Advertisement
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাড়তি বরাত। পুজোর ফাঁকে বরাত ফিরেছে প্রতিমা ও মণ্ডপ শিল্পীদের। খোঁজ নিল আনন্দবাজার
midnapore

প্রতিমা, মণ্ডপ সাজিয়ে লক্ষ্মীলাভ

থিমের পুজো এ বার গ্রামাঞ্চলেও দেখা গিয়েছে। বেড়েছে বাজেট। এতে কাজ বেড়েছে মণ্ডপ শিল্পীদেরও। করোনা কালে মেদিনীপুর শহরের বড় পুজোগুলিও বাজেট কমিয়েছিল।

এবার পুজোয় মণ্ডপ শিল্পীদের ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। ফাইল চিত্র।

এবার পুজোয় মণ্ডপ শিল্পীদের ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। ফাইল চিত্র।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ০৯:০০
Share: Save:

দু’বছরের হতাশা কাটিয়ে হাসি ফিরেছে। দুর্গাপুজোয় লক্ষ্মীলাভে খুশি তাঁদের মতো দুই জেলার মৃৎ ও মণ্ডপশিল্পীরা। এ বার শারদোৎসবে তাঁদের শিল্পকর্মের বাণিজ্য সফল। পুজো শেষে হিসেব মিলিয়ে সকলেই মানছেন— আয় বেড়েছে।

ঘাটালের প্রতিমা শিল্পী অজয় মিস্ত্রি বলছিলেন, ‘‘এ বার পুজোয় ভাল বরাত পেয়েছি। বাইরে থেকেও বরাত এসেছিল। সময়ে ডেলিভারি দিতে পেরেছি, আয়ও হয়েছে।’’ বহুদূরে ঝাড়গ্রামের ডেকরেটর্সের কর্মী অতুল খিলাড়ির গলাতেও তৃপ্তির সুর। বলছিলেন, ‘‘করোনার জন্য গতবছর মাত্র তিনটি পুজোর প্যান্ডেল করেছিলাম। তাও ছোটখাটো। এবার সাতটি মণ্ডপ করেছি। ব্যবসা ভালই হয়েছে।’’ মেদিনীপুরের মণ্ডপ শিল্পী সমর রায়, কুশল দাসেরা মানছেন, ‘‘এ বার রোজগার খারাপ হয়নি।’’ গড়বেতার ডেকরেটর্স ব্যবসায়ী বাপি আঢ্যের কথায়, ‘‘ব্যবসায় গতি আসায় পরিবারেও ফিরেছে উৎসবের আমেজ, করোনার বছর গুলো ভুলতে চাই।"

পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় এ বার অনেক মৃৎশিল্পীরই ব্যস্ততা ছিল শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। রাত জেগে কাজ হয়েছে। চন্দ্রকোনা রোডের কয়েকজন মৃৎশিল্পী বলছেন, ‘‘বাজার ভাল হবে ইঙ্গিত পেয়েছিলাম বিশ্বকর্মা পুজোর জাঁক দেখেই। দুর্গাপুজো ও লক্ষ্মীপুজোয় প্রতিমার বেশি বরাত এসেছে। রোজগার বেড়েছে।’’ ঘাটালের মণ্ডপ শিল্পী মিলন কুইলা জানালেন, একাধিক থিমের মণ্ডপ হয়েছে এ বার। বিভিন্ন পুজো কমিটি যোগাযোগ করেছিল। মিলন দুটি মণ্ডপ করেছেন। কাঁচামালের খরচ বাড়লেও ভালই আয় হয়েছে।

থিমের পুজো এ বার গ্রামাঞ্চলেও দেখা গিয়েছে। বেড়েছে বাজেট। এতে কাজ বেড়েছে মণ্ডপ শিল্পীদেরও। করোনা কালে মেদিনীপুর শহরের বড় পুজোগুলিও বাজেট কমিয়েছিল। এ বার আর তা হয়নি। রাঙামাটি সর্বজনীনের বাজেট ছিল ১৬ লক্ষ টাকা, ১৮ লক্ষ ছিল বিধাননগর সর্বজনীনের, বার্জটাউন সর্বজনীনের বাজেট ছিল ১২ লক্ষ টাকা। থিমের মণ্ডপের বায়না দেওয়া হয় ডেকরেটরদের। মেদিনীপুর শহরের অনেকে কাজ করতে ভিন্‌ জেলাতেও গিয়েছেন। কুশল দাসরা শোনাচ্ছেন, ‘‘বাইরে কাজ করতে গেলে দুটো পয়সা বেশি পাওয়া যায়।’’ আশিস দে, সৌরভ দাসরা প্রতিমা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘এবার দুর্গাপুজোয় লক্ষ্মীলাভ হয়েছে।’’

রেলশহর খড়্গপুরেও এ বার বদলেছে ছবিটা। হাসি ফুটেছে মৃৎশিল্পীদের মুখে। দুর্গাপুজোয় সাবেক প্রতিমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে থিমের মূর্তির ঝোঁক বাড়ায় মুনাফা বেড়েছে। এখন তাঁরা ব্যস্ত কালী প্রতিমা গড়তে। খড়্গপুর শহরের শিল্পীঘরের প্রতিমা শিল্পী নয়ন পাল বলেন, ‘‘এ বার ব্যবসা খুব ভাল হয়েছে। প্রায় ৪২ টি দুর্গাপ্রতিমার মধ্যে ১৯ টি থিমের ছিল। কালীর বরাতও ভাল এসেছে।’’

জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামেও মৃৎশিল্পী ও মণ্ডপশিল্পীদের রোজগার হয়েছে আশানুরূপ। ঝাড়গ্রাম শহরের মৃৎশিল্পী দীপঙ্কর দাস বলছেন, ‘‘২০২০ সালে মাত্র ৭টি ছোট মাপের প্রতিমা তৈরি করেছিলাম। গত বছরও গোটা আটেক প্রতিমার বরাত মিলেছিল। এ বছর ২০টি প্রতিমা তৈরির বরাত পাই। পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও আমার প্রতিমা গিয়েছে। দু’ বছরের মন্দা কাটিয়ে এ বার লাভের মুখ দেখেছি।’’ জেলায় গত দু’বছর করোনার জেরে ছোট খাটো খোলামেলা পুজোর মণ্ডপ হয়েছিল। এবার সেই বিধিনিষেধ না থাকায় লক্ষ্মীলাভ হয়েছে ডেকরেটর্স ব্যবসায়ীদের। শহরের এক ডেকরেটর্স ব্যবসায়ী প্রদীপ্ত কুইলা বলেন, ‘‘এবার ৬টি প্যান্ডেল করেছি। বাজেটও বেশি ছিল। লাভ অনেকটাই ভাল হয়েছে।’’ শহরের মণ্ডপশিল্পী অসীম সামন্তও মানছেন, ‘‘গত দু’বছর কোনও মতে একটি মণ্ডপের কাজ ধরেছিলাম। এবার দু’টি বিগ বাজেটের মণ্ডপ করেছি। করোনা আবহের খরা কাটিয়ে লাভের মুখ দেখেছি।’’

সহ-প্রতিবেদন: কিংশুক গুপ্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী,বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী ও রঞ্জন পাল

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore Durga Puja 2022 artist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy