চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি নেতাই শহিদ বেদিতে। ফাইল চিত্র।
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পদ্ম-পতাকায় মুখ ঢেকেছে নেতাই। সোমবার নেতাই গ্রামে বড় সড় মিছিলও করেছে বিজেপি। এই আবহে আগামী জানুয়ারিতে ‘নেতাই দিবসে’র শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানের রাশ এ বার নিজেদের দখলে রাখতে চায় তৃণমূল।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নেতাইয়ের শহিদ স্মরণে তৃণমূলের শীর্ষস্তরের কেউ হাজির থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে শোনা যাচ্ছে। যদিও আগামী ৭ জানুয়ারি নেতাই দিবসের দিনে বিভিন্ন দাবির ভিত্তিতে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় বন্ধের ডাক দিয়েছে কুড়মি সমন্বয় মঞ্চ। তবে সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে শুভেন্দুর আপ্ত সহায়কের পক্ষ থেকে নেতাইবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা জানানো হয়েছে, শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানে ‘দাদা’ আসবেন। এমন টানাপড়েনে উভয় সঙ্কটে পড়েছেন নেতাইবাসী। নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘এক দিকে শুভেন্দুদা, অন্য দিকে রাজ্যের ক্ষমতাসীন শাসকদল। আমরা যে কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’’ তবে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি শুভেন্দু অনুগামী সদ্য বিজেপিতে যাওয়া নেতাই গ্রামের তন্ময় রায়।
নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর ৭ জানুয়ারি নেতাই শহিদবেদি স্থলে শহিদ-স্মরণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন শুভেন্দু। ২০১২ সাল থেকে কয়েক বছর ধরে এই অনুষ্ঠানে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে দলীয় কর্মীরা যোগ দিতেন। পরে অবশ্য অরাজনৈতিক ভাবেই কমিটির উদ্যোগে শহিদ স্মরণ হয়েছে।
লালগড় ব্লক সদরের অদূরে কংসাবতীর তীরে নেতাই গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তৃণমূলের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের ইতিহাস। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএমের শিবির থেকে গ্রামবাসীদের লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। মৃত্যু হয় চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসীর। আহত হন ২৯ জন। সে সময় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। রাজনৈতিক মহলের মতে, নেতাইয়ের ঘটনাকে হাতিয়ার করে ২০১১-র বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলে বামেদের লালমাটি ধুয়ে ঘাসফুল ফুটেছিল। ওই সময় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সাবেক সেনাপতি’ শুভেন্দুই নেতাইয়ের পাশে বরাবর রয়েছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। মৃতদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে শুভেন্দুর উদ্যোগেই। আহতদেরও কয়েকজন চাকরি পেয়েছেন। নেতাই দিবসে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যও করেন শুভেন্দু। নেতাইয়ের শহিদ বেদিটিও তৈরি হয়েছে শুভেন্দুর নিজস্ব আর্থিক সহযোগিতায়। তবে রাজ্য সরকারও মৃতদের পরিবারগুলিকে গোড়ায় এককালীন অর্থ সাহায্য করেছিল।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি নেতাই দিবসের অনুষ্ঠানে এসে আলাদা করে স্থানীয় কমিউনিটি হলে গ্রামবাসীর ক্ষোভের কথা শুনেছিলেন শুভেন্দু। এখনও গ্রামের অনেকে সরকারি প্রকল্পের বাড়ি পাননি। দরিদ্র পরিবারগুলির কেউ কেউ সরকারি স্বনির্ভর প্রকল্পের সুযোগও পাননি। গত অক্টোবরে শুভেন্দু ফের নেতাইয়ে এসে ৫৩ জন মহিলাকে সেলাই মেশিন দেন। শুভেন্দুর উদ্যোগে সতীশ সামন্ত ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট থেকে নেতাইয়ের ১৭টি পরিবারকে বাড়িও করে দেওয়া হয়।
এই পরিস্থিতিতে নেতাইবাসী কার দিকে, সেই টানাপড়েন শুরু হয়েছে। তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌলতেই নেতাইবাসী বাম-সন্ত্রাস থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। নেতাইয়ের পাশে দিদি বরাবর রয়েছেন। নেতাইবাসী সে সব ভুলে যাননি। নেতাইয়ের শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান একক ভাবে কারও নয়। শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানের রূপরেখা দলের তরফে স্থির করা হবে।’’
নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথ পন্ডা বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবুই বরাবর নেতাই দিবসে আসেন। গ্রামে তাঁর যথেষ্ট অবদান আছে। তিনি এ বারও আসবেন বলে খবর। তৃণমূলের তরফে এখনও কেউ যোগাযোগ করেননি। করলে পরিস্থিতি অনুযায়ী আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy