Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Elephant Attack Jhargram

হাতির হানাদারি, কোপ চাষে!

জেলা কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২-’২৩ সালে সাঁকরাইল ব্লকে ১৭৯১০ হেক্টর ধান চাষ হয়েছিল। ২০২৩-’২৪ সালে ১৬৫৫০ হাজার হেক্টর ধান চাষ হয়েছে।

ধান জমিতে হাতির দল।

ধান জমিতে হাতির দল। ফাইল চিত্র।

রঞ্জন পাল
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৫০
Share: Save:

হাতি আর সাথী নয়। হাতি কি তবে এখন দুর্গতি!

হাতির মুখে পড়ে প্রাণহানি অথবা তার তাণ্ডবে ফসল নষ্ট জঙ্গলমহলের প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু যে পরিসংখ্যান সামনে আসছে তা অন্য এক আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। কৃষি দফতরের তথ্য বলছে, ঝাড়গ্রামে জেলার সাঁকরাইল ব্লকে গত দু’বছরে ধান চাষ কমেছে। বন দফতর জানাচ্ছে, ওই ব্লক এলাকায় অধিকাংশ সময়ে হাতির দল থাকে। হাতির তাণ্ডবে ফসল নষ্টের পরিমাণ এবং তার দরুণ দেওয়া ক্ষতিপূরণের অঙ্কও ক্রমেই বাড়ছে। যার অর্থ হাতির হানা বাড়ছে। কিন্তু এর সঙ্গে চাষ কমার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে কি না, সে প্রবণতা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, চাষ কমার আরও একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, হাতির হানার জন্যই অনেকে চাষ করতে চাইছেন না।

জেলা কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২-’২৩ সালে সাঁকরাইল ব্লকে ১৭৯১০ হেক্টর ধান চাষ হয়েছিল। ২০২৩-’২৪ সালে ১৬৫৫০ হাজার হেক্টর ধান চাষ হয়েছে। অর্থাৎ ২০২২-’২৩-এর তুলনায় ১৩৬০ হেক্টর ধান চাষ কম হয়েছে। ২০২৪-’২৫ সালে অর্থাৎ চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ১৬০৭০ হেক্টর চাষ হয়েছে। যদিও এখনও চারা লাগানোর কাজ চলছে। তবে কৃষি দফতরের দাবি, সাঁকরাইল ব্লকে খুব বেশি হলে আর ১০০ হেক্টর ধান রোপণ হবে। এ বার দেখা যাক কতটা বেড়েছে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ। ২০২২-’২৩ আর্থিক বছরে ফসল বাবদ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল ১১৬২৫০০ টাকা। ২০২৩-’ ২৪-এ তা বেড়ে হয় ৩৯১৮৪৫০ টাকা। ২০২৪-’২৫ অগষ্ট মাস পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ হিসাবে ইতিমধ্যে ৪১৯৪০০ টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে।

কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের অধীনে তিনটি ব্লক রয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়গ্রাম ব্লকের কিছুটা অংশ, সাঁকরাইল ব্লক ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ফসলের ক্ষতি হয় এই রেঞ্জের ঝাড়গ্রাম জেলায়। এ রাজ্যে হাতির তাণ্ডবে ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি হলে হেক্টর প্রতি ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ সাড়ে সাত বিঘা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে মাত্র ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। বিঘা প্রতি মাত্র ১৯৮০ টাকা ক্ষতিপূরণ পান ক্ষতিগ্রস্ত চাষি। বহু ক্ষেত্রে সেই টাকাও না মেলার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকায় লাভ তো দূরের কথা চাষের খরচটুকুও পাচ্ছেন না চাষিরা। খড়্গপুর ডিভিশনে কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের এই এলাকায় গত এক মাস ধরে ৫০ থেকে ৭০টি হাতি রয়েছে। আঙ্গারনালী গ্রামের চাষি সুশীল মাহাতো বলেন, ‘‘হাতি ঠাকুরের ভয়ে একশো বিঘা ধান চাষ করেননি মানুষজন। একমাসের বেশি সময় দল হাতি রয়েছে। ধানের চারা খেয়ে ফেলছে হাতির দল। তা হলে মানুষজন কী করে ধান লাগাবে?’’ সুশীল আরও জানাচ্ছেন, আগে ধানের চারা রোপণ করলে ফলন হওয়ার পর ধান বাড়ি আসত। এখন কোনও নিশ্চয়তা নেই। চারা রোপণের সময় হাতি ও আবার ফলনের সময় হাতি। চাষিদের বক্তব্য, ট্রাক্টরের মাধ্যমে লাঙল, মজুরি, ধানের বীজ, ওষুধ সব মিলিয়ে খরচ প্রচুর। কিন্তু হাতি ক্ষতি করলে খরচটাও মেলে না। তাই অনেকেই চাষ করছেন না। বোম্বিং এরিয়া সংলগ্ন সাঁকরাইল ব্লকের দুধিয়ানালা, বালিভাসা, হাড়িভাঙা, দুধকুন্ডি শঙ্করবনি, হরিয়াধরা-সহ একাধিক জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram elephant attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy