নাবালিকার বিয়ে ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। প্রতীকী চিত্র।
কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্প সাড়া ফেলেছে অনেকদিন। তবু নাবালিকার বিয়ে ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।
সরকারি হিসেবে গত দশ মাসে সাড়ে ন’হাজারের বেশি নাবালিকার বিয়ে হয়েছে জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে। এর মধ্যে তিন হাজারের বেশি নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে কথা বলে জানা যাচ্ছে, এমনিতেই গ্রামাঞ্চলে মেয়েরা একটু বড় হওয়ার পরে পরিজনেরা তাদের বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেন। করোনা চলাকালীন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার জন্য় সেই প্রবণতা বেড়েছিল। তা আর কমেনি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম জেলায় ৯৫৭৮ জন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে এই জেলায় ১৩৮৯১ জন মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। যার মধ্যে ৩০৩৭ জন নাবালিকা। সমস্যার কথা মানছেন জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল। তিনি বলছেন, ‘‘গত বছর নাবালিকা বিয়ের কোনও খবর আমাদের কাছে সেভাবে আসত না। চলতি বছরের শুরু থেকে আসছে। আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের এ ব্যাপারে খবর দিতে বলাও হচ্ছে। আমরা এই নিয়ে নিয়মিত কর্মসূচি চালাই। গ্রাম পঞ্চায়েত ও স্কুলে সচেতনতায় জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও সচেতনতার অভাব রয়েছে। ’’
নাবালিকা বিয়ে ঠেকাতে প্রশাসনিক স্তরে মাঝে মধ্যেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কোনও ছাত্রী টানা ১৫ দিন স্কুলে না এলে তার বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করার কথা স্কুলগুলিকে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। কোনও নাবালিকার বিয়ে হয়ে গেলেও যাতে ১৮ বছরের নিচে সন্তান না হয় সেজন্য আশাকর্মীরা কাউন্সেলিং করছেন। নাবালিকা বিয়েতে হচ্ছে গ্রেফতারও। গত বছর জুলাই মাসে সাঁকরাইল থানার একটি ঘটনায় দুই পরিবারের সম্মতিতে এক নাবালিকার বিয়ে হয়। পরে ওই নাবালিকার বাবা মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ করেন। তদন্তে নেমে দুই পরিবারের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গত বছর মে মাসে গোপীবল্লভপুরে এক নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বিডিওর অভিযোগের ভিত্তিতে তার বাবাকে ধরে পুলিশ। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ঝাড়গ্রাম জেলায় ‘চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্টে’ তিনটি মামলা রুজু ও তিনজনকে ধরা হয়। ওই বছরে নাবালিকা অপহরণের ক্ষেত্রে ১২৭টি মামলা হয়। গ্রেফতার করা হয় ৬৭ জনকে। পুলিশের দাবি, বাকি অভিযুক্তেরা আত্মসমর্পণ করেছে।
কিন্তু এতকিছুর পরেও কাজ কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। ঝাড়গ্রাম জেলার এক সমাজকর্মীর কথায়, ‘‘অনেক নাবালিকা প্রেম করে পালিয়ে যাচ্ছে। ওই মেয়ের বাবা-মা থানায় গিয়ে অপহরণের মামলা করছেন। পুলিশ ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করার পর আদালতের নির্দেশে তাদের অনেকেই বাড়ি ফিরছে। তারপরে ওই নাবালিকাকে কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সমস্যা মিটছে না।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা চাইল্ড ডিস্ট্রিক প্রোটেকশন অফিসার রাজা দাস বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত স্তরে চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটি গঠন করা হচ্ছে। খবর পেলেই নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। ধর্মীয় গুরু ও মাঝি বাবাদের নিয়েও বৈঠক করেছি। অনেক ক্ষেত্রে মামলা রুজু হয়েছে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সরকার জানান, নাবালিকা অপহরণ বা বিয়ে সংক্রান্ত অভিযোগ এলেই দ্রুত পদক্ষেপ হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy