আক্রান্ত শিক্ষিকা (বাঁ দিকে), ধৃত দুই প্রোমোটার। নিজস্ব চিত্র।
এক প্রবীণ শিক্ষিকার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন ঝাড়গ্রাম শহরের দু'জন প্রোমোটার। গুন্ডু কালী রত্নম নামে বছর ষাটের ওই শিক্ষিকার অভিযোগের ভিত্তিতে দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে বাবুন ও আশিস ঘোষ নামে দুই প্রোমোটারকে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করে ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। মঙ্গলবার দুই অভিযুক্তকে ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে তোলা হলে জামিনের আবেদন নাকচ করে দু’জনকেই চোদ্দদিন জেলা হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। আরেক অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার জামাইবাবু দুলালচন্দ্র সাহা পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফোনে যোগাযোগ করা হলে দুলাল কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা দক্ষিণ ভারতীয় ওই শিক্ষিকা যে বাড়িটিতে থাকেন, সেটি তাঁর জামাইবাবু দুলালচন্দ্র সাহার। কলকাতাবাসী দুলাল হলেন ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক। তিনি এখন সপরিবারে কলকাতায় থাকেন। ঝাড়গ্রামে দুলালের বাড়িতে গত ২১ বছর ধরে বসবাস করছেন তাঁর শ্যালিকা রত্নম। রত্নম ঝাড়গ্রামের পড়ুয়া ও অভিভাবক মহলে ‘রত্না মিস’ নামে বেশি পরিচিত। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তিনি ইংরেজি বিষয়ে গৃহশিক্ষকতা করে চলেছেন। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন।
ঝাড়গ্রামের বাড়িতে একাই থাকেন তিনি। রত্নার দাবি, ২০০০ সালের জামাইবাবু তাঁকে বাড়িটি উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁকে না জানিয়েই পুরো বাড়িটি দুই প্রোমোটারকে হস্তান্তর করে দেন দুলাল। তারপর থেকেই দুই প্রোমোটার তাঁকে উচ্ছেদ করার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করছিলেন। তাঁর অভিযোগ, মাস খানেক আগে বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে দুলাল ও দুই প্রোমোটার দলবল নিয়ে হাজির হয়ে চড়াও হন। জামাইবাবুর উপস্থিতিতে দুই প্রোমোটার ও তাঁদের দলবল বাড়ি ভাঙতে শুরু করে। জিনিসপত্র তছনছ করে দেওয়া হয়। আসবাবপত্র ভেঙে দেওয়া হয়। নথিপত্র নষ্ট করে দেওয়া হয়। তাঁকে গলা টিপে মারারও চেষ্টা করা হয়। মারধর করে শ্লীলতাহানিও করা হয়। সোমবার রাতেই ঝাড়গ্রাম থানায় জামাইবাবু দুলাল ও দুই প্রোমোটার-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন রত্না। ওই রাতে দুই প্রোমোটারকে তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেবাশিসের বাড়ি রঘুনাথপুরে। আশিস শহরের নতুনডিহির বাসিন্দা।
সোমবার দুপুরে রত্নার বাড়িতে হামলা র পরে সেখানে তৃণমূলের পতাকাও লাগিয়ে দেওয়া হয়। যদিও জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো বলছেন, ‘‘খুবই নিন্দনীয় ঘটনা। দলের পতাকা ব্যবহার করে ওই শিক্ষিকার বাড়িতে প্রোমোটার চক্র হামলা চালিয়েছেন বলে শুনেছি।’’ মঙ্গলবার তৃণমূল প্রভাবিত ঝাড়গ্রাম জেলা নাগরিক অধিকার সমিতির সহ-সভাপতি করুণাময় চক্রবর্তী এবং ওই সমিতির সদস্যা গোলাপি সরেনের নেতৃত্বে রত্নাকে নিজের বাড়িতে ফেরানো হয়।
এদিন সরকারি আইনজীবী অনিল মণ্ডল আদালতে জানান, জামিন অযোগ্য গুরুতর ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তরা জামিন পেলে তদন্তের ব্যাঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। অভিযুক্তপক্ষের দুই আইনজীবী জয়ন্ত রায় ও প্রবীর পাল দাবি করেন, তাঁদের মক্কেলরা শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের। হামলার স্বপক্ষে মেডিক্যাল রিপোর্ট নেই। নেই পুলিশের সিজ়ার লিস্ট। এমনকী অভিযোগকারী শিক্ষিকার গোপন জবানবন্দিও নথিভুক্ত করায়নি পুলিশ। ভিত্তিহীন অভিযোগে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সিজেএম আদালতের বিচারক সুমিত অধিকারী আগামী ২১ ডিসেম্বর মামলার কেস ডায়েরি তলব করেছেন। পরবর্তী হাজিরার দিন ২৮ ডিসেম্বর।
ধৃত দেবাশিসের মেয়ে দেবদত্তা গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, আশিস ও তাঁর বাবাকে জমি-সহ বাড়িটি হস্তান্তর করে দিয়েছেন বাড়ির মালিক দুলালচন্দ্র সাহা। রত্না টাকা ও ফ্ল্যাটের বিনিময়ে উঠে যেতে সম্মত হন। সোমবার বাড়ির মূল মালিক ও তাঁর পরিজনদের উপস্থিতিতে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ওই শিক্ষিকা দেবাশিস ও আশিসকে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে জড়িয়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy