Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

কেউ লুকিয়ে, কেউ আবার পালাচ্ছেন

বেলপাহাড়ির এক সন্দেহজনক রোগীকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।

 আমেরিকা ফেরত যুবকের শ্বশুরবাড়ির সামনে পড়শিদের জটলা। খড়্গপুরের মালঞ্চে নিজস্ব চিত্র

আমেরিকা ফেরত যুবকের শ্বশুরবাড়ির সামনে পড়শিদের জটলা। খড়্গপুরের মালঞ্চে নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০১:৪৭
Share: Save:

লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সংক্রমণ ঠেকাতে ভিন্‌ রাজ্য বা বিদেশ ফেরতদের পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সামনে আসছে সচেতনতার ঘাটতি। কেউ হাসপাতালের কোয়রান্টিন বিভাগ থেকে পালাচ্ছেন, তো কেউ বিদেশ থেকে ফিরে কার্যত আত্মগোপন করে থাকছেন।

বেলপাহাড়ির এক সন্দেহজনক রোগীকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। শনিবার চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাঁকে হাসপাতালে কোয়ারান্টিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিনই ওই রোগী পালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বেলপাহাড়ির বাসিন্দা বছর সাতাশের ওই যুবক বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ থেকে এলাকায় ফেরেন। খবর পেয়ে স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাম্বুল্যান্স শুক্রবার ওই যুবকের বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর থেকে ওই যুবকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে বলা হয়। শনিবার ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটিতে ওই যুবক এলে বিশেষ ক্লিনিকের চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেন। এরপরে এক্স-রে করাতে তাঁকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। কিন্তু তিনি সেখান থেকে উধাও হয়ে যান বলে হাসপাতাল সূত্রের দাবি।

যোগাযোগ করা হলে ওই যুবক দাবি করেন, হাসপাতালে এক্স রে-র লাইন দেখে তিনি বাড়ি ফিরে এসেছেন। তবে হাসপাতালের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখছেন। ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘বেলপাহাড়ির ওই যুবককে এদিন চিকিৎসক পরীক্ষা করে হাসপাতালে কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু ওই যুবক এক্স রে করানোর নাম করে গা-ঢাকা দেন। পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’ জেলার পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের বক্তব্য, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই যুবককে খোঁজা হচ্ছে।’’

খড়্গপুর শহরের মালঞ্চ এলাকায় আবার আমেরিকা ফেরত এক যুবকের শ্বশুরবাড়িতে আসা নিয়ে শোরগোল পড়েছে। টেক্সাসে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত ওই যুবক গত বৃহস্পতিবার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। স্থানীয়রা জানান, ওই যুবক তালবাগিচার ভোটার। তাঁর স্ত্রী বাপেরবাড়িতেই থাকেন। ওই যুবকও আপাতত শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। তিনি আমেরিকা থেকে ফিরেও আলাদা থাকেননি। শ্বশুরবাড়িতে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছেন। ফলে, সন্ত্রস্ত প্রতিবেশীরা। পড়শি সুমন্ত দে চৌধুরী, প্রদীপকুমার দের অভিযোগ, “উনি আমাদের পাড়ার জামাই। কিন্তু রোগের ক্ষেত্রে সম্পর্কের কোনও জায়গা নেই। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বিদেশ থেকে আসা সকলকে কোয়রান্টিনে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে ওঁরা নিয়ম মানেননি। ওঁর শ্বশুর দোকান খুলছেন। সেখানে পাড়ার লোক যাচ্ছে।’’ শুক্রবার বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। এ দিন অবশ্য এলাকাবাসী সরব হতেই চলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর লক্ষ্মী মুর্মু। তিনি বলেন, “আমি শুক্রবার বিষয়টি জানতে চাওয়ায় ওই পরিবার জানায়, দিল্লি ও কলকাতা বিমানবন্দরে পরীক্ষায় কিছু পাওয়া যায়নি। তাই চুপ ছিলাম। কিন্তু পাড়ার লোক যখন বলছে তখন স্বাস্থ্য দফতর ও পুরপ্রধানকে জানিয়েছি।”

ওই যুবকের শ্বশুরের যুক্তি, “ফেরার পর থেকে জামাই তো বাড়ি থেকে বেরোয়নি।” আর যুবকের স্ত্রী বলছেন, “যদি স্বাস্থ্য দফতরের লোক এসে বলে তাহলে নিশ্চয় নিয়ম পালন করব।” এ দিনই স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা এলাকায় যান। খড়্গপুরের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল বলেন, “ওই যুবক-সহ যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের সকলকেই কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। এই ১৪ দিন পাড়ার একটি ক্লাব ওঁদের সাহায্য করবে বলেও জানিয়েছি।”

ঘটনায় পুর-কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দলের রাজ্য জোনাল আহ্বায়ক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভার পক্ষ থেকে শহরে কোনও সতর্কতা পালন হচ্ছে না। আমরা সকলকে সচেতন করছি।” পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের পাল্টা বক্তব্য, “বিজেপি রাজনীতি করছে। আমরা সজাগ রয়েছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Jhargram Kharagpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy