নিহত দীপক ভুঁইয়া। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের মাঠ ঘেঁষা জঙ্গলে উদ্ধার হল এক তৃণমূল কর্মীর দেহ। পরিজনেদের দাবি, বিজেপির লোকেরাই খুন করে ফেলে দিয়ে গিয়েছে। যদিও, স্থানীয় সূত্রে উঠে আসছে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের তত্ত্ব।
সোমবার ভোরে নারায়ণগড়ের কুনারপুর পঞ্চায়েতের সাইকা গ্রামের কাছে পাওয়া যায় দীপক ভুঁইয়া (৪২) ওরফে গণেশের ক্ষতবিক্ষত দেহ। তাঁর বাড়ি কুনারপুর পঞ্চায়েতের চককিশোর গ্রামে। তিনি ওই বুথেরই তৃণমূল কর্মী ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে গ্রামেরই বাসিন্দা দুলাল মাইতির সঙ্গে দীপকের পরিবারের লোকজনের সংঘর্ষ বেধেছিল। তারপর এ দিন ভোরে দীপকের দেহ মেলে। আর দুলাল গুরুতর জখম হয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। দুলাল ঘনিষ্ঠরাই দীপককে খুন করেছে বলে অভিযোগ।
দীপকের স্ত্রী বিদ্যুৎলতা বলেন, ‘‘রাত দুটো নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল স্বামী। পথেই মারধর করে ফেলে দিয়েছে বিজেপি।’’ অভিযুক্ত দুলাল বিজেপি কর্মী বলেও দাবি করেছেন নিহতের পরিজনেরা। দীপকের ভাইপো অমিত ভুঁইয়াও বলেন, ‘‘কাকুকে বিজেপির লোকেরাই মেরেছে। এখানে দুলাল মাইতিরা নির্দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপির হয়ে কাজ করছে।’’
যদিও দুলালের মা রেণুকা মাইতির বক্তব্য, ‘‘ছেলে তৃণমূল করে।’’ খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “গুলি চলেনি। তবে মৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে খুন বলেই মনে হচ্ছে। তবে কী কারণে খুন তা এখনই বলা যাবে না। তদন্ত চলছে।”
কী কারণে খুন সেই প্রশ্ন ঘুরছে নারায়ণগড় ব্লক জুড়েই। বিদ্যুতের ঠিকা শ্রমিক দীপক এলাকায় ব্লকের তৃণমূল নেতা সূর্য অট্টের অনুগামী বলে পরিচিত। আর অভিযুক্ত দুলাল দলের ব্লক সভাপতি মিহির চন্দের ঘনিষ্ঠ। সেই সূত্রে দুলাল ও দীপকের পরিবারের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “দু’টি পরিবারই তৃণমূল করে। সারা বছর দুই পরিবারে সংঘর্ষে লেগেই রয়েছে। এ গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ছাড়া আর কী!”
কুনারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে গত বছর নির্বাচনে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধরা নির্দল হিসেবে জিতে বোর্ড গঠন করেছিলেন। লোকসভাতেও এলাকায় দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। বুথে তৃণমূলই লিড পেয়েছে। যদিও সূর্য অট্টের বক্তব্য, “মৃত আমাদের দলের কর্মী। আর দুলাল বিজেপি করে। ঘটনায় বিজেপি জড়িত রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।” তৃণমূলের ব্লক মিহির চন্দ অবশ্য বলেন, “দু’টি পরিবারই আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত। খুনের পিছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব পুলিশের।” বিজেপির উত্তর মণ্ডলের সভাপতি চন্দন বসুরও মত, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে সাইকা পাটনা গ্রামের তৃণমূল কর্মী দুলাল মাইতিকে মারধরের অভিযোগ ওঠে দীপকের পরিবারের বিরুদ্ধে। পুরনো আক্রোশের কারনেই দীপকের ভাইপো অমিত ভুঁইয়া এই মারধর করে বলে অভিযোগ। দুলালকে রাতেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। আর তার পরেই দীপকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। রাস্তার ধারে পড়ে ছিল মোটর সাইকেল। পরিবারের অভিযোগ, রাতে দুলালের লোকজন গুলি ও মারধর করে খুন করেছে দীপককে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদেহে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ধস্তাধস্তির প্রমাণ মিলেছে। মারধরে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি লাঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে দোষীদের শাস্তির দাবি তোলে গ্রামবাসী। ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয় পুলিশকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy