এই পোস্টারেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
একটা পোস্টার। নামগোত্রহীন।
সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা একটা পোস্টারই ‘অস্বস্তি’ বাড়াল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিজেপি নেতৃত্বের। যে অভিযোগ ছিল ফিসফাসে, আড়ালে-আবডালে, তা-ই এল প্রকাশ্যে।
বুধবার পটাশপুর-২ ব্লকের জুনপুকুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেল দু’টি পোস্টার। নিশানায় বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী। পোস্টারে লেখা, ‘কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতির অপসারণ চাই। অনুপ চক্রবর্তী অধিকারী বংশের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিজেপির কর্মীর উপর মিথ্যা কেস দিয়ে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য বিজেপির কাছে তদন্ত করার অনুরোধ জানাই’।
সরাসরি অভিযোগ অনুপের বিরুদ্ধে। অভিযোগের নিশানায় অধিকারী পরিবারও। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই অনুপ বলছেন, ‘‘অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি নিয়ে সরব হওয়ায় তৃণমূলের নেতৃত্বেরা চক্রান্ত করে আমার নামে কুৎসা অপপ্রচারের জন্য টাকা দিয়ে লোক লাগিয়ে পোস্টার দিয়েছে। দলের সঙ্গে পোস্টারে কোন যোগ নেই।’’ আর জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘টাকা দিয়ে বিজেপিকে পোষার থেকে পাখি বা পোষ্য পোষা অনেক ভাল।’’ পাশাপাশি শিশিরের সংযোজন, ‘‘যাদের দলের কোন আদর্শনেই তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার মতো ফালতু সময় নেই। সব অভিযোগ মিথ্যে ও সাজানো।’’
পটাশপুরে গত পাঁচ মাসে বেলদা আলামচক, টাকাবেড়িয়া, টেপরপাড়া- সহ একাধিক জায়গায় তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙচুর ও আগুন জ্বালানোর ঘটনায় বিজেপি কর্মীদের নাম জড়িয়েছে। গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের উপপ্রধানকে মারধর এবং তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ-সহ একাধিক ধারায় বিজেপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
পটাশপুরে পঞ্চাশ জনের মতো বিজেপি কর্মীদের উপর মামলা চলছে। বিজেপি সূত্রের খবর, পুলিশের ভয়ে এখনও অনেক কর্মী এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। গত এক মাসে তেমন করে পটাশপুরে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেখা যায়নি বিজেপিকে। এই পরিস্থিতিতে নামহীন পোস্টারে আদতে বিজেপি জেলা নেতৃত্বের ‘অস্বস্তি’ আরও বাড়ল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
অধিকারী পরিবারের নাম জড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা না গেলেও অস্বস্তি আগেও ছিল জেলা বিজেপি নেতৃত্বের। মাসকয়েক আগে বিজেপির মণ্ডল কমিটির নির্বাচন চলছিল। সেসময় তমলুকের কাকগেছিয়া বিজেপির কার্যালয়ে দু’দফায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিল কর্মী, সমর্থকেরা। অভিযোগের নিশানায় ছিলেন বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক। তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে পদ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি কর্মী, সমর্থকেরা।
বিজেপি অন্দরে কর্মীদের একাংশের আফশোস, পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের সংগঠন যথেষ্ট বেড়েছে। তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের ফলেও। কিন্তু পূর্ব এখনও সেভাবে দাগ কেটে উঠতে পারছে না বিজেপি। কর্মীদের একাংশই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত লোকসভা ভোটের কথা। পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্র। জেলায় মাত্র দু’টি বিধানসভাকেন্দ্রে তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এগরা এবং পশ্চিম পাঁশকুড়া। বাস্তব হল, এগরা বিধানসভা কেন্দ্র মেদিনীপুর এবং পশ্চিম পাঁশকুড়া বিধানসভা কেন্দ্র ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। অর্থাৎ দু’টি লোকসভা কেন্দ্রই মূলত পশ্চিম মেদিনীপুরের।
কেন এই হাল?
পোস্টারে তোলা অভিযোগ সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কারা এই পোস্টার দিয়েছে, এই অভিযোগের আদৌ সত্যতা রয়েছে কি না খুঁজে দেখব। তবে এই ভদ্রলোক সভাপতি হওয়ার পরেই ওখানে আমরা ছ-লক্ষ ভোট পেয়েছি। উনি আমাদের অনেক পুরনো কর্মী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy