Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

করোনাকে হারাতেও ‘খেলা হবে’, দুয়ারে তৃণমূল কর্মীরা

আদিম জনজাতি লোধা-শবরদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করে দিচ্ছেন ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ব্লকের তিনটি অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীরা।

প্রতিষেধক  নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্তকরণে লোধা গ্রামে হাজির তৃণমূল নেতা- কর্মীরা।

প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্তকরণে লোধা গ্রামে হাজির তৃণমূল নেতা- কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াগ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ২৩:৩২
Share: Save:

ভোটের আগে তাঁদের স্লোগান ছিল ‘খেলা হবে’। এখন ভোটে জেতার পরেও সেই এক স্লোগান লেখা টি-শার্টে। তবে এই খেলা রাজনীতির নয়, করোনাকে হারাতে প্রতিষেধকের খেলা।

আদিম জনজাতি লোধা-শবররা যাতে প্রতিষেধক নেন, সে জন্য বাড়ি-বাড়ি গিয়ে অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করে দিচ্ছেন ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ব্লকের তিনটি অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীরা। বড়খাঁকড়ি, মলম ও নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৮০ জন তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে গড়া হয়েছে ‘ভয় ভেঙে পাশে আছি’ দল। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বছর বত্রিশের সুমন সাহুর নেতৃত্বে ল্যাপটপ নিয়ে লোধা-শবর অধ্যুষিত গ্রামে-গ্রামে ঘুরছেন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের পরনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আঁকা আর খেলা হবে লেখা টি-শার্ট। তাঁদের বার্তা, ‘করোনার মারণ খেলায় জিততে হলে নিতে হবে প্রতিষেধক।’

সুমনের আদি বাড়ি মলম অঞ্চলের কলমাপুখুরিয়া গ্রামে। তিনি জানান, জঙ্গলে ঘেরা নয়াগ্রাম ব্লকের ওই এলাকাগুলিতে আদিম জনজাতির লোধা-শবরদের বাস। কিন্তু জঙ্গলজীবী লোধা-শবরদের একটি বড় অংশ সূচ ফোটানোয় ভয় পান। এলাকার লোধা-শবরদের বেশিরভাগই করোনার প্রতিষেধক নিতে মোটেই আগ্রহ দেখাননি। জেলায় প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ়ও এখন অমিল। তবে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক এসে পৌঁছনোর কথা। সুমন জানালেন, লোধা-শবররা যাতে সহজেই প্রতিষেধক নিতে পারেন, নাম নথিভুক্ত করতে লাইনে দাঁড়িয়ে ঝঞ্ঝাট পোহাতে না হয়, সেই কারণেই ‘কো-উইন’ অ্যাপে অনলাইনে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। তৃণমূল কর্মী মানিক হাটুই, বিপ্লব দণ্ডপাট, মৌলিক হাটুই, চিন্ময় ঘোষরা জানাচ্ছেন, সাধারণত, সাত সকালে বনজ সম্পদ সংগ্রহে জঙ্গলে চলে যান লোধা-শবররা। ফেরেন সন্ধ্যায়। তাই খুব সকালে শবর পাড়ায় পৌঁছতে হচ্ছে। লোধা-শবরদের রাজি করাতে গিয়েও বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। প্রতিষেধক নিতে হবে শুনেই অনেকেই ছুটে পালাচ্ছেন। কেউ আবার দরজাই খুলছেন না। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় দেওয়াল লিখন করে বাসিন্দাদের সচেতন করা হয়। কিন্তু লোধা পাড়ায় তাতেও কাজ না হওয়ায় পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক মন্টু ভক্তার মতো লেখাপড়া জানা কয়েকজন লোধা যুবকের সাহায্য নিয়ে মারণ ভাইরাসের বিপদ সম্পর্কে এলাকাবাসীকে সচেতন করার কাজ শুরু হয়। এরপরই নাম নথিভুক্ত করতে সম্মত হচ্ছে লোধা-শবর পরিবারগুলির একাংশ।

সুমন বলেন, ‘‘মলম অঞ্চলের ভালিয়াচাটি গ্রামে এখনও পর্যন্ত ৫২টি পরিবারকে রাজি করিয়ে ১৫৩ জনের নাম অনলাইনে নথিভুক্ত করানো হয়েছে। এখনও এলাকার বহু লোধা পরিবারের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। কাজটা কঠিন, তবে আমরা সচেতন করে নাম নথিভুক্ত করার লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ ভালিয়াচাটির বাসিন্দা লোধা দম্পতি শ্রীমন্ত ভক্তা ও বাসন্তী ভক্তা মানছেন, ‘‘সূচ ফোটাতে হবে বলে ভয় পাচ্ছিলাম। সুমনবাবুরা বলছেন, করোনাকে তাড়াতে হলে সবাইকে প্রতিষেধক নিতে হবে।’’ বৃদ্ধা ছবি ভক্তার কথায়, ‘‘প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হলে আমাদের প্রতিষেধক দান কেন্দ্রেও ওঁরা নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।’’

জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত সাহা বলছিলেন, ‘‘অতিমারি পরিস্থিতিতে দলের কর্মীদের এই দৃষ্টান্তমূলক মানবিক উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।’’ তবে তৃণমূল কর্মীরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের ছবি দেওয়া ‘খেলা হবে’ লেখা টি-শার্ট পরে এই কাজ করায় বিঁধতে ছাড়ছে না গেরুয়া শিবির।

স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা বলছেন, পরিষেবা দেওয়ার আড়ালে রাজনীতি করছে তৃণমূল। কেন্দ্রের দেওয়া প্রতিষেধক রাজ্যের বলে চালানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সুমনের জবাব, ‘‘আমরা আগে যুব তৃণমূল করতাম। গত বছর থেকে মূল সংগঠনের কাজ করছি। তবে অতিমারি পরিস্থিতিতে রং না দেখে সব মানুষের পাশেই দাঁড়াচ্ছি। সমালোচনা না করে ওঁরাও তো পরিষেবা দিতে পথে
নামতে পারেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC COVID-19 coronavirus COVID-19 Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy