Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
হাতিয়ার আপত্তিকর ছবি

সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্ল্যাকমেল

কেন বার বার এমনটা হচ্ছে? চাইল্ড লাইন এবং জেলা পুলিশের একাংশের মতে, সকলের কাছে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের পৌঁছে যাওয়ার ফলে সব কিছুই অনেক খোলামেলা হয়ে গিয়েছে। বদলে যাচ্ছে সামাজিক বিভিন্ন ধারণাও।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল     শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
Share: Save:

‘রং নাম্বার’ থেকে আলাপ। আলাপ থেকে প্রেম। এক দিন প্রেমিকের আবদার মেনে তাকে নিজের আপত্তিকর ছবি পাঠায় নাবালিকা ছাত্রী। এর পরেই বাধে গোলমাল। চন্দ্রকোনা থানায় ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ওই ছবি দিয়েই ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে প্রেমিক। তাতেও ‘কাজ’ না হওয়ায় সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় সে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদানীং এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। কিছু দিন আগেই কলকাতার কালিন্দি এলাকার এক ছাত্রীকে জন্মদিনে ডেকে ধর্ষণ করে সেই ভিডিও তুলে রেখে ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ উঠেছিল সহপাঠীদের বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন থানাতেও এই অভিযোগ উঠেছে আগেও। চন্দ্রকোনার ঘটনা সেই তালিকার সংযোজন মাত্র।

কেন বার বার এমনটা হচ্ছে? চাইল্ড লাইন এবং জেলা পুলিশের একাংশের মতে, সকলের কাছে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের পৌঁছে যাওয়ার ফলে সব কিছুই অনেক খোলামেলা হয়ে গিয়েছে। বদলে যাচ্ছে সামাজিক বিভিন্ন ধারণাও।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে খবর, মাস পাঁচেক আগে ঘাটাল থানার বরদা চৌকান এলাকার এক সোনার কারিগরের সঙ্গে চন্দ্রকোনার ওই ছাত্রীর ফোনে আলাপ হয়। তৈরি হয় ঘনিষ্ঠতা। স্থানীয় এক যুবকের সাহায্যে মেয়েটির বাড়ি যায় অভিযুক্ত। কিছু দিন আগে প্রেমিকের আবদার মেনে মেয়েটি তার আপত্তিকর ছবিটি পাঠায়। মেয়ের পরিবারের এক সদস্যের কথায়, “ওই ছবি পাঠানোর পরই অন্যায় দাবি করতে শুরু করে অভিযুক্ত। মোবাইলে ওই ছবি দেখার পরই থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” ঘটনার কথা জানতে পেরে চাইল্ড লাইনের মেয়েটির সঙ্গে দেখা করে সদস্যেরাও। পুলিশ জানায়, অভিযোগ পেয়েই মামলা শুরু করা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবক ও তার বন্ধুর সন্ধানে তল্লাশি চলছে।

কী করবেন

কী করবেন না

এই প্রবণতা ঠেকাতে এ বার স্কুলে স্কুলে প্রচার এবং প্রয়োজনে অভিভাবকদেরও কাউন্সিলংয়ের ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছে চাইল্ড লাইন। এমনিতে মাঝেমধ্যে এই ধরনের অপরাধ বন্ধে সচেতনতা শিবির করে থাকে জেলা পুলিশ। এ বার তা আরও বেশি করা হবে বলে জানা গিয়েছে। ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিবেক বর্মার কথায়, “জনবহুল এলাকায় সচেতনতা শিবির ও সাইবার ক্রাইম নিয়ে আলোচনা হয়। ক্ষতিকর বিষয়গুলিকেই আমরা তুলে ধরি। এমন ঘটনা লুকিয়ে না রেখে সঙ্গে সঙ্গে থানায় যোগাযোগ করার কথাও জানানো হচ্ছে।” চাইল্ড জেলা কো-অর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্ত বলেন, “অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বয়ঃসন্ধির সময়ে যৌনতা নিয়ে নানা ভয়, সংশয়, উত্তেজনা থাকে। সেই থেকে সাময়িক বিচ্যুতিও দেখা যেতে পারে। চন্দ্রকোনার ঘটনাটিও তেমন কিছু বলেই মনে হচ্ছে। এর একমাত্র দাওয়াই সচেতনতা।” তবে মনোবিদরা মনে করিয়ে দেন, শুধু অভিযোগ দায়ের না করে এই সময়ে মেয়েটির পাশে থাকা জরুরি। না হলে এই ঘটনার অভিঘাত মেয়েটির মনে স্থায়ী ছাপ ফেলতে পারে।

জানা গিয়েছে, ইদানিং এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। অভিযোগ না হওয়ায় তার অনেক ঘটনাই জানতে পারছে না পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘাটাল মহকুমার তিনটি থানা থেকে মাসে তিন-চারটি করে সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ আসছে। তার মধ্যে অধিকাংশই হল সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর ছবি আপলোড, আপত্তিকর মন্তব্য, ফটোশপে কারিকুরি করে ছবি পাল্টে দেওয়া। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধানের কথায়, “দিন দিন পাল্টাচ্ছে অপরাধের ধরন। তাতেই আমরা উদ্বিগ্ন।”

অন্য বিষয়গুলি:

সোশ্যাল মিডিয়া Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy