আক্রান্ত হাসপাতাল সুপারের শুশ্রূষা চলছে। নিজস্ব চিত্র।
বছরখানেক ধরে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সুনাম অর্জন করেছে জেলার বড়মা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। সেই হাসপাতালেই শনিবার ভাঙচুর চালাল রোগীর পরিজন। মাথা ফাটল হাসপাতাল সুপারের। ঘটনায় জুড়েছে রাজনীতি রং-ও। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু রায়ের অনুগামীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
বড়মা হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ১৩ মে দিব্যেন্দু হাসপাতালের সুপার ভাস্কর রায় এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর আফজল শাকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করে তমলুকের হাসপাতালে ভ্যান্টিলেশনে থাকা এক রোগীকে বড়মায় ভর্তি করান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শনিবার সকালে তিনি মারা যান। ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’ দেরি করে দেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগে তুলে সকাল ৯টা নাগাদ অন্তত ১০০ জন লোক নিয়ে হাসপাতালে চড়াও হয় মৃতের আত্মীয়েরা। তারা হাসপাতালের রিসেপশনে থাকা কম্পিউটার, প্রিন্টার, বসার জায়গায় ভাঙচুর শুরু করে বলে অভিযোগ।
হামলাকারীদের বাধা দিতে গেলে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের লোহার রড দিয়ে দুষ্কৃতীরা পেটানো শুরু করে বলে অভিযোগ। বাহ পড়েননি মহিলা কর্মীরাও। লোহার চেয়ার ছুড়ে মারা হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের দিকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইসিইউ থেকে নীচে নেমে আসেন হাসপাতাল সুপার ভাস্কর রায়। অভিযোগ সুপারকে লক্ষ করে লোহার রড ছোড়ে এক দুষ্কৃতী। তাতে আঘাত লেগে মাথা ফেটে যায় বলে ভাস্করের। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে তাণ্ডব। তবে সুপার রক্তাক্ত হয়ে পড়লে দুষ্কৃতীরা জোর করে মৃতদেহ নিয়ে চম্পট দেয় বলে দাবি।
আহত সুপার ভাস্কর রায় বলছেন, ‘‘ওই রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে আমরা প্রথমে ভর্তি নিতে চাইনি। দিব্যেন্দু রায়ের বারবার অনুরোধে আমরা রোগীতে ভর্তি নিই। যারা হামলা চালিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই দিব্যেন্দু রায়ের লোক। পূর্ব পরিকল্পনা মতো এটা ঘটানো হয়েছে। রোগীর মৃত্যুর অনেক আগে থেকেই ওই লোকজন হাসপাতালের পিছনে জমায়েত করেছিল। আমরা প্রথমে জমায়েতের কারণ বুঝতে পারিনি। পাঁশকুড়া থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।’’ হামলার কথা স্বীকার করে শেখ ইসলাম আলি নামে মৃতের এক আত্মীয় বলে, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসায় অবহেলা করেছেন। রোগীর মৃত্যুর পর ডিসচার্জ সার্টিফিকেট পেতে দেরি হচ্ছিল। তখন কথা কাটাকাটি হতে হতে আমাদের কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে মারধরে জড়িয়ে পড়ে।’’
করোনায় জবুথবু গোটা দেশ। রাজ্যের অবস্থাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। হাসপাতালে শয্যা এবং অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। পরস্থিতি সামাল দিতে শনিবারই আজ, রবিবার থেকে টানা ১৫ দিন কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। এমন পরিস্থিতিতে শাসকদলেরই এক নেতার নাম করোনা হাসপাতাল ভাঙচুরের সঙ্গে জুড়ে গেল এ দিন। যদিও বড়মা কোভিড হাসপাতালে হামলায় ওঠা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে দিব্যেন্দু বলছেন, ‘‘রোগীকে আমিই পাঠিয়েছিলাম। হামলার কথা শুনেছি। ঠিক কী হয়েছে, জানি না। তবে সুপারকে বলেছি যারা হামলা করেছে, তারা ক্ষমা চেয়ে নেবে। হামলার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা আমার অনুগামী কেউ নয়।’’
তৃণমূল নেতা হামলাকারীদের ক্ষমা চাওয়ার কথা বললেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। গত বছর এপ্রিলে মেচগ্রামের বড়মা মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে সরকারি উদ্যোগে শুরু হয় কোভিড চিকিৎসা। হাসপাতালের পরিষেবা এবং পরিকাঠামো নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিনিধিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার সময় ফের এখানের ১০০টি শয্যায় সরকারি উদ্যোগে কোভিড চিকিৎসা শুরু হয়। বাকি ১০০টি শয্যায় বড়মা কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে বেসরকারি মডেলে কোভিড চিকিৎসা শুরু করেছেন। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে এখন হাপাতালে ১৯০ জন কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসাধীন।
হামলার বিষয়ে হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আফজল শা বলেন, ‘‘এটা একটা ষড়যন্ত্র। পুলিশ সঠিক ভাবে তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।’’ উল্লেখ্য, আফজল সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। গোটা ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলছেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। বড়মা হাসপাতালে নিরাপত্তা দেওয়া ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy