খড়্গপুরের ইন্দার ওটি রোডের ধারে থাকা এক হুকাবার। নিজস্ব চিত্র।
রেস্তরাঁ সারাদিন ফাঁকা। রাত ৮টা বাজতেই বেড়ে যায় তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা। নীল-লাল আলো ঢাকতে শুরু করে হুকার ঝাঁঝালো সাদা ধোঁয়ায়। গত বছরের জানুয়ারিতে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে এমন হুকাশালা বন্ধ করেছিল প্রশাসন। তবে রেলশহর ফিরেছে পুরনো ছন্দে। রমরমিয়ে চলছে হুকাশালা!
দিন কয়েক আগেই কলকাতা পুর এলাকায় হুকাশালা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। একই পথে হেঁটেছে বিধাননগর ও শিলিগুড়ি পুরসভাও। একের পর এক হুকাশালা বন্ধে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। অথচ খড়্গপুর শহর জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হুকাশালা রমরমিয়ে চলছে। কোথাও প্রকাশ্যে আবার কোথাও রেস্তরাঁর আড়ালে গোপনে চলছে হুকাশালা। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “আমাদের শহরেও একাধিক হুকাশালা চলছে। আমারও মনে হচ্ছে এই হুকাশালা বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত। অন্য শহরগুলি যখন হুকাশালা বন্ধ করছে তখন আমরাও শহরে হুকাশালা বন্ধ করতে প্রশাসনকে অনুরোধ করব।”
শহরে এই মুহূর্তে ইন্দায় ওটি রোডের ধারে রয়েছে একাধিক হুকাশালা। এ ছাড়াও মালঞ্চ, ঝাপেটাপুরেও হুকাশালা চলছে বলে শহরবাসীর দাবি। অথচ হুকাশালা চালানোর কোনও বৈধ লাইসেন্স হয় না। কিন্তু শহর জুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে হুকাশালা। অনেক ক্ষেত্রে হুকার সঙ্গে মাদক মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। শহরে নেশামুক্তি নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা মৃন্ময় সাহা বলেন, “আমি মনে করি শহরে অবিলম্বে এমন হুকাশালা বন্ধ হওয়া উচিত।” যদিও হুকাশালা চালানো মালিকদের দাবি, হুকায় যে উপাদান ব্যবহার করা হয় তা সিগারেটের থেকে অনেক কম ক্ষতিকর। এমনকি এখন তামাক ও নিকোটিন ছাড়াও হুকা পাওয়া যায়। শহরের ইন্দায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রশাসনিক অভিযানে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একটি হুকাশালা। সেটি ফের চালু হয়েছে। ওই হুকাশালার মালিক তারিক আহমেদ বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে হুকাশালা চালাচ্ছি। হুকা তো বাড়িতেও বানানো যায়। আমরা কোনও ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করি না। আমার মনে হয় হুকায় ব্যবহৃত নিকোটিন সিগারেটের থেকেও কম ক্ষতিকর।” আবার ইন্দার নিউটাউনে জমজমাট এক হুকাবারের মালিক শিল্পী মুখোপাধ্যায় বলেন, “হুকার তো লাইসেন্স হয় না। আমাদের কাছে অনেক আগে থেকেই প্রশাসনিক অনুমতি রয়েছে। হুকা তৈরির সময় কোনও ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করি না।”
চিকিৎসকরা অবশ্য বলছেন, তামাকহীন হুকায় কার্বন মনোক্সাইডের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। সেগুলি শরীরে গেলে নানা দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। তা ছাড়া হুকায় ব্যবহৃত চিটেগুড় থেকে যে নিকোটিন বেরোয় তা থেকে হৃদরোগ, অন্ত্রের রোগ হতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, ২০১৭ সালের মে মাসে জারি করা কেন্দ্রীয় সরকারি নির্দেশিকায় হুকা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শহরবাসী চাইছে, বর্ষশেষের আগেই পদক্ষেপ করুক প্রশাসন। শহরের ইন্দার বাসিন্দা সমাজকর্মী প্রসেনজিৎ দে বলেন, ‘‘অন্য শহরে যদি হুকাবার বন্ধ হয় তবে খড়্গপুরে কীভাবে চলছে?” বিষয়টি নিয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক দিলীপ মিশ্র বলেন, “কলকাতা, বিধাননগর, শিলিগুড়িতে যখন হুকাবার বন্ধ হচ্ছে তখন আমরাও পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy