শান্তনু ও সায়ন্তিকা (বাঁদিক)। চাঁদের জমির ‘দলিল’। নিজস্ব চিত্র
এই প্রথম ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ পালন করলেন পাঁশকুড়ার শিক্ষক শান্তনু চক্রবর্তী। ভালবাসার মানুষ স্ত্রীকে উপহার দিলেন চাঁদের জমি। উচ্ছ্বসিত তাঁর অধ্যাপিকা স্ত্রী-ও। তবে বিজ্ঞানীরা কিন্তু বলছেন, চাঁদে জমি কেনা, সেখানে বাড়ি বানানো— সবই কষ্টকল্পনা।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর ১ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ চাচিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা শান্তনু স্থানীয় পূর্ব চিল্কা লালচাঁদ হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক। ২০১৪ সালে সায়ন্তিকা চক্রবর্তীর সঙ্গে বিয়ে হয় শান্তনুর। সায়ন্তিকা তাম্রলিপ্ত বিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপিকা। দম্পতির বছর পাঁচেকের মেয়ে রয়েছে। দেখাশোনার বিয়েতে এত দিন ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ পালন করেননি তাঁরা। তবে এ বার প্রেম দিবসে স্ত্রীকে চমকে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন শান্তনু। ফেসবুকে জানতে পারেন, আমেরিকার একটি সংস্থার মাধ্যমে চাঁদে জমি কেনা যায়।
গত জানুয়ারিতে ‘লুনার এমবাসি’ নামে ওই আমেরিকান সংস্থার ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করেন শান্তনু। জানান, স্ত্রী সায়ন্তিকার নামেই তিনি জমি কিনতে চান। সাড়া দেয় সংস্থাটি। ডাকযোগে রবিবার চাঁদের জমির দলিল হাতে পান শান্তনু। সায়ন্তিকার নামে চাঁদের ‘ক্র্যাটার ম্যানিলাস’ নামক স্থানে মোট এক একর জায়গা কিনেছেন শান্তনু। দলিলে অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ-সহ তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। খরচ পড়েছে ৪ হাজার টাকার মতো। শান্তনু বলেন, ‘‘স্ত্রীকে চমকে দিতে চেয়েছিলাম। ও খুব খুশি হয়েছে।’’ সায়ন্তিকাও বলছেন, ‘‘এ তো সত্যি হাতে চাঁদ পাওয়া! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।’’
বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই, বলছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্স’-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তীর স্পষ্ট কথা, “চাঁদের জমি বিক্রি পুরোটাই ভাঁওতাবাজি। একটি বিশেষ সংস্থা এ ভাবে বিক্রি করে। কিন্তু এর কোনও বাস্তবতা নেই। কিছু মানুষ সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য এই জমি কিনে প্রচার করে।” তিনি জানান, মহাকাশে কোনও ব্যক্তি বা দেশের মালিকানা নেই। বিভিন্ন দেশের মধ্যে এই সংক্রান্ত চুক্তিও রয়েছে। তা ছাড়া, মহাকাশে কোনও কিছুর নামকরণ করতে হলে বা কোনও গ্রহ-উপগ্রহকে চিহ্নিত করতে হলে তা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন করে। কোনও ব্যক্তি তো ছাড়, কোনও দেশের একক সিদ্ধান্তও সেখানে বৈধতা লাভ করে না।
সন্দীপবাবু আরও জানাচ্ছেন, চাঁদে একে তো কোনও বায়ুমণ্ডল নেই। তার উপরে ভূস্তরে রেগোলিথ (ভূমির উপরে ছড়িয়ে থাকা গুঁড়ো) এতটাই বেশি যে তার ঠেলায় মহাকাশচারীদের পোশাক, যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। তাই চাঁদে বসবাস পুরোটাই কল্পবিজ্ঞান বলা যেতে পারে।
মহাকাশবিজ্ঞানীদের আরও প্রশ্ন, জমি বিক্রি করতে হলে মালিকের প্রয়োজন। প্রয়োজন রেজিস্ট্রি অফিসেরও। চাঁদের জমির মালিক কে এবং কোন অফিসেই বা সেটা রেজিস্ট্রি হল? “চাঁদের জমি নিয়ে যদি বিবাদ হয় তা হলে কোন আদালতে মামলা হবে বলুন তো?” সহাস্যে মন্তব্য এক মহাকাশবিজ্ঞানীর।
যদিও শিক্ষক শান্তনুর বিশ্বাস, ‘‘একদিন চাঁদে বসবাসের জায়গা তৈরি হবে। তখন চাঁদে জমি কেনার হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে। তাই আগেভাগে কিনে রাখলাম। অনেক খোঁজ নিয়ে দেখেছি যে সংস্থার মাধ্যমে জায়গা কিনেছি সেটি বৈধ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy