চাষের জমিতে এভাবেই তৈরি হয়েছে ভেড়ি। নিজস্ব চিত্র
পূর্ব মেদিনীপুরে চাষের জমিতে ভেড়ি তৈরির অভিযোগ নতুন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভেড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে চাষিদের কাছ থেকে জোর করে জমি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি বেশি টাকার বিনিময়ে ভেড়ির মালিকদের হাতে চাষের জমি তুলে দেওয়া নিয়েও অভিযোগ উঠেছে চাষিদের একাংশের বিরুদ্ধে। সব ক্ষেত্রেই পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বার বার নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে।
জেলা জুড়ে ভেড়ির রমরমার বিরুদ্ধে এ বার পদক্ষেপ করল প্রশাসন। চাষের জমির চরিত্র বদল না করেই ভেড়ির মালিকদের হাতে জমি তুলে অভিযোগে চাষিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল পুলিশ। যা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন চাষিরা। বেআইনি ভাবে ভেড়ি তৈরির বিরুদ্ধে সরকারের এই পদক্ষেপ ভেড়ি মালিক ও চাষিদের প্রতি কঠোর বার্তা বলেই মনে করছেন সকলে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কোলাঘাট ব্লকের বৃন্দাবনচক পঞ্চায়েতের চাপদায় চাষের জমিতে ভেড়ি তৈরির অভিযোগে সোচ্চার হন চাষিরা। অনেকেই জমি দিতে রাজি ছিলেন না বলে দাবি। ভেড়ি হলে জল নিকাশির সমস্যায় মার খাবে কৃষিকাজ এই দাবিতে ভেড়ির বিরুদ্ধে এলাকার চাষিরা গড়ে তোলেন চাপদা মাছের ঝিল বিরোধী কৃষক সংগ্রাম কমিটি। কমিটির আন্দোলনের জেরে ধাক্কা খায় ভেড়ি তৈরি। গত ১৫ জানুয়ারি চাপদা মাছের ঝিল বিরোধী কৃষক সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অশোক নায়েকের ভাইয়ের হোসিয়ারি কারখানায় আগুন লাগে। অবৈধ ভেড়ি তৈরির সঙ্গে যুক্ত লোকজনই ঘটনার পিছনে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অশোকবাবু। এর পর এলাকায় ভেড়ি তৈরির বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। কমিটির তরফে কোলাঘাটের বিডিও, ভূমি-রাজস্ব দফতর, কৃষি দফতর, মহকুমা শাসক, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এলাকায় ভেড়ি হলে চাষের ক্ষতি ও কৃষিজমির ভারসাম্য নষ্ট হবে এই মর্মে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলার কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর তৎকালীন জেলাশাসক রশ্মি কমলকে আর্জি জানান। এর পর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে যায় ভেড়ি তৈরি।
কিন্তু প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে জমিদাতাদের কয়েকজন গত ১৩ জুন তমলুক আদালতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভেড়ি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির আবেদন জানান। আবেদন মঞ্জুরও হয়। কমিটির অভিযোগ ১৪৪ ধারার সুযোগ নিয়ে ভেড়ি এলাকায় মাটি কাটার কাজ শেষ করে ফেলে ভেড়ির মালিক। গত ২৪ জুন কমিটির সদস্যরা ফের প্রশাসনের সর্বস্তরে অভিযোগ জানিয়ে বিহিত চান। অভিযোগ পেয়ে ভূমি ও ভূমি-রাজস্ব দফতরের আধিকারিকদের একটি দল চাপদায় তদন্তে আসে। তাদের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে গত ১৫ জুলাই কোলাঘাটের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক মনোজ কুমার মাইতি পাঁশকুড়া থানার ওসিকে চিঠি লেখেন। তাতে বলা হয়, চাপদা এলাকার ৫৬ জন চাষি জমির চরিত্র বদল না করেই ভেড়ি তৈরিতে জমি দিয়েছেন ভেড়ি মালিকদের। ওই চাষিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। সেই মতো পাঁশকুড়া থানার পুলিশ ওই ৫৬ জন চাষির বিরুদ্ধে এফআইআর করে। ওসি অজিত কুঁয়ার ঝা বলেন, ‘‘ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের নির্দেশে জমি মালিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। শীঘ্রই জমি মালিকদের নোটিস পাঠানো হবে।’’
চাপদা গ্রামের সঞ্জয় সাহু বলেন, ‘‘আমার জমি দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু চারপাশে ভেড়ি হলে চাষের জমির ক্ষতি হবে এই ভেবে জমি দিয়েছিলাম। এখন শুনছি এফআইআর হয়েছে। কী করব বুঝতে পারছি না।’’
রাজ্য ভূমি-রাজস্ব দফতরের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অর্ধেন্দু মাইতি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় জমির চরিত্র বদল না করে ভেড়ি তৈরি করা হয়েছে। তাই উপযুক্ত তদন্ত করেই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’
চাপদা মাছের ঝিল বিরোধী কৃষক সংগ্রাম কমিটির আন্দোলনে প্রথম থেকেই সমর্থন জানিয়েছে কৃষক সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘চাষের জমি নষ্ট করে ভেড়ি তৈরির বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ায় আমরা খুশি। আমরা চাই ওই এলাকায় ভেড়ির মালিক মাটি ভরাট করে চাষের জমি ফিরিয়ে দিক। জেলায় অবৈধ ভেড়ির বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠুক প্রশাসন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy