Advertisement
E-Paper

নেটে সফল শবর যুবক কার্তিক

মাধ্যমিক পাশ করার পরই তাঁর বাবা নির্মল শবর জানিয়ে দেন,  তিনি পড়াশোনার খরচ সামলাতে পারবেন না।

কার্তিক শবর। নিজস্ব চিত্র

কার্তিক শবর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ ০৯:২৮
Share
Save

বাবা ও মা দু’জনেই নিরক্ষর। নেট (ন্যাশনাল এলিজিবিটি টেস্ট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাক লাগালেন ঝাড়গ্রামের লোধা-শবর সমাজের যুবক কার্তিক শবর। মঙ্গলবার বেরিয়েছে নেট পরীক্ষার ফলাফল। সেখানেই উত্তীর্ণ হয়েছেন কার্তিক। কার্তিক হলেন পরিবারের প্রথম প্রজন্মের শিক্ষিত সদস্য।

বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদা গ্রাম পঞ্চায়েতের আশাকাঁথি গ্রামের আশাকাঁথি নিম্ন বুনিয়াদি হাইস্কুলে প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনার পর জয়পুর হাইস্কুলে ৭২ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন কার্তিক। মাধ্যমিক পাশ করার পরই তাঁর বাবা নির্মল শবর জানিয়ে দেন, তিনি পড়াশোনার খরচ সামলাতে পারবেন না। এ সময়ে কার্তিকের পাশ দাঁড়ান শিক্ষিকা মিতালি পাণ্ডা। তিনি বর্তমানে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষিকা। কর্মসূত্রে একসময় মিতালী জয়পুর স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। সেখান থেকেই কার্তিকের সঙ্গে পরিচয়। ওই শিক্ষিকাই কার্তিককে বাঁকুড়ার গড় রাইপুর হাইস্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি করান। তখন থেকে এখনও পর্যন্ত কার্তিকের সমস্ত খরচ সামলান ওই শিক্ষিকা। ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিকে ৮৬.৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করার পর জামবনি ব্লকের কাপগাড়ি সেবাভারতী মহাবিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতক হন কার্তিক। ২০২১ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে বর্তমানে তিনি ঝাড়গ্রামের সেবায়তন শিক্ষক শিক্ষণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়াশোনা করছেন। চলতি বছরেই কার্তিক সেট পাশ করেছেন। কার্তিক বলছেন, ‘‘মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা আর হত না। দিদিমণি পাশে না দাঁড়ালে এতটা পথ আসতে পারতাম না। দিদিমণি শুধু আর্থিক ভাবেই সাহায্য করেননি, সবসময় পরামর্শ দেন।’’

অধ্যাপক হওয়ার ইচ্ছে কার্তিকের। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ অনেকটা বাকি। এরপর কার্তিককে পিএসসি (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) ও সিএসসি (কলেজ সার্ভিস কমিশন) জন্য শূন্যপদের বিজ্ঞপ্তি বেরনোর পর আবেদন করতে হবে। কার্তিক বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে কিছু কলেজে শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করেছি। এ বার নিজেকে কিছু করতে হবে।’’ মিতালি বলেন, ‘‘আমি ভীষণ খুশি। কার্তিক আমার এক সন্তানের মতই। নেট পাশের থেকে সবচেয়ে বড় কথা কার্তিক ভাল মনের মানুষ তৈরি হয়েছে। কার্তিকের জীবনে বাধা অনেক এসেছি। কিন্তু সেই বাধা থামিয়ে দিতে পারেনি। গবেষণা করার ক্ষেত্রে যদি ওর পাশে কেউ দাঁড়ায় তবে ভাল হবে।’’

কার্তিকের বাবা নির্মল শবর ও মা পুষ্পরানি শবর দিনমজুর। কার্তিকরা তিন ভাই-বোন। কার্তিক মেজো। বড় দিদি প্রতিমা শবরের উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বোন শ্রীমতী শবর বাংলা নিয়ে ঝাড়গ্রাম সাধু রামচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করছেন। ঝাড়গ্রাম জেলা লোধা-শবর সেলের সদস্য তথা ঝাড়গ্রাম লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সভাপতি খগেন্দ্রনাথ মান্ডি বলেন, ‘‘লোধা শবর সমাজের কেউ নেট পাশ করেনি। চাকরি পেলে খুবই ভাল হবে। কার্তিককে দেখে লোধা-শবর ছেলে-মেয়েরা অনুপ্রাণিত হবে। লোধা-শবর মানুষজন প্রশাসনের কাছে যেতে চায় না। সে জন্য বিভিন্ন জায়গায় শিবির করে তাঁদের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।’’ সেবাভারতী কলেজে ভূগোলের অধ্যাপক প্রণব সাহু বলেন, ‘‘লোধা-শবর উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে তার জ্বলন্ত উদাহরণ কার্তিক। তাঁর উচ্চ মেধা জাতীয় স্তরে পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Net Shabar Jhargram

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}