গাড়ির জ্বালানি হিসাবে ভরসা এলপিজি। নিজস্ব চিত্র
‘ঢাল আছে, নেই তরোয়াল’! পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ বান্ধব সিএনজি অটোর পারমিট দেওয়া হচ্ছে। অথচ সেই অটোর জ্বালানি (সিএনজি) কোথায় ভরা হবে, সেটাই প্রশ্ন চিহ্নে। রান্নার গ্যাসের কালোবাজারি নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিতে গিয়ে এমন তথ্যই উঠে এসেছে জেলায়।
কোলাঘাট, হলদিয়া, কাঁথি, এগরা- সহ বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি চালিত অটো চলাচল করে। প্রত্যন্ত এলাকার পাশাপাশি রাজ্য এবং জাতীয় সড়কেও যাত্রী পরিবহণের অন্যতম সহায় অটো। পরিবহণ দফতরের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও ওই সব অটোয় সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) ভরার তেমন পরিকাঠামো নেই জেলায়। তেমন দাবি অটোচালকদের। অথচ পরিকাঠামো না থাকলেও পরিবেশ রক্ষায় এই ধরনের অটো চলাচলের উপরে জোর দিচ্ছে পরিবহণ দফতর। ফলে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর প্রশাসন এবং সিএনজি সরবরাহকারী সংস্থাগুলির উদাসীনতার সুযোগ নিয়েই জেলায় বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাসেই (এলপিজি) চলছে বেশিরভাগ অটো। যার ফলে রান্নার গ্যাসের কালোবাজারি নিয়েও অভিযোগ উঠেছে।
কাঁথি শহর থেকে আশপাশের একাধিক রুটে হাজার খানেকের বেশি অটো চলে। কাঁথি থেকে রামনগরের কাঠপুল বাজার পর্যন্ত আড়াইশোর কাছাকাছি চলে। সাতমাইল রুটেও শতাধিক অটো চলে। এছাড়াও চাউলখোলা থেকে পর্যটনকেন্দ্র মন্দারমণি এবং দিঘায় ইদানীং প্রচুর অটো চলে। এগরার ভবানীচক থেকে পাহাড়পুর, কুদি, হলদিয়ার সিটি সেন্টার থেকে চৈতন্যপুর, ব্রজলাল চক, নিমতৌড়ি থেকে তমলুক পর্যন্ত চলে প্রচুর অটো। যার অধিকাংশই গ্যাস চালিত। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর থেকে এই সব অটোকে চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের সময় অটোগুলিকে সিএনজি ব্যবহার করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও প্রায় সব অটোই এলপিজি গ্যাস (লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ব্যবহার করছে।
দীর্ঘদিন ধরে অটো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত শেখ কাদের খানের কথায়, ‘‘সিএনজি গ্যাস রিফিল করার সুযোগ জেলার কোথাও নেই। হাওড়া জেলার বাগনানে গিয়ে করাতে হয়। যা প্রায় অসম্ভব। বাধ্য হয়ে এলপিজি রিফিলিং করাতে হয়। যেহেতু রান্নার গ্যাসে কিছুটা বেশি ময়লা এবং আবর্জনা থাকে তাতে অটোর ইঞ্জিন খারাপ হওয়ার সম্ভাবা থাকলেও পেটের তাগিদে সেটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন অটোচালকেরা।’’ কাঁথি শহর সংলগ্ন মাজনা এবং শৌলা যাওয়ার রাস্তায় এক দোকানদার জানালেন, ‘‘কেজি পিছু ৬৩ টাকায় অটোতে এলপিজি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি অটোতে আট কেজি করে গ্যাস লাগে। একবার গ্যাস ঢোকালে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারা যায়।’’
২০১৬ সালে রাজ্য সরকার ‘গতিধারা’ প্রকল্প চালু করে। প্রকল্পে জেলার বহু নতুন রূটে ও অটো চালানোর অনুমতি দেয় পরিবহণ দফতর। তারপরেও যে সব গাড়িকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, সেই সব অটোয় গ্যাস রিফিল করার জন্য সিএনজি-র পাম্পিং স্টেশন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন অটো মালিকদের একাংশের।
কাঁথি অটো ইউনিয়নের নেতা খোকন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে সব রুটে পরিবেশবান্ধব অটো চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে, সেখানে অতি অবশ্যই সিএনজি-র পাম্পিং স্টেশন থাকা উচিত। এ ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের কাছেও প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।’’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পরিবহণ আধিকারিক পি ডি ভুটিয়া এ নিয়ে বলেন, ‘‘এ ধরনের সমস্যা জেলায় রয়েছে। তবে কোথায় কোথায় সিএনজি পাম্পিং স্টেশন তৈরি হবে তা গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থাগুলির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে জেলাতে যে সব রুটে পরিবেশবান্ধব অটোর সংখ্যা বেশি সেই সব এলাকায় যাতে সিএনজি পাম্পিং স্টেশন গড়ে তোলা হয় তার জন্য গ্যাস সরবরাকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলা হবে।’’
রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার বিপণন সংক্রান্ত বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক গুরুনাথ রাও বলেন, ‘‘পূর্ মেদিনীপুরে সিএনজি-র পাম্পিং স্টেশন নেই। তবে কোথায় কোথায় এ ধরনের পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা যায় সে ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy