোগ। ব্লকগুলিতে এই প্রকল্পে গড়ে তিন-চার হাজার করে শ্রমিক কাজ করছেন। এঁদের নামমাত্র পরিযায়ী শ্রমিক।

বিরোধীদের অভিযোগ, একশো দিনের কাজ ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এই পরিযায়ীদের জন্য করতে পারেনি সরকার। জেলা প্রশাসন শিল্পোদ্যোগের কথা বললেও তা ভাবনাচিন্তার স্তরেই আটকে রয়েছে। বিজেপির ঘাটাল জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “বর্ষাকালে একশো দিনের কাজ কমে যায়, সেটা জানা কথা। আগেভাগেই এঁদের কথা ভাবা হল না কেন?”

এই পরিস্থিতিতে জমানো পুঁজি দিয়েই কোনওমতে চালাচ্ছেন স্বর্ণশিল্পীরা। ভিন্ রাজ্যের কর্মস্থল ছেড়ে চলে আসায় বদলে গিয়েছে জীবনয়াত্রাও। দাসপুরের যুবক বিকাশ সেনাপতির আক্ষেপ, “ছেলেটা দিল্লিতে পড়ত। এখন তো সব বন্ধ। কোনও ভাবে এ মাসের স্কুলের মাইনেটা দিতে পেরেছি। কাজে না ফিরলে আর টানা যাবে না।” এই সব স্বর্ণশিল্পীদের অনেকেই আবার করোনার কবলে পড়েছিলেন। তাঁদের সঙ্কট আরও বেশি। ঘাটালের বাসিন্দা স্বর্ণশিল্পী পলাশ মণ্ডল বলেন, “স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই সংক্রমিত হয়েছিলাম। এখন একশো দিনের কাজই ভরসা। কিন্তু কাজ চাইলেও তো মিলছে না।” করোনা আক্রান্ত দাসপুরের গোছাতি এলাকার যুবক সমর ভুঁইয়ার কথায়, “এখানে কাজের কোনও ভরসা নেই। কর্মস্থলে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি।”

ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পালের যদিও দাবি, “একশো দিনের কাজে কোনও সমস্যা নেই। কাজ চাইলেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। তবে কাজে আগ্রহ কম।”

ফলে পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই ভিন্‌ রাজ্যের কাজের জায়গায়া ফেরা শুরু করেছেন। স্বর্ণ শিল্পী সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, করোনা পরিস্থিতিতে দিল্লি, মুম্বই-সহ কোথাওই সে ভাবে সোনার বাজার চালু হয়নি। সোনার দরও এখন আকাশ ছোঁয়া। তাই অল্প অল্প করেই স্বর্ণশিল্পীরা কাজে ফিরছেন। তবে এলাকায় যথাযথ কাজের সুযোগ না তৈরি হলে অচিরেই স্বর্ণশিল্পীদের বেশিরভাগ ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দেবেন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Ghatal Goldsmiths
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy