ছেলের ছবি হাতে সাধুয়াপোতায় বিস্ফোরণে মৃত ছাত্র প্রদীপ সামন্তর মা। নিজস্ব চিত্র।
পুজোর আবেহ সন্তানহারা হয়েছিলেন তিনি। সেই স্মৃতি এখনও দগদগে। রবিবারের দত্তপুকুরের ঘটনার পরে সেই সন্তানের কথা ভেবে চোখের জল বাগ মানছে না সাধুয়াপোতার কবিতা সামন্তর। কিছু সময় অন্তর রাজ্যে যেভাবে একাধিক বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হচ্ছে, তাতে নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কেন কোনও কড়া পদক্ষেপ করছে না, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁর মনে।
গত বছর ১১ অক্টোবর পাঁশকুড়ার সাধুয়াপোতা গ্রামে শ্রীকান্ত ভক্তা নামে এক বেআইনি বাজি কারবারির বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। ঘটনায় শ্রীকান্তর স্ত্রী স্বর্ণময়ী ভক্তা এবং প্রদীপ সামন্ত নামে স্থানীয় এক নবম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু হয়।বিস্ফোরণের তীব্রতায় প্রদীপের দেহাংশ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে শ্রীকান্তর বাড়ির পাশের পুকুরে জাল দিয়ে পুলিশ প্রদীপের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।সাধুয়াপোতা বিস্ফোরণ-কাণ্ডে পুলিশ শ্রীকান্ত এবং তার দুই ছেলেকে গ্রেফতার করে। পরে তিনজনই জামিনে মুক্তি পায়।
বিস্ফোরণে মৃত ছাত্র প্রদীপের পরিবার থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি সে সময়। তবে রবিবার দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় সাত জনের মৃত্যুর খবর শোনার পর প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চেপে রাখেননি প্রদীপের মা কবিতা। তাঁদের না জানিয়ে শ্রীকান্ত ভক্তার পরিবার তাঁর ছেলেকে বাজির কাজে লাগিয়েছিল বলে অভিযোগ কবিতার। তিনি বলেন, ‘‘একবার শ্রীকান্ত ভক্তার স্ত্রী আমাকে প্রস্তাব দেন স্কুলের ফাঁকে আমার ছেলে বাজির কারখানায় কাজ করাতে।আমি রাজি হইনি। পরে ওরা আমাকে কিছু না জানিয়ে আমার ছেলেকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে বাজির দোকানে কাজে লাগায়। দুর্ঘটনার পর জানতে পারি মাত্র কিছুদিন ওরা আমার ছেলেকে দিয়ে বাজির দোকানে টুকিটাকি কাজ করাত।এমনকি দুর্ঘটনার পর ওরা আমার ছেলের দেহ গায়েব করার চেষ্টা করেছিল।’’
পুলিশে অভিযোগ করেননি কেন?
কবিতার দাবি, ‘‘আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আমি বিড়ি শ্রমিক।আইনের ব্যাপারে কিছুই জানি না। মামলা করলে কাজ ফেলে ছোটাছুটি করতে হবে। এই জন্যই মামলা করিনি।’’ সোমবার ছেলের ছবি বুকে চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কবিতার আর্জি, ‘‘প্রায়ই শুনি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বাজি বিস্ফোরণে মানুষ মারা যাচ্ছে। আর যেন আর কোনও মায়ের কোল না আর খালি হয়।বাজির কারবার একেবারে বন্ধ করার ব্যবস্থা করুক সরকার।’’
গত মে মাসে এগরার খাদিকুলে বাজি বিস্ফোরণে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সাধুয়াপোতা বিস্ফোরণ কাণ্ডে মৃতদের পরিবারকে কোনও সরকারি সাহায্য দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। মৃত ছাত্র প্রদীপ সামন্তর বাবা খোকন সামন্ত বলেন, ‘‘ঘটনার দিন পনেরো পর জেলা প্রশাসনের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও তা পাওয়া যায়নি।অন্য জায়গায় বাজি বিস্ফোরণে মৃতদের সরকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। কিন্তু আমরা পাইনি। আমরা খুবই গরীব। সরকারি সাহায্য পেলে উপকৃত হতাম।’’
উল্লেখ্য, শুধু প্রদীপ সামন্ত নয়। ২০০৭ সালে সাধুয়াপোতা গ্রামে প্রদীপের বাড়ির অদূরে বাজি বাঁধার সময় বিস্ফোরণে এক পাঁচ বছরের শিশুর মৃত্যু হয়। সেবার এক মহিলারও মৃত্যু হয় বাজি বিস্ফোরণে। তারও কয়েক বছর আগে সাধুয়াপোতায় বাজি বিস্ফোরণে দু'জন তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল। লাগাতার পুলিশি অভিযানের জেরে সাধুয়াপোতা গ্রামে এখন বাজির কারবার পুরোপুরি বন্ধ। গ্রাম জুড়ে শুধু বিস্ফোরণে সন্তানহারা মায়েদের দীর্ঘশ্বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy