ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া রাম মন্দিরের বিগ্রহ। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী বছরের লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে ঝাড়গ্রাম জেলায় সাংগঠনিক বৈঠক শুরু করেছে বিজেপি। বৈঠকে গুরুত্ব পাচ্ছেন ‘পুরুষোত্তম রামচন্দ্র’। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট আকারে থাকা রাম মন্দিরগুলিকে প্রচারে আনাটাও কর্মসূচির অঙ্গ করতে সওয়াল শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে।
আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে অযোধ্যায় রাম মন্দিরে আনুষ্ঠানিক ভাবে রামলালার (শিশু রাম) বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হতে পারে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২২ থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে যে কোনও একটা দিন অযোধ্যার অস্থায়ী মন্দির থেকে রামলালার বিগ্রহকে স্থায়ী মন্দিরে নিয়ে যাবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটের আগে যাকে ‘যুগ সন্ধিক্ষণ’ বলে ব্যাখ্যা করছেন গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। আদিবাসী মূলবাসী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে রামলালাকে নিয়ে আমজনতার মধ্যে তেমন উন্মাদনার টের কি পাওয়া যাচ্ছে! সূত্রের খবর, আরএসএস এবং সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে ঝাড়গ্রাম জেলার ৫ লক্ষ পরিবার অযোধ্যার রাম মন্দির তৈরির জন্য অর্থ সাহায্য দিয়েছে। স্থায়ী মন্দিরে রামলালার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পর আগামী বছরের মে মাস থেকে যাতে জেলার মানুষজন মন্দির দর্শনে যান সে জন্য সঙ্ঘের তরফে জেলার ৫ লক্ষ পরিবারের কাছে আমন্ত্রণপত্র তুলে দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে জেলায় জাতিগত সমীকরণ ও ভোট অঙ্কের কথা মাথায় রেখে বিজেপিও রাম মন্দিরকে সূক্ষ্মভাবে প্রচারে আনতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। ধর্মের ভাবাবেগ নয়, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘তোষণ নীতি’র মোকাবিলায় অঞ্চল ভিত্তিতে যে সব এলাকায় পুরুষোত্তম রামের আবেগ কার্যকরী হতে পারে, চলছে সেই চুলচেরা বিশ্লেষণ। গেরুয়া শিবিরের পর্যবেক্ষণ, এই জেলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ থাকলেও তাঁদের একাংশ বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। তার উপর গোপীবল্লভপুর এলাকাটি বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম আদিপীঠস্থান। ২০১৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে গোপীবল্লভপুর-১ ও সাঁকরাইল ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলার বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির জয়জয়কার হয়েছিল। পরে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও জেলার হিন্দুবলয় থেকে ভাল ভোট পেয়েছিল বিজেপি। যদিও সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং গোষ্ঠী ও উপগোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে পরে গেরুয়া রাশ ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ২০২১-এর বিধানসভা এবং এ বছর পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের দাপটে কার্যত কোণঠাসা গেরুয়া শিবির। তবে বিজেপি নেতাদের দাবি, আগামী বছর কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরদারিতে লোকসভা ভোট হলে হিসেব নিকেশ ওল্টাতে বাধ্য।
সূত্রের খবর, বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা পর্যবেক্ষক সুজিত অগস্তি সোমবার ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির কার্যালয়ে এসে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সম্পাদক সোনালি মুর্মু, জেলা সভাপতি তুফান মাহাতো জেলা সহ সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু সহ জেলার অন্যান্য নেতা-নেত্রীরা। রামলালার প্রতিষ্ঠার দিনে জেলার প্রতি বাড়িতে পাঁচটি করে প্রদীপ জ্বালানোর বিষয়টি সুনিশ্চিত করার জন্য ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা এলাকার ৩২টি মণ্ডলের কার্যকর্তারা উদ্যোগী হবেন। সুজিত অগস্তী বলছেন, ‘‘হিন্দুত্ব জাগরণের জন্য সেদিন বাড়ি-বাড়ি প্রদীপ জ্বালানোর জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে আবেদন রাখা হচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডলের অন্তর্গত শক্তিকেন্দ্র গুলির প্রমুখরা এ বিষয়টি দায়িত্ব নিয়ে দেখবেন। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের দুর্নীতি ও তোষণ নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলায় ব্লক ভিত্তিক একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, ৭-১০ নভেম্বরের মধ্যে ওই কর্মসূচি হবে। ২৯ নভেম্বর কলকাতায় বিজেপির সমাবেশে ঝাড়গ্রাম জেলা থেকেও বিপুল সংখ্যক লোকজন যাতে যোগ দেন সে ব্যাপারে জেলা কার্যালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুজিত বলছেন, ‘‘জেলায় ছোট ছোট যে সব রাম মন্দির রয়েছে, সেগুলির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা রেখে দলের কার্যকর্তারা পাশে থাকবেন।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy