Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Rare Frog Species

গাছে চড়তে ওস্তাদ বিরল ‘উড়ুক্কু’ ব্যাঙের খোঁজ জেলায়

পেশায় জীববিদ্যার শিক্ষক তথা পতঙ্গ-বিশারদ প্রতীক মহাপাত্র তাঁর তমলুকের খড়িডাঙ্গরে বাড়ির চৌহদ্দিতেই এই ব্যাঙের দেখা পেয়েছেন।

এই সেই উড়ুক্কু ব্যাঙ।

এই সেই উড়ুক্কু ব্যাঙ। নিজস্ব চিত্র।

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৬:১০
Share: Save:

শেষবার কবে দেখা গিয়েছিল, মনে করতে পারছেন না তাঁরা! সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির এক ‘উড়ুক্কু’ ব্যাঙের— জানাচ্ছেন এক পতঙ্গ-বিশারদ।

খাতায়-কলমে এই ব্যাঙের নাম ‘ব্রাউন ব্লচ্‌ড ট্রি ফ্রজ’ হলেও, চলিত ভাষায় এই এটি ‘উড়ুক্কু ব্যাঙ’ নামেই পরিচিত। কিন্তু কেমন এমন নাম? আদতে এই প্রজাতির ব্যাঙেরা এমন ভাবেই লাফ দিতে পারে কিংবা লাফ দিয়ে এগিয়ে চলে, যা এক ঝলক দেখলে মনে হবে— হয়তো উড়ে বা ভেসে এগিয়ে যাচ্ছে ব্যাঙটি। সেই থেকেই এমন নামকরণ! সম্প্রতি এই ব্যাঙের দেখা মিলেছে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে।পেশায় জীববিদ্যার শিক্ষক তথা পতঙ্গ-বিশারদ প্রতীক মহাপাত্র তাঁর তমলুকের খড়িডাঙ্গরে বাড়ির চৌহদ্দিতেই এই ব্যাঙের দেখা পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই ব্যাঙের আচরণ ও লাফ দেওয়ার ভঙ্গি দেখে অবাক লেগেছিল। তাই ছবি তুলে রেখেছিলাম।’’ তিনি সাফ জানাচ্ছেন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিগত কয়েক দশকে এই প্রথমবার এই প্রজাতির ব্যাঙের দেখা পাওয়া গিয়েছে। প্রসঙ্গত, পূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে এই ‘গ্লাইড’ করে এগিয়ে চলা ব্যাঙ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার ও উত্তর ২৪ পরগনার বাদুতে দেখা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে পড়শি রাজ্য ওড়িশাতেও।এই ব্যাঙেরা আকারে মাঝারি গোত্রের হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পুরুষ ব্যাঙের দৈর্ঘ ৪.৮ থেকে ৫.৪ সেন্টিমিটার এবং স্ত্রী ব্যাঙের দৈর্ঘ ৭.২ সেন্টিমিটারের কাছাকাছি হয়ে থাকে। হলদে-বাদামি থেকে সবুজাভ-বাদামি রঙের শরীরে ছয় থেকে ন’টি গাঢ় বাদামি দাগ থাকার কারণেই ইংরেজিতে ‘ব্রাউন-ব্লচ্‌ড’ নামের উৎপত্তি। এদের পায়ে অন্য প্রজাতির ব্যাঙের মতো ‘ওয়েবড্ ফিট’ হওয়ার বৈশিষ্ট চোখে পড়ে না। আবার এদের সামনের পায়ে চামড়ার ভাঁজও অনুপস্থিত। তবে এই উড়ুক্কু পুরুষ ব্যাঙেদের জোড়া-যুক্ত ‘ভোকাল’ থলি থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রজাতির ব্যাঙেরা যে কার্যত বিরল হয়ে গিয়েছে— তা মানছেন খেজুরি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও জীববিজ্ঞানী অসীমকুমার মান্না। তাঁর ভাষায়, ‘‘এই ব্যাঙ বিরল। এরা ক্যামোফ্লাজ় করে থাকার জন্য এদের গায়ের রং বাদামি।’’ তাঁর সঙ্গে সহমত মহিষাদলের রাজ কলেজের জীববিদ্যার বিভাগীয় প্রধান শুভময় দাসও। তাঁর কথায়, ‘‘এই জাতীয় ব্যাঙ আমি আগে পূর্ব মেদিনীপুরে দেখিনি।’’

এরা মূলত অমলতাস, ডুমুর, আম গাছের পাতায় ডিম পাড়ে। এদের প্রজনন পদ্ধতিও বেশ অন্যরকম! পুকুরের দিকে ঝুলে থাকা গাছে বাসা বাঁধে এই বিরল প্রজাতির ব্যাঙেরা। মিলনের পরে গাছের পাতায় ডিম পাড়ে স্ত্রী ব্যাঙ। সেই ডিমের উপর শুক্রাণু বিছিয়ে দেয় পুরুষ ব্যাঙ। এর পরে পুরুষ ব্যাঙ পা দিয়ে বলের মতো একটি কুণ্ডলী পাকিয়ে দেয় এবং মুখের লালা দিয়ে তৈরি এই কুণ্ডলীর ভিতরে জেলির মতো একটা বিষয় থাকে। আদতে এই জেলিটি প্রোটিন জাতীয় বস্তু এবং ডিম আটকে থাকে জেলির মধ্যে। ডিম থেকে ব্যাঙের ছানারা বেরিয়ে সেই জেলি খেয়েই বেঁচে থাকে। তারপর একটা সময় জেলির বলয় ছাড়িয়ে ছানা ব্যাঙ জলে ঝাঁপ দেয়। সেখানেই ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে এই উড়ুক্কু ব্যাঙেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Frog
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE