নারী-পুরুষ সমানাধিকারের ধারণা কৈশোরেই কাঁচা মনে গেঁথে দিতে পারলে, ভিত হবে পোক্ত। সে লক্ষ্যে হেঁটে স্কুলেরই এক ছাত্রীর হাতে সরস্বতী পুজোর পৌরোহিত্যের দায়িত্ব সঁপেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি-১ ব্লকের নয়াপুট সুধীরকুমার হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েক বছর ধরে সহশিক্ষামূলক (কো-এডুকেশন) এই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী নির্বিশেষে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকই স্কুলে সরস্বতী পুজো করার ভার পায়। সে নিয়মে এ বছর দায়িত্ব পেয়েছে অরুণিমা নায়ক। সে এখন একাদশে পড়ে। দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে সামলাতে পৌরোহিত্যের পাঠও নিচ্ছে অরুণিমা। ৩ ফেব্রুয়ারি স্কুলে পুজো। সমুদ্র ঘেঁষা স্কুলটিতে অন্য পড়ুয়ারা যখন স্কুল সাজানো ও পুজোর অন্য আয়োজনে ব্যস্ত, তখন ক্লাসের ফাঁকে অরুণিমা হাতেকলমে শিখছে পুজো পদ্ধতি। প্রাণ প্রতিষ্ঠা, হোম-যজ্ঞ বিধি— সবই।
আত্মবিশ্বাসী অরুণিমা বলে, ‘‘ছোটবেলায় বাড়িতে সরস্বতী পুজো করতাম। বৈদিক যুগে মেয়েরাই যজ্ঞের হোতা হতেন। তবে এ ভাবে বড় পরিসরে পুজো করার সুযোগ এই প্রথম। প্রস্তুতি সে ভাবেই নিচ্ছি।’’
নয়াপুট সুধীরকুমার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়ইয়ের কথায়, ‘‘আমরা চাই, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সমানাধিকারের ভাবনাকে জাগাতে এবং নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিভা সামনের সারিতে তুলে আনতে। এ বার এক ছাত্রী পৌরোহিত্যের দায়িত্ব পেয়েছে। সে যে ভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে, তাতে খুশি, গর্বিত।’’ পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি অবশ্য মনে করেন, এ ভাবে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তাঁর মত, ‘‘মানুষ নিজের পুজো নিজে করুক।’’
কয়েক বছর আগে বাংলা চলচ্চিত্রে সংস্কার ভেঙে আগুয়ান এক মহিলা পুরোহিতের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছিল। এখন বাস্তবেও অনেকে মহিলা পুরোহিতের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তেমনই এক জন দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা সুলতা মণ্ডল। সুলতা বলেন, ‘‘প্রচুর পুজোর ডাক পাই। এ বারও বাড়িতে এবং স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কিং কর্নারের সরস্বতী পুজোয় পৌরোহিত্য করব।’’ পশ্চিমবঙ্গ সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক অশোক পন্ডা মনে করান, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশ রয়েছে মেয়েদেরও পুজোয় সমানাধিকার দিতে হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)