রাজবাড়িতে ঢুকতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকেরা। নিজস্ব চিত্র।
ঝাড়গ্রাম পর্যটনের অন্যতম স্মারক মল্লদেব রাজপ্রাসাদ। অথচ ঝাড়গ্রামে বেড়াতে এসে বেশিরভাগ পর্যটক সেই প্রাসাদ দর্শনে বঞ্চিত হচ্ছেন। রাজপ্রাসাদের ভিতরে রয়েছে রাজ পরিবার পরিচালিত একটি অতিথিশালা। সেখানে যে পর্যটকেরা থাকেন, তাঁরা ছাড়া অন্য কাউকে রাজপ্রাসাদ চত্বরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। দূর থেকে রাজপ্রাসাদ দেখে ফিরে যেতে হয় অন্য পর্যটকদের।
আগে রাজপ্রাসাদ চত্বরে সর্বসাধারণের অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে রাজপ্রাসাদে ঢোকায় নিয়ন্ত্রণ জারি করেছেন রাজপরিবার কর্তৃপক্ষ। প্রাসাদের দোতলায় থাকেন রাজপরিবারের সদস্যরা। প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে রাজপরিবারের কুলদেবতা রাধারমণের মন্দিরও। রাজা নরসিংহের নাতি দুর্গেশ মল্লদেব ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান। দুর্গেশের ছেলে বিক্রমাদিত্য মল্লদেব রাজ পরিবারের অতিথিশালা চালান। তিনি বললেন, ‘‘বহিরাগত লোকজন এসে হইহট্টগোল করতেন। অশালীন আচরণ করতেন। তাতে অতিথিশালার আবাসিকেরা বিরক্ত হতেন। বছর তিনেক আগে কিছু বহিরাগত পর্যটক রাজপ্রাসাদের কর্মীদের মারধর করেন। সেই কারণেই সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু ঝাড়গ্রামে বেড়াতে আসা কলকাতার ঊর্মি চক্রবর্তী, তরুণ দাসেরা বলছেন, ‘‘ছবিতে বহুবার রাজপ্রাসাদটি দেখেছি। কাছ দেখে ঘুরে দেখার সাধ ছিল। কিন্তু ভিতরে ঢোকার অনুমতিই মিলল না।’’ পর্যটকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দেশের বহু রাজপ্রাসাদে টিকিটের বিনিময়ে প্রবেশাধিকার রয়েছে। এখানেও তো রাজ পরিবার কর্তৃপক্ষ তেমন করতে পারেন।
ঝাড়গ্রামের শাসক ছিলেন মল্লদেব রাজপুরুষেরা। মল্লদেব রাজ পরিবারের শেষ রাজা নরসিংহ মল্লদেবকে আধুনিক ঝাড়গ্রামের রূপকার বলা হয়। তাঁর আমলেই ঝাড়গ্রামের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল। উত্তমকুমার অভিনীত ‘বাঘবন্দি খেলা’, ‘রাজবংশ’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’র মতো কালজয়ী বহু বংলা ছবিতে বারেবারেই রাজপ্রাসাদটি দেখা গিয়েছে। ফেলুদা কাহিনি অবলম্বনে ‘টিনটোরেটোর যীশু’, কোয়েল মল্লিক অভিনীত ‘অরুন্ধতী’, আবির চট্টোপাধ্যায়ের ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’-এর মতো নানা ছবির শ্যুটিং হয়েছে এই রাজপ্রাসাদেই। সম্প্রতি এই রাজপ্রাসাদের আদলে ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশনের একটি ভবনও তৈরি করা হয়েছে। ফলে, ঝাড়গ্রামে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মধ্যে রাজপ্রাসাদ দেখার আগ্রহ থাকে।
পর্যটন দফতর স্বীকৃত ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, ‘‘রাজপ্রাসাদ চত্বরে ঢুকতে না-পেরে পর্যটকেরা হতাশ হচ্ছেন। রাজ পরিবার কর্তৃপক্ষ কোভিড বিধি মেনে রাজপ্রাসাদ দেখার জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করলে সেটা ঝাড়গ্রামের পর্যটন প্রসারেই সহায়ক হবে।’’ বিক্রমাদিত্য মল্লদেব অবশ্য বলছেন, ‘‘টিকিটের বিনিময়ে পর্যটক ও দর্শকদের প্রবেশ অবাধ করতে হলে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন রাজপ্রাসাদ চত্বরে বেশ কিছু বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী বহাল করতে হবে। এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy