Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Black Market on Fertilizer

কালো-সারে কঙ্কালসার চাষি

সব ফসল উৎপাদন করতেই সারের প্রয়োজন হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে মূলত ধান ও আলুর ফলনই বেশি। এই দুই ফসলের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত সারের নাম দশ ছাব্বিশ ছাব্বিশ।

চন্দ্রকোনায় বেশি দাম দিয়ে সার কিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাঠে । ছবি: কৌশিক সাঁতরা

চন্দ্রকোনায় বেশি দাম দিয়ে সার কিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাঠে । ছবি: কৌশিক সাঁতরা

অভিজিৎ চক্রবর্তী
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৪৬
Share: Save:

সার কোম্পানি বলছে, কোথাও কোনও সমস্যা নেই। ডিলারদের বক্তব্য, চাহিদা অনুযায়ী জোগান নেই। খুচরো বিক্রেতারও একমত। সঙ্গে সংযোজন, বেশি দামে সংগ্রহ করতে হচ্ছে সার। এই বেশি দাম কখনও হচ্ছে দ্বিগুণ। কখনওবা তার বেশি। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম— দু’জেলার ছবিটা মোটের উপর এক।

সব ফসল উৎপাদন করতেই সারের প্রয়োজন হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে মূলত ধান ও আলুর ফলনই বেশি। এই দুই ফসলের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত সারের নাম দশ ছাব্বিশ ছাব্বিশ। ওই সারে নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশ একত্রে থাকে। এই সারের চাহিদা বাড়ছে ক্রমশ। বাড়ছে কালোবাজারিও। এক বস্তাতে থাকে ৫০ কিলোগ্রাম দশ ছাব্বিশ ছাব্বিশ সার। এক বস্তার বাজারমূল্য ১৪৭০ টাকা। কিন্তু বহু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই সার। ঝাড়গ্রামের কিছু জায়গায় দর গিয়ে পৌঁছেছে ২ হাজার টাকায়। ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া পাওয়া যাচ্ছে না পটাশ। জানা গিয়েছে, ৪৫ কেজি শক্তিমান ইউরিয়া সারের দাম ২৬৬ টাকা ৫০ পয়সা। বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায়। গ্রোমর (২৮:২৮:০) সারের নির্ধারিত দাম ১৭০০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকা। গড়বেতার কয়েকজন চাষি বলছেন, ‘‘ধান কাটার পর জলদি আলু লাগাচ্ছি। ১০: ২৬ : ২৬ সার দিলে আর কোনও সার নিয়ে ভাবতে হয় না। তাই এই সারেই ভরসা রাখতে হয়। দাম বেশি দিয়েও কিনতে হচ্ছে।’’

সারের দামে সরকারের সরাসরি কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। তবু ইচ্ছে মতো দাম বাড়াতেও পারে না সার উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি। কারণ, সরকার যেহেতেু কোম্পানিগুলিকে ভর্তুকি দেয় তাই দামের ক্ষেত্রে পরোক্ষ একটা ‘চাপ’ থাকে। সার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জানালেন, “পুরো ব্যবস্থার মধ্যেই কালোবাজারির বীজ লুকিয়ে রয়েছে। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। যদি সত্যিই সঙ্কট থাকে, তা হলে উৎপাদন বাড়াচ্ছে না কেন সংস্থাগুলি। সরকার জেনেবুঝেও চুপ। আসলে কালোবাজারির উৎস অনেক গভীরে। সেই অদৃশ্য শক্তির তল খুঁজে পান না চাষিরা।”

কোম্পানি থেকে হোলসেলার, তারপর খুচরো বিক্রেতাদের মাধ্যমে সার পান চাষিরা। সার প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির বক্তব্য, কোথাও কোনও সমস্যা নেই। সার ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোম্পানিগুলি পর্যাপ্ত উৎপাদন করছে না। যদিও এক সার প্রস্তুতকারক সংস্থার আধিকারিক মনোজ জয়সওয়াল বলেন, ‘‘ডিলাররা কোম্পানির ঘর থেকে নির্দিষ্ট মার্জিন বাদ দিয়েই সার কেনেন। কেন কোথায় বেশি নেওয়া হচ্ছে তা আমরা বলতে পারব না।’’ অন্য এক সার প্রস্তুতকারী সংস্থার আধিকারিক বললেন, ‘‘সার তৈরির কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ছে। তা সত্ত্বেও দাম বাড়েনি। কালোবাজারির গল্প আমাদের জানা নেই।’’

সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম কৃষি সহায়ক ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি বাণীব্রত দাস বলেন, ‘‘সারের কোনও সমস্যা নেই। কিছু ক্ষেত্রে সারের বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। এটা বেআইনি।’’ বাণীব্রতের দাবি, পরিবহণ খরচ বেড়েছে বলেই অনেকে বেশি দাম নিচ্ছেন। ঘাটালের এক খুচরো সার বিক্রেতা অবশ্য জানালেন, চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছেন না তাঁরা। তাই অনেক সময় বেশি টাকা দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। ওই সার বিক্রেতার কথায়, ‘‘চাষিদের কাছ থেকে বেশি টাকা আমরাও নিতে চাইছি না। বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে। কেন এই বাড়তি টাকা, প্রশাসন নজরদারি করলেই বুঝতে পারবে।’’

সারের কালোবাজারি প্রশাসন যে পদক্ষেপ করে না এমনটা নয়। অভিযান হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাতিলের মতো কড়া পদক্ষেপও হয়। কিন্তু তারপর ফের শুরু হয় কালোবাজারি। ঝাড়গ্রাম জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) দীপক কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিটি ইন্সপেক্টরকে বলে দেওয়া হয়েছে গন্ডগোল থাকলেই প্রথমে শোকজ করতে। প্রয়োজনে আমরা লাইসেন্স বাতিল করে দেব।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষি দফতর অবশ্য কালোবাজারির কথা মানতেই রাজি নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, জেলায় সার নিয়ে আর কোনও সমস্যা নেই। দফতরের কর্মী আধিকারিকরা দোকানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সার বিক্রি করছেন। সারের কোনও সংকটও নেই।’’ (চলবে) (তথ্য সহায়তা: রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, রঞ্জন পাল)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore Fertilizer black market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE