চণ্ডীপুরের সভা তেকে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে শুভেন্দুর বার্তা, এ বারের পঞ্চায়েত ভোট হবে তাঁদের জন্য মরণ বাঁচন লড়াই। ছবি: সংগৃহীত।
‘নন্দীগ্রাম দিবস’-এ দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য পঞ্চায়েত ভোটের সুর বেঁধে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর থেকে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়কের বার্তা, ‘‘আগামী পঞ্চায়েত ভোট বিজেপি নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের জন্য ‘ডু অর ডাই’ (মরণ-বাঁচন) লড়াই। প্রতিরোধ করতেই হবে।’’
এমনকি, স্বচ্ছ এবং অবাধ ভোট না হলে ঠিক কী করতে হবে, সেটাও কর্মীদের বাতলে দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু বলেন, ‘‘এই জেলা থেকেই সব পরিবর্তনের সূচনা হয়। বামপন্থীদের আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, গীতা মুখোপাধ্যায়, সুকুমার সেনদের নেতৃত্বে এই জেলার আন্দোলন জমিদার ও বুর্জোয়াদের রুখে দিয়েছিল। এই জেলাতেই নন্দীগ্রাম আন্দোলন করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেমন বার্লিন ছিল এপিসেন্টার, ২০১১ সালের পরিবর্তনের এপিসেন্টার নন্দীগ্রাম। বামফ্রন্ট পরাস্ত হয়েছিল।’’ শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে একমাত্র এই জেলাই (পূর্ব মেদিনীপুর) বিশ্বাস করে তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূলের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল। সে বিশ্বাস তারা রক্ষা করতে পারেনি। তাই ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে শপথ নিন, এই জেলা পরিষদ বিজেপিকে উপহার দেবেন। আর তমলুক এবং কাঁথি লোকসভা (২০২৪ সালে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজিকে উপহার দেবেন।’’
বিজেপি বিধায়কের দাবি, এ বার অবাধ ভোট করতেই হবে। বলেন, ‘‘ডু অর ডাই। এ বার হবে প্রতিরোধ। যদি ভোট দিতে না দেয়, তবে তোমারও নাই, আমারও নাই। ব্যালট বাক্স ধরব আর পুকুরে ফেলব। জোট বাঁধুন, তৈরি হন।’’
শনিবার যে পঞ্চায়েত ভোটের কথা উল্লেখ করে তৃণমূলকে নিশানা করলেন শুভেন্দু, সেই সময়ে তিনি নিজেও ওই দলে ছিলেন। অন্য দিকে, রাজ্যের শাসক দলের তরফে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যত বার ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু করার জন্য তাঁর দলের নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছেন, তত বার তাঁকে কটাক্ষ শানিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি টেনে এনেছেন সম্প্রতি জেলায় জেলায় বিস্ফোরক উদ্ধার এবং বোমা ফেটে নিহতের ঘটনার কথা। দাবি করেছেন, শাসক শিবির যে সুষ্ঠু ভোটের কথা বলছেন, সেটা নিছক ‘আইওয়াশ’। শনিবার শুভেন্দু বলেন, ‘‘কেষ্ট মণ্ডল (বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল) বলত, ‘চড়াম চড়াম’, ‘গুড় বাতাসা’। এখন কী হচ্ছে? তিহাড় জেলের দরজাটা একটু ফাঁক হয়েছে। তার পরে আছেন রুজিরা, তার পরে আছেন ভাইপো। গোটাটাই চোরের রাজত্ব। তৃণমূলের সবাই চোর। তাই ভয় পাবেন না। পঞ্চায়েত ভোট অবাধ করতে গেলে প্রতিরোধ করতে হবে।’’
শুভেন্দুর অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিরোধীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে শাসক দল। পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। তবে যে নন্দীগ্রাম আন্দোলন দিয়ে তৃণমূল রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের পায়ের জমি শক্ত করেছিল, সেই ‘নন্দীগ্রাম দিবস’-এ বিজেপি কর্মীদের জোট বাঁধতে বললেন শুভেন্দু।
১৬ বছর আগে ২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারির সকালে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া পঞ্চায়েতের ভাঙাভেড়া ব্রিজের কাছে প্রথম বার জমি আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালনার অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন শাসক দল সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনির বিরুদ্ধে। গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ভরত মণ্ডল, বিশ্বজিৎ মাইতি এবং শেখ সেলিম। তার পর প্রতি বছর এই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করছে ‘নন্দীগ্রাম ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর জমি আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই ওই দলে যোগ দেন। শুভেন্দুর নেতৃত্বে সোনাচূড়ায় তৈরি হয় শহিদ মিনার। এখন সেই ‘দিবস’ ঘিরে দড়ি টানাটানি করছে তৃণমূল এবং বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy