রদবদল হল পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদ (ওয়েস্ট বেঙ্গল আদিবাসী ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল বোর্ড)-এর। চেয়ারপার্সন পদ থেকে সরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাইস চেয়ারপার্সন পদ থেকেও সরানো হল মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে। পর্ষদের নতুন চেয়ারপার্সন হয়েছেন নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু। তিনি ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতিও বটে।
রাজ্যপালের সম্মতিক্রমে পর্ষদের নতুন জেনারেল বডি গঠন করা হয়েছে। তবে আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে পর্ষদের এই রদবদল নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, ব্যস্ততার কারণে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে পর্ষদের নিয়মিত বৈঠক ডাকা সম্ভব হচ্ছিল না। বনমন্ত্রীও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে রয়েছেন। তাই যাঁরা সময় দিতে পারবেন, তেমন ব্যক্তিত্বদেরই পর্ষদের শীর্ষ পদে আনা হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিধানসভা ভোটের আগে জনজাতিদের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখার লক্ষ্যেই এই রদবদল।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে আদিবাসীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথ এই পর্ষদ গঠিত হয়েছিল। প্রথম চেয়ারপার্সন হন বিরসা তিরকে। তিনি অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সভাপতি। প্রথম ভাইস চেয়ারপার্সন ছিলেন ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন সাংসদ উমা সরেন। কার্যকালের মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালে পর্ষদের পরবর্তী জেনারেল বডিতে কিছু রদবদল হয়। চেয়ারপার্সন হন মুখ্যমন্ত্রী, ভাইস চেয়ারপার্সন বিরবাহা হাঁসদা। গতবার ২০ জনের জেনারেল বডিতে সদস্যপদে ছিল বেশ কিছু নতুন মুখ। এ বার পর্ষদের চেয়ারপার্সন হয়েছেন দুলাল। ভাইস চেয়ারপার্সন পদে এসেছেন রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশচিক বরাইক। ২০ জনের নতুন জেনারেল বডিতে সদস্য হিসেবে সাঁওতালি সাহিত্যিক সুচিত্রা হাঁসদা, জনজাতি নেতা রবিন টুডু, আদিত্য কিস্কুর মতো জনা পনেরো পুরনো মুখ ফের ঠাঁই পেয়েছেন। সদস্যপদে নতুন মুখ কেশিয়াড়ির বিধায়ক পরেশ মুর্মু। তা ছাড়া, এখানে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের পাশাপাশি, মুন্ডা, ওঁরাও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও আছেন।
পর্ষদের বিগত জেনারেল বডির তরফে বিভিন্ন আদিবাসী মনীষীর মূর্তি স্থাপন, তাঁদের জন্মদিন উদ্যাপন, জয়জোহার আবাস তৈরির মতো কাজ হয়েছে। মুন্ডা এবং ওঁরাওদের ধর্মীয় স্থান সংরক্ষণের কাজওহয়েছে। নানা আদিবাসী ভাষা চর্চায় সংস্থাদের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল।
নতুন বডি কী কাজ করবে? পর্ষদের নতুন চেয়ারপার্সন দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘আদিবাসীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তাদান এবং আদিবাসী যুবক যুবতীদের স্বনিযুক্তির জন্য ইতিমধ্যেই আলোচনার প্রস্তাব এসেছে।’’
আদিবাসী আবেগকে মর্যাদার পাশাপাশি পর্ষদের নতুন পরিচালন সমিতির মূল লক্ষ্য যে হবে কর্মসংস্থান তা স্পষ্ট দুলালের কথাতেই। শীঘ্রই পর্ষদের নতুন জেনারেল বডির প্রথম বৈঠক ডাকা হবে বলে জানিয়েছেন দুলাল।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)