Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

জলকর সাহেব

ডহরপুরের সেই গভীর নলকূপের ঘর (ওপরে), হাতে লেখা রসিদ। নিজস্ব চিত্রঅত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতে অনেকে প্রতিবাদ করেছেন।

ডহরপুরের সেই গভীর নলকূপের ঘর। নিজস্ব চিত্র

ডহরপুরের সেই গভীর নলকূপের ঘর। নিজস্ব চিত্র

বিশ্বসিন্ধু দে
নারায়ণগড় শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:১৫
Share: Save:

ভর পেট না-ও খাই। জলকর দেওয়া চাই।

হয়তো খাবারে টান পড়ছে না। কিন্তু জলকর দিতে গিয়ে পকেট খালি হওয়ার জোগাড় ডহরপুরের জনা ৬৫ জন চাষির। বোরো ধান চাষের জন্য সরকার নির্ধারিত জলকর হল একর প্রতি ৮১৬ টাকা। অবশ্য গভীর নলকূপের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ আরও অতিরিক্ত কিছু টাকা চাষিদের কাছ থেকে তোলা হয়। কিন্তু তার পরিমাণ সামান্যই। কিন্তু অভিযোগ এ ক্ষেত্রে চাষিদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে একর প্রতি প্রায় ৪ হাজার টাকা। ফলে নারায়ণগড় ব্লকের মকরামপুর পঞ্চায়েতের ডহরপুরে চাষিদের একাংশ বলছেন, ‘‘পরাধীন ভারতে শুনতাম নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা। এখানে তো দেখছি জলকর সাহেবের আবির্ভাব হয়েছে।’’

অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতে অনেকে প্রতিবাদ করেছেন। ই-মেল মারফত অভিযোগ জানিয়েছেন বিডিও-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষে। অনেকে আবার মৌন থাকাই নিরাপদ মনে করেছেন। ভয়! বোরো চাষের মরশুমে যদি জলের জোগান বন্ধ হয়! এক একর সমান দুই বিঘা। নমিতা দাসের রয়েছে প্রায় দেড় বিঘা জমি। নমিতা বললেন, ‘‘আমার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। কোনও রসিদ দেওয়া হয়নি। ডায়েরিতে লিখে দিয়ে গিয়েছে।’’ সুনীল পড়িয়া বলেন, ‘‘ভাগে চাষ করি। কী করব। জলকর দিতে হচ্ছে। কিছু বলতেও পারছি না। বেশি তো নিচ্ছেই।’’

কে বা কারা নিচ্ছেন এই অতিরিক্ত টাকা? চাষিদের অভিযোগ পাম্প রক্ষণাবেক্ষণকারীর বিরুদ্ধে। তাঁর নাম শশাঙ্ক মহাপাত্র। তাঁর অবশ্য দাবি, অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমেই। শশাঙ্কের কথায়, ‘‘চাষিরা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। গভীর নলকূপটি দীর্ঘদিন খারাপ হয়ে পড়েছিল। চালু রাখতে গেলে খরচ অনেক। মেরামত থেকে যাবতীয় খরচ কমিটি থেকেই করতে হয়। সরকার দেয় না। কমিটি বসে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

হাতে লেখা রসিদ। নিজস্ব চিত্র

ডহরপুরের সিয়াড়াতে এই গভীর নলকূপটি জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের। সাধারণ ভাবে দেখা যায় যে চাষিরা ওই গভীর নলকূপ থেকে জল নেন তাঁরাই বসে একটা কমিটি তৈরি করেন। ওই কমিটির মাথায় থাকেন গভীর নলকূপের অপারেটর (যিনি সরকারি কর্মী)। সরকারের কর ছাড়াও পাম্প রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার কিছু অতিরিক্ত খরচ থাকে। সে সব হিসেব করে কমিটি ঠিক করে চাষিদের কাছ থেকে কত টাকা সংগ্রহ করা হবে। ডহরপুরের চাষিদের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে কোনও মিটিংই হয়নি। সিদ্ধান্ত তো দূরের কথা। কেন এত বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে? শশাঙ্কের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বেসরকারি মিনি ডিপটিউবওয়েলে বিঘা প্রতি চারহাজার দিতে হয় কৃষককে। এখানে তার অর্ধেক দিতে হচ্ছে। সেটা চাষিরাই বলেছেন। কয়েকজন অভিযোগ তুলছেন।’’

এলাকার চাষি উত্তম মাইতি অবশ্য শশাঙ্কের যুক্তি মানতে নারাজ। কয়েকজন চাষিকে একত্রিত করে নারায়ণগড় বিডিও, মহকুমা শাসক থেকে জেলা শাসককে মেল করে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর আরও অভিযোগ, ডিপটিউবওয়েলটির অপারেটরের দায়িত্বে যিনি আছেন সেই শুভজিৎ সামন্ত এলাকায় আসেন না। শুভজিতের মন্তব্য, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও অপারেটর নেই। আমাকে চারটি ডিপটিউবওয়েল এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সবটা দেখা সম্ভব হয় না। বাড়তি টাকা নেওয়ার সঙ্গে আমরা যুক্ত নই। পরিচালন কমিটি এটা ঠিক করে। আমরা শুধু দেখে নিই নির্দিষ্ট জলকর সরকার পাচ্ছে কি না।’’

বেলদা কৃষি-সেচ জল সম্পদ উন্নয়ন ও অনুসন্ধান দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার চন্দন সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। অভিযোগও আসেনি। ফলে এ নিয়ে কিছু মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’’ যদিও নারায়ণগড় বিডিও বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হবে। যে দায়িত্বে আছে তাকে বিষয়টি জানানোর জন্যে ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে।’’

দেওয়া কথা ৮১৬ টাকা। দিতে হচ্ছে ৪ হাজার টাকা। প্রায় পাঁচ গুণ। নীলকর সাহেবই ফিরে এলেন জলকর নিতে!

অন্য বিষয়গুলি:

Water Tax Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy