Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Corona Warrior

মার খেলেন করোনা যোদ্ধা, গ্রেফতার চার বিজেপি কর্মী

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের পাথরা পঞ্চায়েতের বাকড়া গ্রামে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০১:১০
Share: Save:

কখনও চিকিৎসক, নার্স, কখনও বিডিও—সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের করোনা যোদ্ধাদের নিগ্রহের নানা ঘটনা সামনে এসেছে এর আগে। এ বার আক্রান্ত হলেন সরকারি নিভৃতাবাসের কেয়ারটেকার। সেই ঘটনায় লেগে গেল রাজনীতির রং। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী ওই কেয়ারটেকারকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন বিজেপি-র চার কর্মী। তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা ছাড়াও তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (নিপীড়ন বিরোধী) আইনে মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের পাথরা পঞ্চায়েতের বাকড়া গ্রামে। আক্রান্ত সোনু প্রামাণিক শবর সম্প্রদায়ের যুবক। তাঁর বাড়ি স্থানীয় তালাই গ্রামে। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁর চিকিৎসা চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাথরা গ্রাম পঞ্চায়েতটি বিজেপি-র দখলে। উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তদের রাখার জন্য বাকড়ার কর্মতীর্থ ভবনে সরকারি নিভৃতবাস চালু হয়েছে। সেখানে আবাসিকদের খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিতেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানেই খাবার পৌঁছতে গিয়েছিলেন সোনু। ওই সময়ে বাকড়া গ্রামের কিছু লোকজন তাঁকে বাধা দেন। নিভৃতবাসে যাতায়াত করে সোনু এলাকায় করোনা ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। এই নিয়ে বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, বচসা চলাকালীন বিজেপি-র লোকজন সোনুকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। স্থানীয় তৃণমূলের লোকজন তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ব্লকের ভাঙাগড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটিতে রেফার করা হয়। আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের উপসর্গ থাকায় গভীর রাতে সোনুকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়।

তাঁর বাবা লখীন্দর প্রামাণিকের ক্ষোভ, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমার ছেলে তো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করছিল। কিন্তু ওকে এভাবে মারধর করে কী লাভ হল!’’ এই ঘটনার পরে সোনুর মা মিনা প্রামাণিক ১১ জনের বিরুদ্ধে সাঁকরাইল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বুধবার ধৃত চার জনকে ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির করায় পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপি-র বাকড়া বুথ সভাপতি সুবোধ মাহাতো। ধৃত বাকি তিন জন বিজেপি-র স্থানীয় কর্মী। এদিন আদালত চার জনকেই জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।

যুব তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি শান্তনু ঘোষের দাবি, ‘‘সোনু যুবশক্তি কর্মসূচির একজন যুবযোদ্ধা। ব্লক প্রশাসন তাঁকে সরকারি নিভৃতবাসের আবাসিকদের দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সোনু সেই কাজ করছিলেন। কিন্তু বিজেপি-র লোকজন এই সঙ্কটকালে অত্যন্ত ঘৃণ্য রাজনীতি শুরু করেছে। তারাই সোনুকে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে অমানবিক ভাবে মারধর করেছে।’’ বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতো অবশ্য সরাসরিই বলছেন, ‘‘ওই যুবক প্রতিদিন ওই নিভৃতবাসে খাবার দিতে যেতেন। আবার বাকড়া চকে একটি মুরগির মাংসের দোকানও চালাতেন। এই বিষয়টি নিয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি তুলেছিলেন। সেই নিয়েই বচসা শুরু হয়। বিষয়টিকে রাজনীতির রং লাগিয়ে আমাদের দলীয় কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

বুধবার তালাই গ্রামে গিয়ে সোনুর মা মিনা ও স্ত্রী পায়েলের সঙ্গে দেখা করেন জেলাশাসক আয়েষা রানি। জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy