নিয়মিত পরিষ্কার হয় না জঞ্জাল। মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে। নিজস্ব চিত্র।
জঞ্জালে জেরবার ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুর শহরগুলি। উপচে পড়ছে আবর্জনার ভ্যাট। তা ছড়াচ্ছে রাস্তায়।
অরণ্যশহর ঝাড়গ্রামের নোংরা-আবর্জনা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঝাড়গ্রামে এসে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, এত ছোট পুরসভা। তবু কেন পরিষ্কার করা যাচ্ছে না কেন? তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমাকে কি ঝাড়গ্রামে ঝাঁট দিতে আসতে হবে!’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও আবর্জনা সমস্যার সমাধান হয়নি ঝাড়গ্রামে।
ঝাড়গ্রাম শহরে ১৮টি ওয়ার্ডেই বাড়ি বাড়ি জঞ্জাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কোনও না কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় সেই আবর্জনা ফেলা হয়। পুরসভার সাফাই কর্মীরা সেখান থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করেন। ট্রাক্টরের মাধ্যমে ঝাড়গ্রাম শহরের উপকণ্ঠে শ্রীরামপুরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে যাচ্ছে সেই আবর্জনা। যদিও এই ব্যবস্থা অনিয়মিত। বিভিন্ন ওয়ার্ডেই আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে সমস্যা মিটছে না। ঝাড়গ্রাম পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, আবর্জনা সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে। সব ওয়ার্ডে ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প চালু হলে এই সমস্যা থাকবে না।
মেদিনীপুরের একাংশ শহরবাসীরও নালিশ, বিভিন্ন জায়গায় স্তূপ হয়ে জমে থাকছ আবর্জনা। আবর্জনা তোলার গাড়িগুলির নিয়মিত দেখা মেলে না। এই শহরে ডাম্পিং গ্রাউন্ড রয়েছে ধর্মায়। সব আবর্জনা শেষমেশ এখানে এনেই জমা করা হয়। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখন অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে বর্জ্যের পৃথকীকরণ হচ্ছে। মেদিনীপুর শহরের সব ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ হওয়ার কথা থাকলেও তা অবশ্য এখনও শুরু হয়নি। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ‘পাইলট’ প্রকল্প হিসেবে শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডে এই পরিষেবা শুরু হয়েছে। বাকি সব ওয়ার্ডেও হবে।
সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের কথায়, ‘‘শহরের প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে আবর্জনার অন্যতম। রাস্তার উপরেই তো আবর্জনা ছড়িয়ে থাকে। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাও বাড়ছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘শহরে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পটি কী ঠান্ডা ঘরে চলে গেল? শুধু শুনি। কিছু দেখতে পাই না তো!’’ মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খান অবশ্য বলছেন, ‘‘শহরকে আবর্জনা মুক্ত করার সব রকম চেষ্টা হচ্ছে। আবর্জনার সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। কিছু সমস্যা রয়েছে। সমাধানে দ্রুত চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
রেলশহর খড়্গপুরেও জঞ্জাল বড় সমস্যা। জানা গিয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ৮০ মেট্রিক টনের বেশি আবর্জনা তৈরি হয় খড়্গপুর পুর এলাকায়। এখানে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। বছর কয়েক আগে বর্জ্য ব্যবস্থাপন প্রকল্প চালু করতে খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার হিরাডিতে জমি নেওয়া হয়। সেই জমিতে আবর্জনা ফেলার পরে গ্রামবাসীদের বাধা আসে। মামলা গড়ায় পরিবেশ আদালতে। ওই জমিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি গড়ে পড়ে থাকা আবর্জনার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয় পুরসভা। তবে নতুন করে আবর্জনা ফেলায় বাধা আসে। পুরসভা কোথায় আবর্জনা ফেলবে ও বর্জ্য ব্যবস্থাপন প্রকল্প কোন জমিতে চালু করবে তা নিয়ে এখন ঘোর অনিশ্চয়তা। খড়্গপুরের পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে জমির আর্জি জানিয়েছি। আবর্জনা সংগ্রহের কাজ চলছে। আপাতত ব্যক্তিগত মালিকানার জমিতে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।”
ঘাটাল শহরেও সব ওয়ার্ডে পৌঁছায়নি নোংরা ফেলার গাড়ি। অলিতে-গলিতে ডাঁই হয়ে আবর্জনা জমা থাকে। শিলাবতী নদীর পাড়ও জঞ্জালে ঢেকেছে। শহরের হোটেল ও অনুষ্ঠান বাড়ির অব্যবহৃত জিনিসও ফেলা হচ্ছে নদীর পাড়ে। অস্থায়ী ভ্যাটগুলিও নিয়মিত সাফাই হয় না। একই ছবি ক্ষীরপাই, খড়ার, রামজীবনপুর ও চন্দ্রকোনা শহরেও। ঘাটালের পুরপ্রধান তুহিনকান্তি বেরার অবশ্য দাবি, “শহরকে পরিষ্কার রাখতে পুরসভা সচেষ্ট। গোটা শহর নিয়ম করে সাফাই করা হয়।”
(রঞ্জন পাল, কিংশুক গুপ্ত, বরুণ দে, অভিজিৎ চক্রবর্তী, দেবমাল্য বাগচী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy