জলমগ্ন লঞ্চিং প্যাড আর নির্মীয়মান রেডার। —নিজস্ব চিত্র।
বিমানের মহড়া নিয়ে জুনপুট এবং সংলগ্ন এলাকায় গত কয়েক দিন ধরেই চিন্তা বাড়ছিল স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মধ্যে। মহড়ার জেরে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা নিয়েও আপত্তি ছিল তাঁদের। তবে বুধবার ওড়িশায় শুরু হওয়া ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশনে’র (ডিআরডিও) বিমান মহড়ার টের পেল না এ রাজ্যের উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর আর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। মৎস্যজীবীরা এ দিন প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারেননি। তবে কাঁথির জুনপুটে ওই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলছেই।
গত ১৬ জুলাই ডিআরডিও একটি নির্দেশিকায় জানায়, বুধবার থেকে আগামী ২৬ জুলাই পর্যন্ত বিমানের মহড়া চলবে। এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, এবং ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়া, বালেশ্বর এবং ভদ্রকের জেলাশাসককে জানানো হয়েছিল। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। এতে মৎস্যজীবীরা ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। জেলা মৎস্য দফতর অবশ্য জানাচ্ছে, এ দিন দিঘা, শঙ্করপুর, পেটুয়াঘাট-সহ কোন বন্দর থেকে ট্রলার সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়নি। আর তার কারণ, বিমানের মহড়া নয়, প্রতিকূল আবহাওয়া। সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুমন কুমার সাহা বলেন, ‘‘প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র উত্তাল। তাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আর ডিআরডিও-র বিমান মহড়া সম্পর্কে কোনও দফতর থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’’
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, ডিআরডিও-র তরফে ওড়িশায় বিমানের মহড়া চলবে বলে জানানো হয়েছে। তবে ভুলবশত পূর্ব মেদিনীপুর আর দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়ে জেলা প্রশাসন ধোঁয়াশায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। এমন পরিস্থিতিতে চাপা উত্তেজনা রয়েছে জুনপুটে। সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে কাঁথিতে এ দিন এসইউসি মিছিল করে। পরে তারা কাঁথির উপ-মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়। কর্মসূচিতে ছিলেন এসইউসি’র দক্ষিণ কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক অশোকতরু প্রধান, জেলা সম্পাদক মণ্ডলী সদস্য উৎপল প্রধান ও মানস প্রধান প্রমুখ।
আজ, বৃহস্পতিবার এলাকায় বড় মাপের প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছে ‘জুনপুট ভূমি রক্ষা কমিটি’। তারা প্রকল্প কেন্দ্র থেকে স্থানীয় বিচুনিয়া জগন্নাথ হাই স্কুল পর্যন্ত মশাল মিছিল আয়োজন করেছে। সে নিয়ে এ দিন চলেছে মাইকে প্রচার। স্থানীয়দের বিক্ষোভের আশঙ্কায় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এলাকায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ডিআরডিও। এদিন লঞ্চিং প্যাডে সর্বক্ষণের জন্য চারজন নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হয়। উপকূল রক্ষীর সদস্যরাও
এসেছেন এলাকায়।
এদিকে, খারাপ আবহাওয়ার জেরে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। পূর্ণিমার কটালের এই জলোচ্ছ্বাসে ডিআরডিওর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের লঞ্চিং প্যাড জলমগ্ন হয়েছে। দু’দিকে বাঁধ ভেঙে হুহু করে এ দিন জল ঢুকছে জুনপুট উপকূলবর্তী এলাকায়। তাতে উপকূল রক্ষী বাহিনীর নির্মীয়মান রেডারের একাংশো ডুবেছে। উপকূল রক্ষী সূত্রের খবর, রেডার তৈরির জন্য মজুত করা সিমেন্ট, বালি, লোহার রড আর ইট— সব কিছুই নোনা জলে ডুবে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy