সোমবার বিকেলে মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান স্থল ছিল ফাঁকা। নিজস্ব চিত্র
জট কাটতে বিকেল গড়িয়েছে। সোমবার দিনভর তাই মেদিনীপুর মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির প্রভাব ছিল। আর ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর ডাকা চিকিৎসা বন্ধের মিশ্র প্রভাব পড়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের অন্য হাসপাতালগুলিতে।
জুনিয়র ডাক্তারদের গত প্রায় এক সপ্তাহের কর্মবিরতির জেরে রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবারও দিনের একটা বড় সময় হাসপাতাল চত্বরে তেমন ভিড় ছিল না। ওয়ার্ডগুলোতেও রোগীদেরও তেমন ভিড় দেখা যায়নি। এ দিন সকালে জুনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান করেছেন। তবে জরুরি বিভাগ খোলা ছিল। খোলা ছিল হাসপাতালের বহির্বিভাগগুলোও। তবে সব বিভাগ সমান সচল ছিল না। চিকিৎসক না আসায় কয়েকটি বহির্বিভাগে পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। তবে অন্তর্বিভাগগুলো স্বাভাবিক ছিল। সেখানে সিনিয়র চিকিৎসকেরা গিয়েছেন। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, ‘‘সোমবারও হাসপাতালের পরিষেবা সচল রাখার সব রকম চেষ্টা হয়েছে।’’ আন্দোলন চলাকালীন মেডিক্যাল কলেজের ২৬ জন চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। তবে জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসকদের ইস্তফা গৃহীত হয়নি। এঁদের অনেকে সোমবার কাজও করেছেন।
এ দিন দেশজুড়ে জরুরি পরিষেবা বাদে সব ‘নন এসেনশিয়াল’ বিভাগ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছিল আইএমএ। একাংশ চিকিৎসক তাতে সমর্থন জানালেও চিকিৎসা বন্ধের প্রভাব পড়েনি খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। সচল ছিল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ। সাধারণ বহির্বিভাগ খোলা ছিল। তবে বন্ধ ছিল চক্ষু, শিশু, সার্জারি ও দন্ত চিকিৎসার বহির্বিভাগ। ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়ে এ দিন বহির্বিভাগে যাননি শিশু বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ মাহাতো। তবে এ দিন হাসপাতালে আসা শিশু রোগীদের বিভাগের বাইরেই দেখে দিয়েছেন তিনি। অরবিন্দ বলেন, “আসলে সংগঠনের সদস্য হওয়ায় ধর্মঘটকে সমর্থন করে বিভাগ খুলিনি। কিন্তু আমি তো চিকিৎসার শপথ নিয়েছি। তাই সুপারের অনুরোধে ও মানবিকতার খাতিয়ে বিভাগের বাইরে শিশুদের চিকিৎসা করেছি।” একই ভাবে সংগঠনের সদস্য হলেও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক এ দিন নিয়মমাফিক কাজ করেছেন। সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “যাঁদের মনে হয়েছে তাঁরা নিয়ম মেনে কাজ করেছেন।”
আউটডোরের নির্দিষ্ট ঘর ছেড়ে হাসপাতালের করিডরে চেয়ার পেতে রোগী দেখেছেন ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। ঘাটাল মহকুমার অন্যান্য গ্রামীণ হাসপাতালেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটির সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “রোগীরা পরিষেবা পেয়েছেন। কোনও সমস্যা হয়নি।”
বহির্বিভাগের বাইরে চেয়ার-টেবিল পেতে চিকিৎসার দৃশ্য দেখা গিয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দেব মাহাতো, সুইটি প্রধান, শল্যরোগ বিশেষজ্ঞ বিষ্ণুপদ দে, গৈরিক মাজি, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অর্চনা সাহা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অর্ণাশিস হোতা, দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ দাস, সুদীপ্ত ঢাকের মতো ১৪ জন চিকিৎসক রোগী সামলেছেন বাইরে বসেই। এ দিন বহির্বিভাগে এসেছিলেন কয়েকশো রোগী। হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, ‘‘প্রায় আটশো জন রোগীর নাম জরুরি বিভাগে নথিভুক্ত করে চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসকরা বর্হিবিভাগের বাইরে বসেছিলেন।’’ এ দিন ঝাড়গ্রাম শহরের সব প্রাইভেট চেম্বারও বন্ধ ছিল। মেদিনীপুরের চিকিৎসক তপনকুমার বিশ্বাসের মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে চেম্বার রয়েছে। তিনি সার্জেন। এ দিন নিজের চেম্বারে বসে রোগী দেখেননি তপনবাবু। চেম্বারের বাইরে, রাস্তার পাশে টেবিল পেতে বসে রোগী দেখেছেন তপন বলেন, ‘‘মানবিকতার স্বার্থেই রোগী দেখেছি।’’ রোগীদের কাছ থেকে এ দিন ফি নেননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy