Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

তুলির টানে আঁধার জীবনে রঙের ছোঁয়া

সত্যিই সার্থকনামা তুলি। দরিদ্র পরিবারে প্রথাগত ছবি আঁকা শেখার প্রশ্নই নেই। প্রতিভা আর মনের মাধুরীতেই বাঙ্ময় হয়ে ওঠে তার ছবির খাতা।

তুলি দাস। নিজস্ব চিত্র

তুলি দাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোপীবল্লভপুর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩২
Share: Save:

মেয়ের আঁকা ছবি প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকার মেদিনীপুর সংস্করণের ছোটদের পাতায়। দরিদ্র বাবা খবরের কাগজের পাতাটা নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছিলেন বিডিও-কে। আর তারপরই স্কুলছাত্রী তুলি দাস ছবি আঁকার কাজ পেল প্রশাসনের তরফে। তাকে মিড ডে মিল প্রকল্পের লোগো আঁকার দায়িত্ব দিয়েছে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক প্রশাসন।

সত্যিই সার্থকনামা তুলি। দরিদ্র পরিবারে প্রথাগত ছবি আঁকা শেখার প্রশ্নই নেই। প্রতিভা আর মনের মাধুরীতেই বাঙ্ময় হয়ে ওঠে তার ছবির খাতা। গোপীবল্লভপুর জনকল্যাণ বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির তুলির বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। নতুন বছরে নবম শ্রেণিতে উঠবে সে। তুলির প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়েই তার অভাবি পরিবারকে সাহায্য করতে পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বিডিও দেবজ্যোতি পাত্র বলছেন, ‘‘তুলির প্রতিভা রয়েছে। ওকে আঁকার সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। তুলির প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিতে এবার ওকে ব্লকের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিড ডে মিলের লোগো আঁকার দায়িত্ব হয়েছে। এ জন্য সাম্মানিকও দেওয়া হবে।’’

ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, প্রাথমিক স্কুল, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে), মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র (এমএসকে), হাইস্কুল মিলিয়ে ২৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিড ডে মিলের লোগো আঁকবে তুলি। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই ব্লকের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে মিড ডে মিলের লোগো আঁকার কাজ শুরু করবে সে। এমন সুযোগ পেয়ে বছর চোদ্দোর তুলি বলছে, ‘‘এমন কাজ করব ভেবে আমি রোমাঞ্চিত।’’ তুলির বাবা উত্তম দাস ঠিকাদারের অধীনে ইলেকট্রিকের কাজ করেন। আয় সামান্যই। শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দিরের আশ্রিত উত্তম। মহন্ত কৃষ্ণকেশবানন্দ দেবগোস্বামীর সহযোগিতায় মন্দিরের যাত্রীনিবাসের একটি ঘরে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। মন্দিরের ভোগেই পেট ভরে তিনজনের। উত্তমের স্ত্রী শেফালি মন্দিরে পুজোর জোগাড় করেন।

তুলির আঁকা সেই ছবি।

এরপর গত ২৯ নভেম্বর আনন্দবাজারের পাতায় তুলির আঁকা ছবি প্রকাশিত হয়। উত্তম তা নিয়ে গিয়ে দেখান বিডিও-কে। উত্তম বলছিলেন, ‘‘অভাবের সংসারে মেয়ের পড়াশোনার জন্য গৃহশিক্ষক দিতে পারিনি। স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষক-শিক্ষিকারা তুলিকে নিখরচায় টিউশন দেন। আঁকার স্কুলে তুলিকে ভর্তি করাতে পারিনি। ও নিজের চেষ্টায় ছবি আঁকে।’’ তুলি অবশ্য রঙিনের চেয়ে সাদা-কালো ছবি আঁকতেই বেশি পছন্দ করে। আনন্দবাজারেও তার সাদা-কালো ছবিই প্রকাশিত হয়েছিল। তুলি বলে, ‘‘সাদা-কালোয় ছবি আঁকতে বেশি ভাল লাগে। তবে রঙিন ছবিও আঁকি। মিড ডে মিলের লোগোও নীল, সাদা, কালো, হলুদ রঙে আঁকতে হবে।’’

তুলির টানেই রং ফিরবে সাদামাটা জীবনে, আশায় উত্তম ও শেফালিও।

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal Logo Tuli Das Gopiballabpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy