Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
CHatradhar Mahato

অরাজনৈতিক সভায় ছত্রধর, হাজির পুরনো সঙ্গীরা

সেই ছত্রধরই ক’দিন আগে পুরনো সঙ্গীসাথীদের নিয়ে লালগড়ে এক অরাজনৈতিক সভা করেছেন। আর তাতেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা।

ছত্রধর মাহাতো।

ছত্রধর মাহাতো।

কিংশুক গুপ্ত
লালগড় শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২০ ০১:৫৪
Share: Save:

এক সময় জঙ্গলমহলে অরাজনৈতিক সংগঠনেরই পুরোভাগে ছিলেন তিনি। মাওবাদী পর্বে ‘জনসাধারণের কমিটি’র সেই মুখপাত্র ছত্রধর মাহাতো সম্প্রতি তৃণমূল রাজ্য সম্পাদকের পদ পেয়েছেন। সেই ছত্রধরই ক’দিন আগে পুরনো সঙ্গীসাথীদের নিয়ে লালগড়ে এক অরাজনৈতিক সভা করেছেন। আর তাতেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা।

গত ২৪ অগস্ট লালগড় ব্লকের সিজুয়া অঞ্চলের বনপুকুরিয়া হাইস্কুলের ওই সভায় তৃণমূলের লালগড় ব্লক বা জেলাস্তরেরও কেউ ডাক পাননি। তবে সভায় যোগ দেওয়ার জন্য লালগড় ও পাশের পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি ব্লকের গ্রামে-গ্রামে হাতে লেখা আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল। সভাটি ডেকেছিলেন জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা সুখশান্তি বাস্কে। লালগড়ের বাঁশবেড় গ্রামের বাসিন্দা সুখশান্তিও জেলমুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। সভার আমন্ত্রণপত্রে ছত্রধরকে ‘জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্র, আধুনিক জঙ্গলমহলের রূপকার, জঙ্গলমহলের মুক্তিসূর্য লড়াকু জননেতা’ বিশেষণ দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন সুখশান্তি। পাশাপাশি সাংগঠনিক আলোচনার কথাও বলা হয়েছিল।

ছত্রধর মানছেন, গত ২৪ অগস্ট অরাজনৈতিক ওই সভায় তিনি ছিলেন। এ-ও জানাচ্ছেন, আয়োজকেরা সকলেই একসময়ে জনসাধারণ কমিটির সদস্য ছিলেন। মাওবাদী পর্বে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত সুখশান্তি বাস্কে, রাজু হাঁসদা, করণ হেমব্রমের মতো অনেকেই সভায় ছিলেন। তবে তাঁর দাবি, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে যাঁরা বিজেপি-র পক্ষে ছিলেন, তাঁদের ওই সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেন। ছত্রধরের কথায়, ‘‘অরাজনৈতিক সভায় আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উদ্যোক্তারা দাবি করেন, তাঁদের সামনে এতদিন কোনও নেতা ছিলেন না বলে তাঁরা বিরোধী অবস্থানে ছিলেন। আমি এলাকায় ফিরে আসায় তাঁরা এখন আমার নেতৃত্বে চলবেন।’’ এঁদের পরে পঞ্চায়েতস্তরের জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তৃণমূলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও ছত্রধর জানিয়েছেন। ছত্রধর আরও জানান, গুলিতে নিহত গোপীনাথ সরেন, রাজারাম মুর্মু ও লখিন্দর মুর্মুর বাড়িতে গিয়েও দেখা করেছেন তিনি। ওই তিন জনের পরিবারের পাশাপাশি, জনসাধারণের কমিটির সভাপতি লালমোহন টুডুর ছোট ছেলে ভূপতি, ছোটপেলিয়ার ছিতামণি মুর্মুর ছেলে পুলিনের চাকরিও ব্যবস্থা হয়েছে তাঁরই উদ্যোগে।

বস্তুত, জেলমুক্ত হয়ে এলাকায় ফেরার পরে ছত্রধর গোড়ায় তৃণমূলকে এড়িয়ে নিজের মতো করেই জনসংযোগ করছিলেন। ক্রমে তৃণমূলের কর্মসূচিতে যাওয়া শুরু করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছত্রধরকে রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার পরে তৃণমূলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু, জেলা চেয়ারম্যান বিরবাহা সরেনের সঙ্গে ছত্রধরকেও দেখা যাচ্ছে। তবে দল সূত্রে খবর, জেলার রাজনীতিতে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে সম্প্রতি দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ করেছিলেন ছত্রধর। তারপর ৯ অগস্ট ঝাড়গ্রামে দলীয় বৈঠকে পার্থ জেলার নেতা-নেত্রীদের জানিয়ে দেন, জেলাস্তরে দলের সংগঠনিক সভা, বৈঠকে ছত্রধরকে ডাকতে হবে। সূত্রের খবর, তারপরেও ছত্রধরকে জেলা ও ব্লক নেতৃত্বের একাংশ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় কর্মসূচিতে তিনি ডাক পাচ্ছেন না।

ইতিমধ্যে ১১ বছরের পুরনো দু’টি মামলায় ছত্রধরের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে এনআইএ। এ নিয়ে ভিডিয়ো বার্তায় সম্প্রতি বিজেপি ও কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে তোপও দাগেন ছত্রধর। তৃণমূল অবশ্য এখনও এনআইএ প্রসঙ্গে নীরব। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, ঘরে-বাইরে জোড়া চাপের এই পরিস্থিতিতে দলকে বার্তা দিতেই অরাজনৈতিক সভা করেছেন জনসাধারণের কমিটির এই নেতা।

পুরনো সঙ্গীদের সঙ্গে ছত্রধরের এমন আলোচনা স্বাভাবিক বলেই মত বিজেপি-র। দলের জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর কটাক্ষ, ‘‘আসন্ন বিধানসভা ভোটে সন্ত্রাস করে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যেই ছত্রধরকে রাজ্য সম্পাদক করেছে তৃণমূল। ছত্রধর এলাকায় ফিরে প্রাক্তন মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করছেন। এটাই তো তৃণমূলের কাছে ছত্রধরের প্রত্যাশিত ভূমিকা!’’ তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মুর বক্তব্য, ‘‘ছত্রধরবাবু রাজ্য নেতা। উনি সংগঠন ভাল বোঝেন। দলের শ্রীবৃদ্ধিতে উনি নিশ্চয়ই উপযুক্ত পদক্ষেপ করছেন।’’

ছত্রধরও স্পষ্টই বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে তৃণমূলকে সমৃদ্ধিশালী করতে গেলে আমাকে যদি অরাজনৈতিক ভাবে আলোচনায় বসতে হয়, সেটা আমি করব, কারণ এঁরা সব আমারই অনুগত লোকজন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chatradhar Mahato Lalgarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy