Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Fishing Port

বন্দরের পাশে বেসরকারি জেটি, প্রশ্নের মুখে প্রশাসন

২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের মৎস্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দের উদ্যোগে চালু হয়েছিল দেশপ্রাণ (পেটুয়া) মৎস্য বন্দরের। বন্দরের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।

Fishing Port

মৎস্য বন্দরের ধারে এভাবেই গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত বন্দর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩ ০৯:২০
Share: Save:

কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল মৎস্যবন্দর। কিন্তু, সেই মৎস্যবন্দর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে কয়েক বছর ধরে বেসরকারি উদ্যোগে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জেটি চলছে রমরমিয়ে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন মৎস্যবন্দরের শ্রমিকেরা। বছরের পর বছর ধরে আর্থিক লোকসানে ধুঁকছে এশিয়ার বৃহত্তম এই মৎস বন্দর।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের মৎস্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দের উদ্যোগে চালু হয়েছিল দেশপ্রাণ (পেটুয়া) মৎস্য বন্দরের। বন্দরের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। বরফ কল, পেট্রল পাম্প, ব্যাঙ্ক পরিষেবা, মাছ নিলাম কেন্দ্র, মৎস্যজীবীদের থাকার বন্দোবস্ত— সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। গোড়া থেকেই ক্রমে প্রসার লাভ করে এই মৎস্যবন্দর।

কিন্তু, ২০১৯ সালে হঠাৎই এই মৎস্য বন্দরের অদূরে (৫০০ মিটার) তৈরি হয়ে ব্যক্তি মালিকাধীন একটি মৎস্য জেটি। আর সেই জেটিকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, সরকারি মৎস্য জেটি থেকে ব্যক্তি মালিকাধীন মৎস্য জেটিতে বেশি সুযোগ সুবিধা থাকায় পেটুয়াঘাটে যে সমস্ত ট্রলার যেত তার একটা বড় অংশ ইদানীং নতুন জেটিতে চলে যাচ্ছে। যার ফলে লোকসানের মুখে পড়েছে পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দর। নারায়ণ মাইতি নামে স্থানীয় এক মৎস্যজীবীর অভিযোগ, পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দরের জেটিতে ট্রলার রাখতে মালিকদের প্রতি বছর ৫ হাজার ৩০০ টাকা দিতে হয়। তা ছাড়া, সেখানে শ্রমিকদের লদিয়ে ট্রলারে বরফ বোঝাই করতে হয়। অন্যদিকে, দেশপ্রাণ মৎস্য বন্দরের পাশে তৈরি হওয়া নতুন মৎস্য জেটিতে কোনও খরচ লাগে না। শুধু তাই নয়, দেশপ্রাণ মৎস্য বন্দরের পরিকাঠামোয় প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকায় ট্রলারে বরফ বোঝাই করতে গিয়ে কিংবা মাছ নামানোর সময় মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে পেটুয়াতে দেশপ্রাণ মৎস্য বন্দরে ট্রলারের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। উল্টোদিক, ব্যক্তি মালিকাধীন জেটিতে ট্রলারের সংখ্যা বেড়েছে। পরিণামে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে পেটুয়াঘাট বা দেশপ্রাণ মৎস্য বন্দরকে।

উৎপল মাইতি নামে মৎস্য বন্দরের এক কর্মী জানান, বন্দরে প্রতিদিন গড়ে যেখানে ৭০০-৮০০ ট্রলার মাছ নিয়ে আসত। সেখানে সংখ্যাটা এখন কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিনশোর মতো। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সরকারি উদ্যোগে চালু মৎস্য বন্দরের পাশে ব্যক্তিগত জেটি তৈরি হওয়ায় রাজ্য সরকারের রাজস্ব আদায় অনেক কমেছে। পাশাপাশি, মৎস্য বন্দরের উপর নির্ভরশীল শ্রমিকদেরও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। শুধু শ্রমিকরা নন, এই বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বরফ কল, তেলের পাম্প, হিমঘর, মৎস্য নিলাম কেন্দ্র সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, দফতরের মন্ত্রী থাকাকালীন জুনপুটে গিয়েছিলেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। সে সময় তাঁর কাছে স্থানীয়েরা অভিযোগ করেছিলেন। সে সময় মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কী ভাবে ওই ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেটি তৈরি হল, সে জন্য প্রশাসন তদন্ত করবে। তবে ওই তদন্তের বিষয়ে আর কিছু জানা যায়নি। পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অরিন্দম সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘সমস্ত বিষয় আমরা বিভাগীয় উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জানিয়েছি।’’ বর্তমান মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘সরকারি মৎস্যবন্দরের পাশে ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের প্রকল্প বেআইনি। ঘটনাটি নজরে এসেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"

ব্যক্তিগত জেটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে অবশ্য অন্য তত্ত্ব দিয়েছেন মৎস্য জেটির মালিক কামদেব জানা। তিনি জানান, সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় তাঁর ব্যক্তিগত জমি ছিল। ভাঙনের ফলে তাঁর দু’বিঘা জায়গা সমুদ্রগর্ভে চলে যাচ্ছিল। তাই জায়গা বাঁচাতেই সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় জনসম্পদ দফতরকে জানিয়ে তিনি কংক্রিটের বাঁধ দিয়েছেন। মাছ এবং বরফ ওঠানামা করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ওই অংশে সমুদ্র অত্যন্ত গভীর থাকায় অনায়াসে ট্রলার দাঁড়িয়ে যায়। তা ছাড়া আমার নিজের বরফ কল রয়েছে। তাই বিক্ষিপ্তভাবে দু-একটি ট্রলার এখানে দাঁড়ায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

port Jetty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE