—প্রতীকী চিত্র।
জমি দুর্নীতিতে আগেও নাম জড়িয়েছিল। কাঁথি পুরসভার এক পুর পারিষদের বিরুদ্ধে ফের জমি প্রতারণার আরও দুটি অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’তে অভিযোগ জমা পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন গত জুনে জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন, তখন তাঁর দলের এক নেতার বিরুদ্ধে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’তে অভিযোগ জমা পড়ায় অস্বস্তিতে জেলা (কাঁথি) তৃণমূল।
অভিযোগের তির কাঁথির পুর পারিষদ অতনু গিরির দিকে। অভিযোগকারী সঞ্জীব বাগ আর পরিমল বাগ নামে দেশপ্রাণ ব্লকের নামালডিহা গ্রামের দুই বাসিন্দা। সঞ্জীবের বক্তব্য, ‘‘২০১৩ সালে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে কাঁথির দক্ষিণ দারুয়া মৌজায় জমি কেনার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। জায়গা দেখে পছন্দ হওয়ার পর তৃণমূলের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তৎকালীন ওই ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি অতনু গিরি ছাড়াও পুরসভার এক কর্মচারীর উপস্থিতি ছিলেন। সেখানে হওয়া কথা অনুযায়ী ২৩ ডেসিমাল জমি ২৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। আমার নামে রেকর্ড হয়ে যায়।’’ সঞ্জীবের দাবি, কয়েক বছর বাদে এক ব্যক্তি জমির প্রকৃত মালিক দাবি করে আইনি নোটিস পাঠায় তাঁকে। তখনই প্রতারিত হয়েছেন বলে বুঝতে পারেন। সঞ্জীবের অভিযোগ, ‘‘এরপর অতনু গিরি দলীয় কার্যালয়ে ডেকে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু সাত লক্ষ টাকা দেওয়ার পর বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করে। চাইতে গেলে দলীয় কার্যালয় আটকে রেখে মারধর করার চেষ্টা করেন।’’
আরেক ‘প্রতারিত’ পরিমল জানাচ্ছেন, তিনিও দক্ষিণ দারুয়া মৌজায় এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ৫ ডেসিমাল জমি কিনেছিলেন। তাঁকেও আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন জমির প্রকৃত মালিক দাবি করে এক ব্যক্তি। পরিমল বলেন, ‘‘এর পরে মধ্যস্থতা করার জন্য কাঁথি পুরসভার ডরমিটরি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অতনু গিরির উপস্থিতিতে ৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জমিটি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি রাজি হয়নি।’’ আপাতত বৃহস্পতিবার ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ হেল্পলাইনে অভিযোগ জানিয়েছেন দুই ‘প্রতারিত’।
কিন্তু কয়েক বছর আগে এই ঘটনা হলেও এখন অভিযোগ কেন? অভিযোগকারীদের দাবি, অতনু প্রভাবশালী। তাই আগে অভিযোগ করেননি। সম্প্রতি আশিস মাইতি নামে আরেক প্রতারিত লিখিত অভিযোগ কারার পরে সঞ্জীবরা অভিযোগ করেছেন বলে দাবি।
উল্লেখ্য, অতনু ২০২০ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২২ সালে তৃণমূলে ফেরেন। গত ১৬ মার্চই অতনুর বিরুদ্ধে জমি প্রতারণার একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে কাঁথি থানায়। আদালতের নির্দেশে অতনু-সহ পুরসভার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ধারা প্রয়োগ প্রয়োগ করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। গত সোমবার অতনু এবং অভিযোগকারী এক ব্যবসায়ীকে ডেকে পাঠানো হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাশাসকের দফতরে। এই পরিস্থিতিতে ফের জমি দুর্নীতিতেত অতনুর নাম জড়িয়েছে। যদিও অতনু বলছেন, ‘‘ওই দু’জনের কাউকেই চিনি না। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতার নির্দেশের পরে শাসকদলের নেতাদের ‘ঘনিষ্ঠ’ জমি মাফিয়ারা একের পর এক গ্রেফতার হয়েছে আড়িয়াদহ, দমদম থেকে। তা হলে অতনু কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন করছে বিজেপি। দলের জেলা (কাঁথি) সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলছেন, ‘‘লোকে জানে তৃণমূল মানে চোর। কাঁথি পুরসভা এলাকায় থাকার জন্য যাঁরা গ্রামীণ এলাকা থেকে গিয়েছেন, তাদের প্রতারিত করেছেন শাসকদলের পুর প্রতিনিধিরা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সব কিছু জেনেও প্রশাসন পদক্ষেপ করে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy