মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।
একের পর এক বহির্বিভাগ বন্ধ। ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। ছবিটা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। মঙ্গলবারও এখানে অব্যাহত ছিল জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি। একই সঙ্গে তাঁদের অবস্থান, বিক্ষোভ, সই সংগ্রহও চলেছে। যোগ দিয়েছেন নার্সরাও। সবমিলিয়ে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যালের বহির্বিভাগের পরিষেবা। এই পরিস্থিতিতে সিনিয়র ডাক্তারেরা কেন নির্ধারিত সময়ে বহির্বিভাগ সচল রাখছেন না, উঠছে প্রশ্ন।
কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে, হাসপাতালে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে কর্মবিরতি চালাচ্ছেন মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। গত ক’দিন ধরে বহির্বিভাগে না গেলেও জরুরি বিভাগে পরিষেবা দিচ্ছিলেন তাঁরা। সোমবার দুপুর থেকে জরুরি বিভাগে পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করেছেন তাঁরা। এদিনও হাসপাতাল সুপারের দফতরের সামনে জুনিয়র ডাক্তার অর্থাৎ, ইন্টার্ন-পিজিটি-হাউসস্টাফ প্রমুখের কর্মবিরতি অব্যাহত ছিল। এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘‘আমরা জরুরি বিভাগে যাচ্ছি না। তবে জরুরি বিভাগের পরিষেবা সচল থাকতেই পারে। এটা হাসপাতাল-প্রশাসনের দায়িত্ব।’’
মেদিনীপুরের এই হাসপাতালে কম রোগী ভর্তি থাকেন না। সূত্রের খবর, এখানে সবমিলিয়ে প্রায় ৯৫০টি শয্যা রয়েছে। প্রায়শই রোগী ভর্তি থাকেন দিনে গড়ে ১,২০০ থেকে ১,২৫০ জন। সূত্রের খবর, এখানে দিনে বহির্বিভাগ, অন্তবির্ভাগ, জরুরি বিভাগ মিলিয়ে প্রায় ২,৫০০ রোগী আসেন। তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা কম। অনেক সময়ে পরিস্থিতি সামাল দেন জুনিয়র ডাক্তারেরাই। সোমবার রাতে মেদিনীপুরে বৈঠকে বসেছিল ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ এর (আইএমএ) মেদিনীপুর শাখা। বৈঠকে ঠিক হয়, মঙ্গলবার এবং বুধবার— এই দু’দিন চিকিৎসকেরা ‘ব্যাজ’ পরে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাবেন। ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’- এর (আইএমএ) মেদিনীপুর শাখার সম্পাদক রবি হেমব্রম বলেন, ‘‘সোমবার আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। আগেও আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি করেছি। মঙ্গল এবং বুধবারও কর্মসূচি হচ্ছে। চিকিৎসকেরা ‘ব্যাজ’ পরে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তবে হাসপাতালে আমাদের পরিষেবা চালু রয়েছে।’’
বাস্তবে অবশ্য বহির্বিভাগের পরিষেবা কার্যত লাটে উঠেছে। ফিরছেন শয়ে শয়ে রোগী। মেডিক্যাল চত্বরের ভিড় উধাও। মঙ্গলবার দুপুরে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসা এক রোগীর কথায়, ‘‘হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারও তো বন্ধ। বহির্বিভাগে গিয়েও দেখলাম, ডাক্তার নেই। সব ফাঁকা!’’ যদিও মেদিনীপুর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সিনিয়র ডাক্তারেরা সব পরিষেবাই সচল রেখেছেন। কোথাও কোনও সমস্যা নেই। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষা মৌসুমী নন্দী বলেন, ‘‘আমাদের সিনিয়র ডাক্তারেরা পুরো রাউন্ড দ্য ক্লক ডিউটি করছেন। এক্সট্রা ডিউটি করছেন। যেখানে যাঁর যা কাজ, সেটা করছেনই, প্লাস ইমার্জেন্সি ডিউটি করছেন। সুতরাং আমাদের কোনও সমস্যা নেই সার্ভিসে।’’ এই হাসপাতালের নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে। মেডিক্যালের অধ্যক্ষা অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের এখানে সিকিউরিটি স্টাফ রয়েছে। হস্টেলে সুপার রয়েছেন। নাইট ডিউটিতে অফিসার থাকেন। পুলিশ পেট্রলিংও হচ্ছে। সাদা পোশাকের পুলিশি টহলও চলছে। সুতরাং এখানে মহিলা চিকিৎসক, জুনিয়র চিকিৎসক- সবাই সুরক্ষিত।’’ তিনি জানান, বৈঠক করে সিনিয়র ডাক্তারদের ইমার্জেন্সি ডিউটির রোস্টার করে দেওয়া হয়েছে।
এদিন অবস্থানে যোগ দেন নার্সরাও। এক নার্স বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই ওঁদের (জুনিয়র ডাক্তারদের) পাশে ছিলাম। ওঁদের আন্দোলনে আমাদের সমর্থন প্রথম থেকেই ছিল। এটা নার্স বা ডাক্তার, আলাদা করে এ রকম কিছুই নয়। আরজি করের ঘটনায় সত্যিকারের যে দোষী, সে শাস্তি পাক এবং সর্বোচ্চ শাস্তি পাক। আমাদের যেন কাজ করতে এসে অসুরক্ষিত না মনে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy