Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪
Digha Jagannath Temple

মাসির বাড়ির দখলের চেষ্টা তৃণমূল নেতাদের, বিতর্ক তুঙ্গে

রবিবার রথযাত্রার উপলক্ষে ওল্ড দিঘা জগন্নাথ ঘাটে পুরাতন মন্দিরে শুরু হয়েছে জগন্নাথ দেবের বাৎসরিক পুজো।

দিঘা পুরনো জগন্নাথ মন্দিরের আগের অবস্থা। নিজস্ব চিত্র

দিঘা পুরনো জগন্নাথ মন্দিরের আগের অবস্থা। নিজস্ব চিত্র kamilasuvendu21@gmail.com

কেশব মান্না
দিঘা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩১
Share: Save:

কথা ছিল, চলতি বছর এপ্রিলে হবে জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন। কিন্তু পরে জানা যায়, কাজ শেষ হতে আরও মাস চারেক লাগবে। রথযাত্রার দিনেও সৈকত নগরী দিঘায় নতুন জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের কাজ চলেছে। আর এরই মধ্যে মাথাচাড়া দিয়েছে নতুন বিতর্ক।

সরকারি উদ্যোগে যেখানে মাসির বাড়ি হওয়ার কথা, ওল্ড দিঘার সেই পুরনো জগন্নাথ মন্দির ঘিরে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। রথযাত্রার আগে শনিবার জগন্নাথ দেবের প্রস্তাবিত মাসির বাড়ি থেকে খুলে ফেলা হয়েছে মন্দিরের ইতিবৃত্ত লেখা পাথরের ফলক। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠাতার নামের ফলকও। অভিযোগ, শাসকদলের স্থানীয় নেতারা 'দখল' করে নিয়েছেন মাসির বাড়ি। এই কাজে বাধা দিতে গিয়ে মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সমীর কুমার মণ্ডল অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ।

রবিবার রথযাত্রার উপলক্ষে ওল্ড দিঘা জগন্নাথ ঘাটে পুরাতন মন্দিরে শুরু হয়েছে জগন্নাথ দেবের বাৎসরিক পুজো। প্রশাসন সূত্রের খবর, দিঘায় সরকারি উদ্যোগে জগন্নাথ ধাম ও সংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র গড়ে উঠছে । আগামী বছর থেকে রথের দিন জগন্নাথ- বলরাম এবং সুভদ্রার রথের চাকা গড়াবে সৈকত নগরীতে। মাসির বাড়ি হিসেবে এই পুরনো মন্দিরকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও পুরনো মন্দিরে জগন্নাথ দেবের বাৎসরিক পুজোর আয়োজন হয়েছে। কিন্তু শাসক দলের কিছু স্থানীয় নেতার অপ্রত্যাশিত ও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপে আয়োজনের তাল কাটে বলে অভিযোগ।

অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতার তত্ত্বাবধানে মন্দিরের প্রবেশদ্বারের উপরে দাতার পরিচয় এবং মন্দিরের ইতিবৃত্ত লেখা পাথরের ফলক খুলে ফেলা হয়েছে। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সমীর মণ্ডলের ছেলে সঞ্জিত মণ্ডল (বাবলা) বলেন,"সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের মন্দির আইন অনুযায়ী এই মন্দিরটিকে নথিভুক্ত করানো হয়েছে। সেখানে বাবা ছাড়াও স্থানীয় তিন জন মূল কমিটিতে ছিলেন। যেহেতু সরকারি উদ্যোগে মন্দিরটি জগন্নাথের মাসির বাড়ি হওয়ার কথা,তাই কয়েকজন স্বার্থান্বেষী মানুষ মন্দিরকে দখল করে নিয়েছে।"

প্রসঙ্গত, কলকাতার রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার বাসিন্দা, সমীর মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রীর উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে ওল্ড দিঘা জগন্নাথ ঘাটের কাছে গড়ে ওঠে এই মন্দির। সমূহ খরচ করেন তিনি। বন দফতরের জমিতেই গড়ে ওঠে মন্দির।

মন্দির কমিটির সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় বাসিন্দা অনন্ত পাত্র বলছেন, "শুক্রবার পুজোর প্রস্তুতি দেখতে মন্দিরে গিয়েছিলেন সমীর মণ্ডল। সে সময় তিনি দেখেন, কয়েকজন মিলে পাথরের ফলক খুলে ফেলেছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।"

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্দিরটি মাসির বাড়ি হবে শোনার পর থেকেই সমীরের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিরোধ তৈরি হয়। মন্দিরের নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর হয়ে ওঠেন শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের একাংশ। তা বুঝতে পেরে কিছুদিন আগে ওই মন্দিরের গায়ে একটি ব্যানার লাগিয়ে দেন সমীর। ভারত সরকারের ১৮৮২ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনে ওই মন্দিরটিকে আদি জগন্নাথ সেবাশ্রম হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর পর ওই মন্দির থেকে তার ইতিহাস সংক্রান্ত ফলক খুলে ফেলা হয় জোর করে।

এ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য কমিটির নেতা তপন মাইতি বলছেন,"শাসক দলের স্থানীয় নেতারা বুঝতে পেরেছেন, দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের মাসির বাড়ি হিসেবে এই মন্দিরটিকে ব্যবহার করা হলে এটা তাঁদের আখের গোছানোর একটা রাস্তা হবে। তাই তৃণমূলের লোকজন প্রতিষ্ঠাতা এবং মন্দিরের ইতিহাসকে মুছে মন্দিরের দখল নিয়েছে।" যদিও অভিযোগ অস্বীকার করছেন শাসক দলের স্থানীয় নেতা বসন্ত কুমার জানা। তিনি বলছেন,"মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা আমাদের কাছে সবার আগে। মন্দির রঙ করতে গিয়ে পাথরের ফলকগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলি রাখা আছে। পরবর্তীকালে মন্দিরের গায়ে কোথাও লাগানো হবে।"

সমীর বলেন,"২০০৭ সালের ২১ মার্চ মন্দিরের সামনে সমুদ্রের ধারে সস্ত্রীক বসেছিলাম। হঠাৎ ঢেউয়ের মধ্যে কিছু ভেসে উঠতে দেখি। সে সময় কয়েকজন মৎস্যজীবী সেখানে ছিলেন। তাঁরা গিয়ে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার তিনটি মূর্তি উদ্ধার করেন। স্ত্রী উর্মিলার ইচ্ছায় নিজের অর্থে তার পর ওইমন্দির গড়েছি।" ২০২১ সালে বিধ্বংসী ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল গোটা দিঘা। কিন্তু সমুদ্রের একেবারে গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই মন্দিরে এতটুকু আঁচড় পড়েনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

digha jagannath temple TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE